মৌলভীবাজারে সরিষা দিচ্ছে বাড়তি আয়

সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার


ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
১১:৩৭ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
১১:৩৭ অপরাহ্ন



মৌলভীবাজারে সরিষা দিচ্ছে বাড়তি আয়

যেদিকে চোখ যায় শুধু সরিষার মাঠ। দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ। স্বল্প পুঁজিতে ও কম সময়ে সরিষা চাষ করে লাভের আশা দেখছেন মৌলভীবাজারের কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় সরিষার চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমন আর বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষ করে যেমন মাঠের উর্বরতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, তেমনি বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে কৃষকদের।

মৌলভীবাজারের বিন্নার হাওরে এবার ১৮ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকেরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার একটু বেশি আবাদ হয়েছে। সরিষাক্ষেতে ইতোমধ্যে বীজও আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। এবার জমির পর জমিতে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ফুলে ফুলে মধু আহরণে ভিড় করছে মৌমাছিরা। অনেক জমিতেই ফুল শেষ হয়ে বীজ দেখা গেছে। আর চাষিরাও ভালো বীজের আশায় নিয়মমাফিক পানি সেচ দিচ্ছেন জমিতে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৩২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ সম্ভব হয়েছে, যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর জেলাজুড়ে সরিষা আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৩৪৭ হেক্টর জমিতে। এবার আবাদকৃত সরিষার মধ্যে রয়েছে বারি সরিষা ১৪, ৯, ১৫ ও ১৭ এবং বিনা সরিষা ৪ ও ৯ জাত।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বিন্নার হাওরে গেলে কথা হয় চাষি রাজা মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'জমিতে সার দিয়েছি, পরে বীজ ছিটিয়েছি। পানির সেচও ভালোভাবে দিচ্ছি। গত বছর প্রথমবার হওয়ায় ভালো চাষ করতে পারিনি, সারও ভালো দেওয়া যায়নি। এবার সার ভালো দিয়েছি, চাষও ভালো করেছি। ফসলটাও ভাল হয়েছে। আরও ১৫-২০ দিন পরেই গাছে বীজ আসবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আগে আমাদের মুরব্বিরা সরিষার তেল খেতেন। এটা ভালো তেল। এখন অবশ্য অনেক জাতের তেল বের হয়েছে। কিন্তু সরিষা তেলের ওপর কোনো তেল হতে পারে না।'

উপজেলার আজমেরু গ্রামের চাষি জাহিদ মিয়া বলেন, 'সরিষা চাষ গত বছরের তুলনায় এবার ভালো হয়েছে। গত বছর আমরা অনেক বেশি পানির সেচ দিয়েছিলাম, কিন্তু এবার দিচ্ছি জেনারেটরের মাধ্যমে স্প্রে করে। যার কারণে প্রতিটি গাছের গোড়ায় পানি পৌঁছাতে পারছে। সে কারণে ফলন ভালো হচ্ছে। গত বছর অনেক বীজই গজিয়ে ওঠেনি। এবার অধিকাংশ বীজে গাছ হয়েছে। এখন পানি সেচ দিচ্ছি। আশা করি ভালো ফলন হবে।'

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, 'মৌলভীবাজার জেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে আমরা সরিষার অবাদ বৃদ্ধি করছি যাতে ভোজ্য তেলের যে চাহিদা সেটা আমরা পূরণ করতে পারি। একই সঙ্গে সরিষা থাকলে মধু চাষও বৃদ্ধি পাবে।'

উপ-পরিচালক আরও বলেন, 'যে সমস্ত এলাকায় সেচের সুবিধা আছে, আমরা চেষ্টা করছি সেই সমস্ত এলাকায় স্বল্প মেয়াদে সরিষা চাষ করতে। যেমন ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে আমন ফসল তোলা হয়। এই আমন আর বোরো চাষের মাঝখানে যে সময়টুকু থাকে, সেই সময়টুকুতে সরিষা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে কৃষকরা বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।

 

এসএইচ/আরআর-০১