রাত পোহালেই ভোট : জকিগঞ্জে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

ওমর ফারুক, জকিগঞ্জ


জানুয়ারি ২৯, ২০২১
০৬:৪৩ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৯, ২০২১
০৬:৪৩ অপরাহ্ন



রাত পোহালেই ভোট : জকিগঞ্জে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে আগামীকাল শনিবার। নির্বাচনে মেয়রপদে ৮ জন, পুরুষ কাউন্সিলর পদে ৯টি ওয়ার্ডে ৩৩ জন ও সংরক্ষিত ৩টি ওয়ার্ডে ৯ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। মোট ভোটার রয়েছেন ১২ হাজার ৩৩৮ জন। ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। তবে আজ চলবে নীরব ভোট প্রার্থনা। বিজয়ের হাসি হাসতে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সকল প্রার্থী ও সমর্থকেরা। অন্যদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় নির্বাচন অফিস।

নির্বাচনে মেয়রপদে দলীয় সমর্থনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌরসভার বর্তমান মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন (নৌকা), বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক মেয়র ইকবাল আহমদ তাপাদার (ধানের শীষ) ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী পৌর জাপার সভাপতি সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক (লাঙল)। দলের বিদ্রোহী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফারুক আহমদ (জগ), উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ (নারিকেল গাছ), উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা (চামচ), স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর আল ইসলাহর সভাপতি হিফজুর রহমান (মোবাইল) ও সোনার বাংলা সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম (হ্যাঙ্গার)।

নির্বাচনী এলাকা ঘুরে কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে গেছে, ভোটগ্রহণের আরও একদিন বাকি থাকলেও বিজয়ের ব্যাপারে সকল মেয়রপ্রার্থী আশা প্রকাশ করেছেন। ভোটারদের ধারণা, নির্বাচনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কোনো দলীয় প্রতীক এবার আলোচনায় এখন পর্যন্ত স্থান পাচ্ছে না। ভোটারদের আলোচনায় উঠে আসছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ (জগ), স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী হিফজুর রহমান (মোবাইল) ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল আহাদের (নারিকেল গাছ) নাম। তবে শেষ পর্যন্ত পট পরিবর্তন হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। আলোচনায় যোগ হতে পারেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইকবাল আহমদ তাপাদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফরুল ইসলাম ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা।

একাধিক ভোটার জানিয়েছেন, ভোটের লড়াইয়ে কেউ কারও থেকে পিছিয়ে নেই। সকল প্রার্থীই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আছেন। ভোটারদের এক চতুর্থাংশই নীরব ভোটার। উপজেলাজুড়ে একই আলোচনা চলছে- কে হাসবেন শেষ হাসি? নীরব ভোটাররা যাকে বেছে নেবেন, তিনিই মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সমস্যায় জর্জরিত জকিগঞ্জ পৌরসভায় যিনি মেয়র নির্বাচিত হবেন, তিনি জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, পৌর ভবন নির্মাণ, গ্যাস ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, বাজার উন্নয়ন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং শিক্ষা বিস্তারে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শাদমান সাকীব জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে জকিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনী এলাকা। নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল সংখ্যক সদস্য দায়িত্বপালন করবেন। ৯টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৯টি মোবাইল টিম, পুলিশের দু'টি স্টাইকিং ফোর্স, বিজিবির দু'টি স্টাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, জরুরি দু'টি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত দু'জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করে যাবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি মোবাইল টিম থাকবে। তাছাড়া ৭ জন পুলিশ, ১১ জন আনসার সদস্য ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপালন করবেন। ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে থাকবেন ৯ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৩৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৭৭ জন পোলিং কর্মকর্তা। ৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে দু'টিকে প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র জিরো টলারেন্সে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত ফোর্স কাজ করবে। নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার ও বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। ভোটের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। কোনোভাবেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরির সুযোগ থাকবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

ওএফ/আরআর-০১