নগরের উন্নয়নে মেয়র আরিফের আট প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক


জানুয়ারি ৩০, ২০২১
০১:১২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ৩০, ২০২১
০১:১২ পূর্বাহ্ন



নগরের উন্নয়নে মেয়র আরিফের আট প্রস্তাব

যানজটমুক্ত আধুনিক নগর এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী সিলেট সিটি গড়ার লক্ষ্যে দুই মন্ত্রীর কাছে আটটি প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) নগরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে নগরের ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো- নাগরিকসেবা শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য ২৭টি ওয়ার্ডে ৩৬ জন কাউন্সিলরের (সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ) জন্য স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ, নগরের শিশু-কিশোরদের জন্য ৩ থেকে ৪ টি খেলার মাঠ, সিটি করপোরেশনের আয় বাড়ানো ও নগরের যত্রতত্র পশুর হাটের চাপ কমাতে নগরের চারপ্রান্তে ৪টি পশুর হাট নির্মাণ, পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে কয়েকটি কসাইখানা স্থাপন, নগর ভবনের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট পার্কিং জোন নির্মাণ, সিলেটে আগত পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট পার্কিং, রান্নাঘর ও বিশ্রামাগার নির্মাণ, সিলেটবাসীকে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে কারিগরি শিক্ষার সুবিধাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, যানজটমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে একই স্থানে চালের আড়ৎ, কাঁচা বাজার ও ফলের আড়ৎ সরিয়ে নেওয়া।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সভাপতির বক্তব্য দেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সিলেট নগরের রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে। বেশকিছু এলাকার যানজট ও হকার সমস্যা ইতোমধ্যেই নিরসন হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে নগরবাসী দীর্ঘদিনের অভিশাপ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এমতাবস্থায় সিলেটকে একটি আদর্শ আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’ 

বক্তব্যের শুরুতে তিনি সিলেট জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। দুই মন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণের বসার জন্য স্থায়ী কার্যালয় নেই। ভাড়া জায়গায় কার্যালয় চালাতে হচ্ছে। ২৭টি ওয়ার্ডের ৩৬ জন কাউন্সিলরের জন্য স্থায়ী কার্যালয় হলে ওয়ার্ডবাসীর সেবা পাওয়া সহজ হবে।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবে মেয়র বলেন, সিলেট নগরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই। বিষয়টি ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। তিনটি খেলার মাঠের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

তিনি তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, প্রতি বছর ঈদের সময় অবৈধ পশুর হাট বসানো হয়। এতে নানা অনিয়ম ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। সরকার রাজস্বও পায় না। সিলেট নগরের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণে ৪টি নির্দিষ্ট হাট করতে চাই। এর ফলে সিসিকের আয় বাড়বে। 

চতুর্থ প্রস্তাবে মেয়র বলেন, সিলেট নগরে কোনো কসাইখানা নেই। কয়েকটি কসাইখানা স্থাপন করা গেলে নগর পরিচ্ছন্ন থাকবে এবং আয়ও হবে।

পঞ্চম প্রস্তাবে তিনি সিলেট নগরে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। রাস্তাঘাটে গাড়ি পার্কিং করা হয়। ৫ থেকে ৬টি জায়গায় জমি অধিগ্রহণ করে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা গেলে এই যানজট ও ভোগান্তি কমবে। শহর সুন্দর হবে, সিসিকের আয় বাড়বে।

পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট বিশ্রামাগার ও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি ষষ্ঠ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেট শহরে শতশত বাস এসে প্রবেশ করে। এই মুহূর্তেও দেড় শতাধিক বাস নগরের অভ্যন্তরে রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত হাজার হাজার পর্যটক সিলেটে আসেন। এসব মানুষের জন্য আমরা একটি বিশেষ ব্যবস্থা করতে চাই। একটি জায়গা নিয়ে সেখানে বিশ্রামের ব্যবস্থা, রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করতে চাই। যেখানে বাসগুলোও সারিবদ্ধভাবে থাকবে এবং সেই স্থান থেকে অটোরিকশা বা ছোট আকারের যানবাহন দিয়ে মানুষ শহর ঘুরে দেখবে।

সপ্তম প্রস্তাবে তিনি বলেন, সিলেটে যানজটের মূল কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ন। নগরের কালীঘাটে পাইকারি বাজার রয়েছে। পাশে সার্কিট হাউস। এখানে প্রতিনিয়ত ট্রাকের আসা-যাওয়া। ফলে সার্কিট হাউসের সামনেও যানজট থাকে, নদীর পাড়ে ট্রাক রাখা হয়। সোবহানীঘাটে পাইকারি সবজিবাজার থাকায় সেখানে দুই দিকে ট্রাক থাকে। দক্ষিণ সুরমায় ফলের আড়তের কারণে সমস্যা হয়। এই সবগুলো আড়ৎ দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকে ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন ২০ একর জায়গায় স্থানান্তর করা গেলে পণ্যবাহী ট্রাক শহরে প্রবেশ করবে না, যানজটও থাকবে না।

৮ম প্রস্তাবে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিসিকের সকল ওয়ার্ডে স্কুল নেই। এ জন্য জেলা প্রশাসন জায়গা দিলে পর্যাপ্ত স্কুল প্রতিষ্ঠা করবে সিটি করপোরেশন। বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে তরুণ প্রজন্ম আর বেকার থাকবে না।

এসএইচ/বিএ-০২