কোলে নবজাতক, অ্যাম্বুলেন্সে বসে পরীক্ষা দিলেন মা

বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি


জানুয়ারি ২৬, ২০২১
০৭:৪৫ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৬, ২০২১
০৭:৪৫ অপরাহ্ন



কোলে নবজাতক, অ্যাম্বুলেন্সে বসে পরীক্ষা দিলেন মা

মাত্র দুইদিন আগে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তখনও ওই সন্তানের ভেজা নাড়ি কাটা হয়নি। সেই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে উদ্যমী এক মা নিজেই উপস্থিত হলেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। সবাইকে জানিয়ে দিলেন, নারী সব পারে। তবে শ্রেণিকক্ষে নয়, অ্যাম্বুলেন্সে বসে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। ওই অ্যাম্বুলেন্সে সদ্য ভূমিষ্ট সন্তান এবং তার নানি উপস্থিত ছিলেন। নানির কোলে নাতনি, মায়ের হাতে কলম- এমন এক অদম্য নারীর ইচ্ছাশক্তির গল্প এখন সিলেটের বিয়ানীবাজারবাসীর মুখে মুখে।

জানা যায়, ওই মা বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী। তার নাম পিংকী রাণী পাল (২২)। উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের কোনাগ্রামে তার বাবার বাড়ি। বিয়ে হয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। স্বামী প্রবাসে থাকলেও স্ত্রীর শিক্ষাগ্রহণের মানসিকতার বিপরীতমুখী হননি তিনি।

এর আগে গর্ভে সন্তান নিয়ে পিংকী চূড়ান্ত বর্ষের অপর একটি বিষয়ে পরীক্ষা দেন। গত শুক্রবার স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি সন্তান প্রসব করেন। গত রবিবার তার ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরীক্ষা ছিল। একদিকে সদ্য ভূমিষ্ট সন্তান, অপরদিকে জীবনের লক্ষ্য স্থির করার মুহূর্ত। কোনটা বেছে নেবেন তিনি- এমন প্রশ্নের যখন উত্তর খুঁজছেন সবাই, তখন ওই মা নিজেই সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের জানালেন, সন্তান সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দেবেন।

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে পরীক্ষার আগের রাতে যোগাযোগ করা হয়। সে মোতাবেক আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া মায়ের দুইতলায় পরীক্ষার হলে যাওয়া কঠিন। তাই আমরা অ্যাম্বুলেন্সে রেখেই তার পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

তিনি বলেন, যথাসময়ে ওই ছাত্রী পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হলে আমরা অ্যাম্বুলেন্সে একজন শিক্ষক (নারী পরিদর্শক) নিয়োগ করি। প্রশ্নপত্র প্রাপ্তিসাপেক্ষে ওই ছাত্রী পুরো ৪ ঘন্টা সময় ব্যয় করে পরীক্ষা দেন। আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই।

সদ্য মা হওয়া পিংকী রাণী পাল বলেন, 'আমি হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে সরাসরি পরীক্ষা কেন্দ্রে যাই। পরীক্ষা শেষে আবার হাসপাতালে ফিরে আসি। এই সময়ের মধ্যে আমার সন্তান একাধিকবার কেঁদে উঠলে আমি তাকে নিয়ন্ত্রণ করি। এতে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি চাই পড়ালেখা শেষ করে সরকারি চাকরি করতে। তাই কোনো বাধা মেনে নেইনি।

তিনি বলেন, সবকিছুতে আমার স্বামীর সম্মতি ছিল। আসলে পরিবারের সমর্থন না থাকলে কিছুই করা যায় না।

গতকাল সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাত থেকে ওই মায়ের পরীক্ষা দেওয়ার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে নারীদের শৃঙ্খল ভাঙার মানসিকতাকে বাহবা দিচ্ছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।

 

এসএ/আরআর-০৪