ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সিলেটে আসবে করোনার টিকা

নাবিল হোসেন


জানুয়ারি ২৬, ২০২১
০৭:৫৫ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৬, ২০২১
০৭:৫৫ অপরাহ্ন



ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সিলেটে আসবে করোনার টিকা

আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেটে আসবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার করোনার টিকা। টিকা প্রদানের জন্য নগরে ১২টি কেন্দ্র তৈরি করা হবে। এসব কেন্দ্রে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনকে টিকা দেওয়া হবে।

জানা যায়, করোনার ভ্যাক্সিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সিলেট জেলা কমিটি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুইটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা কমিটির সভাপতি সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম ও সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল। আর সিটি করপোরেশনের কমিটির সভাপতি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব হিসেবে আছেন সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো জাহিদুল ইসলাম।

এসব কমিটি সূত্রে জানা যায়, আসামি মাসের প্রথম সপ্তাহেই সিলেটে করোনার টিকা আসার কথা। সেক্ষেত্রে ইপিআই প্রকল্পের টিকা যে রেফ্রিজারেটরে রয়েছে সেখানেই করোনা ভ্যাকসিন সংরক্ষণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য যে তাপমাত্রার দরকার (২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তা ইপিআই প্রকল্পের যে রেফ্রিজারেটর তাতে রয়েছে। এছাড়া সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রথম ধাপে যে ১৫ ক্যাটাগরির লোক এই টিকা পাবেন তাদের তালিকা তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। 

জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান ও কর্মপরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ধাপে টিকা পাবেন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৫. প্রতিরক্ষাকাজে নিয়োজিত বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, মরদেহ সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী। 

জাতীয় পরিকল্পনাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন হবে অনলাইনে। আর এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই করে নিবন্ধন করতে হবে অ্যাপে। রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর কোন তারিখে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তি টিকা পাবেন সেটা ফোনে এসএমএস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এই ভ্যাকসিনের দুই ডোজ দেওয়া হবে। প্রথমে ডোজের ২৮দিন পর দ্বিতীয় ডোজ। আর প্রথম ডোজ দেওয়ার সময় ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের একটি করে কার্ড দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘সরকারের সকল নির্দেশনা মেনে সারাদেশের মতো সিলেটেও করোনার টিকা প্রদান করা হবে। আমরা আশা করছি সামনের মাসের প্রথমেই সিলেটে টিকা চলে আসবে। টিকা সংরক্ষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। তবে সংরক্ষণের জন্য বাড়তি কোনো চাপ আমাদের নেই। কারণ ইপিআই প্রকল্পের টিকা যে রেফ্রিজারেটরে রয়েছে সেখানেই করোনার টিকা সংরক্ষণ করা হবে। প্রথমত সব টিকাই সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আসবে। আর সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অনেক বড় ইপিআই স্টোর আসছে। 

তিনি জানান, প্রথম ধাপে যারা টিকা পাবেন তাদের তালিকা ৭০ শতাংশ তৈরি হয়ে গেছে। কালকের (মঙ্গলবার) মধ্যেই তা ঢাকায় আইসিটি ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই তাদের কাছে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে কবে কোথায় তিনি টিকা নেবেন।’

ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টিকা প্রদানের জন্য নগরে ১২টি কেন্দ্র রাখার পরিকল্পনা করছি আমরা। এর মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে থাকবে চারটি। বাকিগুলো সদর হাসপাতাল বা সুবিধামতো স্থানে করা হবে। এসব বুথের জন্য দুজন টিকাদান কর্মী এবং চারজন স্বেচ্ছাসেবক রাখা হবে। তাদের প্রশিক্ষণ এই সপ্তাহেই শুরু হয়ে যাবে। কারণ আমাদের ৪ তারিখের মধ্যে পূর্ণ প্রস্তুতি রাখতে হবে। তবে আমরা অতিরিক্ত আরও কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দেব। যাতে এদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলেও টিকাদান কর্মসূচিতে কোনো সমস্যা না হয়। আর যেহেতু একটা ভ্যাক্সিন দিয়ে ১০ জনকে টিকা দেওয়া যায়। তাই ১০ জন ১০ জন করে আমরা একটা ভ্যাক্সিন ভাঙব।’

ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি বুথে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। টিকা কেন্দ্রগুলোতে আলাদা মেডিকেল টিমও থাকবে। আর আমরা চাইছি ওসমানী হাসপাতালে কিছু শয্যা প্রস্তুত রাখতে। যাতে কারো কোনো প¦ার্শ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আমরা সেখানে তাকে চিকিৎসা দিতে পারি।’ 

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা ফেব্রæয়ারির প্রথম দিকেই সিলেটে টিকা চলে আসবে। আমরা সরকারের নির্দেশমতো সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। প্রথম পর্যায়ে যারা টিকা নেবেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ৫০ লাখ করোনার টিকা গতকাল সোমবার ঢাকায় এসেছে। বিমানন্দর থেকে টিকা নেওয়া হবে বেক্সিমকোর টঙ্গীর নতুন সংরক্ষণাগারে। তারপর সরকারের চাহিদা অনুযায়ী এই টিকা ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। 

এনএইচ/বিএ-০৬