জট খুলছে না শিশু ফাইজার মৃত্যু রহস্যের, দাফন সম্পন্ন

ওসমানীনগর প্রতিনিধি


জানুয়ারি ২৭, ২০২১
১০:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৭, ২০২১
১০:৫৪ অপরাহ্ন



জট খুলছে না শিশু ফাইজার মৃত্যু রহস্যের, দাফন সম্পন্ন

শিশু ফাইজার লাশ বাড়িতে নিয়ে এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

সিলেটের ওসমানীনগরে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজার (১০) মৃত্যু রহস্যের জট খুলছে না। আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে উপজেলার তাজপুর রঙ্গিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে ফাইজার লাশ নিয়ে এলে বিদ্যালয়ের সহপাঠী, শিক্ষক ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। উপস্থিত সবার দাবি, এই ছোট শিশুটি কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। সার্বিক বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন খাসদরগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনন্দন কমার দাসসহ উপস্থিত লোকজন। এ সময় ফাইজা 'হত্যার' সঙ্গে জড়িতদের বিচার চেয়ে খাসদরগাহ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের।

বুধবার সন্ধ্যায় ফাইজার নানার বাড়িতে লাশের গোসল ও জানাজার নামাজের পর রাত সাড়ে ৭টায় উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে ১০ বছরের শিশু ফাইজার লাশ উদ্ধারের তিনদিন অতিবাহিত হলেও এটি হত্যা না কি আত্মহত্যা তা রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। পুলিশ ফাইজার পরিবারের অভিযোগ আমলে না নিয়ে শিশুর মায়ের স্বাক্ষর নিয়ে তড়িঘড়ি করে থানায় অপমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মামা আবুল কালামসহ স্বজনরা। তাদের দাবি, শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে পরিকল্পিতভাবে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এটি আত্মহত্যা নয়।

তবে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে শিশুটি আত্মহত্যা করেছে- প্রাথমিক তদন্তে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থানায় অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, গত সোমবার তুরণ মিয়া বাইরে কাজে থাকাবস্থায় বিকেলে মা লায়লা বেগম মেয়ে ফাইজাকে ঘরে রেখে ছোট ছেলেকে নিয়ে বাজারে যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়িতে ফিরে বসতঘরের চালার সঙ্গে মেয়ের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। দ্রুত ফাইজাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে সোমবার রাতে ওসমানীনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাইজার তিন চাচাতো ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা রুজু করার পর তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

ফাইজার মা লায়লা বেগম বলেন, 'আমার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ঘাতকরা লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে গা ঢাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে এ সময়েই আমি বাড়িতে এসে পড়ায় ঘাতকরা নিজেদের রক্ষায় দ্রুত লাশ নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সার্বিক বিষয় পুলিশকে জানানোর পরও পুলিশ রাতে ওসমানী হাসপাতালে আসার প্রয়োজন মনে করেনি। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে এসেছিল তারা। পুলিশ হাসপাতালে দেরিতে আসায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে তিনদিন সময় লেগেছে। তবে সোমবার রাতেই পুলিশ তাৎক্ষনিক আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার ভাসুরদের তিন ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু মঙ্গলবার আটককৃতদের অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ অভিযোগটি আড়ালে রেখে জোর করে আমার স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ছেড়ে দিয়েছে।'

স্থানীয় ইউপি সদস্য নেওয়া বিবি বলেন, 'একাধিকবারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে এসব বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। খুব কাছ থেকে শিশু ফাইজার লাশটি দেখেছি। আমার দেখামতে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এমনটি আমি নিশ্চিত হয়েছি।'

ফাইজার লাশের গোসলের কাজে নিয়োজিত থাকা উপজেলা আনসার ভিডিপির সহকারী কমান্ডার তাছলিমা বেগম ও নিকটাত্মীয় আছারুন বিবি বলেন, 'লাশ গোসল করানোর সময় একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও মুখমন্ডলসহ শরীরের একাধিক অংশে কামড় ও নখের আঁচড় দেখেছি। তার গোপনাঙ্গও ক্ষত-বিক্ষত রয়েছে। তাকে যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এটা লাশের গোসলের সময় নিশ্চিত হয়েছি।'

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দ্বায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) মাকসুদুল আমিন বলেন, 'জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাৎক্ষণিক কয়েকজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে অপমৃত্যুর মামলা রুজুর পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

 

ইউডি/আরআর-০৭