সিলেট মিরর ডেস্ক
                        ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
                        
                        ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
                        	
                        আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
                        
                        ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
                             	
 
                        
             
    গাজীপুরে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এক গৃহবধূ ও তার মেয়েকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সিরাজপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনায় ভূক্তভোগী বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
নির্যাতনে আহতরা হলেন কালিয়াকৈর উপজেলার মা (৩০) ও ১০ম শ্রেণির ছাত্রী (১৬)। ।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, পাঁচ বছর আগে ওই গৃহবধূর স্বামী মারা যান। এরপর তিনি তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বন বিভাগের জমিতে বসবাস করে আসছেন। এ ছাড়া তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করে অনেক কষ্টে তার মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে আসছেন। নানা অভাব-অনটনের মধ্যে কোনো রকমে তাদের সংসার চলছে। কিন্তু তাদের সংসারে হানা দেয় একটি প্রতারক চক্র। ওই চক্রের ফাঁদে পড়ে স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা হারাতে হয়। আনুমানিক প্রায় ৩ লাখ টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন ওই ভূক্তভোগী। পরে তাকে বাধ্য হয়ে স্থানীয় আব্দুল গফুর ড্রাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে। টাকা নেওয়ার দুই মাস পর থেকে সুদের টাকা আদায় করতে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল তাদের। এ নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি মাতাবরদের মধ্যস্থতায় সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময় শেষ না হতেই গফুর ড্রাইভার, তার স্ত্রী কুলসুম বেগম, ছেলে রিপন হোসেন এবং সুদখোর মনির হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে মুক্তা আক্তার, ছেলে শহিদ হোসেন, স্থানীয় নয়ন হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গৃহবধূর বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় তারা সুদের টাকা আদায় করতে তাকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করতে থাকে। মাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে মেয়ে এগিয়ে গেলে তাকেও একই গাছে বেঁধে রাখে।
তারা জানায়, এ দৃশ্যটি ভিডিও ধারণ করতে গেলে গৃহবধূর ছোট বোনকেও গাছে বাঁধার চেষ্টা করে। মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেধে প্রায় ঘণ্টাখানেক নির্যাতন চালালেও কেউ এগিয়ে আসেনি। কৌশলে গৃহবধূর বোন ৯৯৯-এ ফোন করে। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এসময়ে অন্যরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
গৃহবধূ বলেন, একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় তিন লাখ টাকা হারিয়েছি। ওই টাকা জোগাড় করতে গফুর ড্রাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদ করতে হয়েছে। ওই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম এক মাসের সময় দিয়েছেন। আমি ওই টাকা ফেরত দেব। কিন্তু ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে ও আমার মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পাষবিক নির্যাতন চালিয়েছে।
অভিযুক্ত আব্দুল গফুর জানান, তাদের টাকা আদায়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাউকে বাঁধা বা মারধর করা হয়নি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম সিকদার জানান, ঘটনা শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে তাদের মারধর করছে। পরে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক।
কালিয়াকৈর থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়। তারা একটি অভিযোগ দিয়েছে সেটি গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএ-২১