সিলেটে কমেছে মাস্কের ব্যবহার

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৬, ২০২১
০১:৩৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৬, ২০২১
০১:৩৫ পূর্বাহ্ন



সিলেটে কমেছে মাস্কের ব্যবহার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহারকে প্রধান নিয়ামক হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সিলেটে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও মাস্কের ব্যবহার বাড়ছে না। বরং ইদানিং মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা আরও কমেছে। বাজার-শপিং মল, অফিস, গণপরিবহন কোথাও মাস্ক ব্যবহারের বালাই। ফলে সংক্রমণ আবারও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। 

গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেট জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম দিকে শনাক্তের সংখ্যা কম থাকলেও সে বছরের জুন-জুলাই মাসে শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে আগস্টের পর থেকে কমতে থাকে এ সংখ্যা। এ বছরের প্রথম দুই সিলেট মাস বিভাগে সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঠেউয়ে আবারও বাড়তে থাকে শনাক্তের সংখ্যা।

সংক্রমণ ঠেকাতে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় চলাচলে বিধি-নিষেধ। এরপর মাসের শেষ দিকে আবার সংক্রমণ কমতে শুরু করে। মে মাসেও প্রথম দিকে শনাক্ত কমতির দিকে থাকলেও শেষ দিকে এসে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ। মে মাসের প্রথম ১১ দিনে করোনা শনাক্ত হয় ৫২০ জনের।

নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশ। পরের দশ দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৭১ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মাসের শেষ দশদিনে করোনা শনাক্ত হয় ৬১৫ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৭ শতাংশ। আর এ মাসের প্রথম দুই দিনে জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪৫ জনের। 

সংক্রমণ বাড়লেও এখানে মাস্কের ব্যবহার কমেছে। গত দুই দিন নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মদিনা মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। তারা মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছেন, করছেন  নিত্যদিনের কাজ। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাস্ক ছাড়া সেবা না দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানেও মাস্ক ছাড়া ঢুকছেন অনেকেই। সেবাও নিচ্ছেন তারা।

এছাড়া যাদের মাস্ক আছে তারা তা ঝুলিয়ে রাখছেন কানে বা গলায়। একই অবস্থা গণপরিবহনেও। গণপরিবহন খুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে চালক-হেল্পার বা যাত্রী বেশিরভাগেরও মুখেই মাস্ক দেখা যাচ্ছে না। কিছুদিন আগেও নগরে ভ্রাম্যমাণ অনেক মাস্ক ব্যবসায়ীকে দেখা গেলেও ইদানিং কম দেখা যাচ্ছে। কমেছে মাস্ক বেচাকেনাও। 

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের শর্ত থাকলেও এসব শর্ত এখন শুধু কাগজে-কলমেই আছে। মানুষজন মাস্ক ছাড়া অবাধে চলাচল করছেন। মাস্ক ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে তারা নানা অজুহাতও দাড় করাচ্ছেন। কেউ বলছেন গরমের কারণে ব্যবহার করা যায় না, কেউ আবার বলছেন করোনা নেই।

গত বৃহস্পতিবার নগরের বন্দরবাজার এলাকায় মাস্ক ছাড়া বাজার করতে আসা সুহেল হোসেন সিলেট মিররকে বলেন, ‘এই গরমে মাস্ক ব্যবহার করা কঠিন। কিছু সময় দিলেই তা ঘেমে যায়। তাই মাস্ক খুলে রেখেছি।’

আম্বরখানা এলাকার আম বিক্রেতা মজিদ আলী বলেন, ‘কিছুদিন মাস্ক ব্যবহার করেছি। এখন তো করোনা নেই। মাস্ক ব্যবহার করার দরকার কী?’

এদিকে, ব্যবহার কমায় মাস্কের বিক্রিও কমেছে বলে জানিয়েছেন মাস্ক ব্যবসায়ীরা। নগরের বন্দরবাজার এলাকার ভ্রাম্যমাণ মাস্ক বিক্রেতা হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘আগে মানুষজন মাস্ক ব্যবহার করত বেশি। অনেকেই বিভিন্ন অফিসে ঢুকতে মাস্ক কিনতেন। কিন্তু এখন মাস্কের বিক্রি নেই।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন মাস্ক ব্যবহার কমায় সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা দল বলেছে, লকডাউন ও অন্যান্য সতর্কতার পাশাপাশি জরুরি কাজে বাইরে চলাফেরার সময় সবাই মাস্ক ব্যবহার করলে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই ১০ শতাংশ হারে কমে। 

এ বিষয়ে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সবাইকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তাই সংক্রমণ রুখতে হলে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করবে প্রশাসন।’

সিলেটে এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বাড়লে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কঠোর হয় প্রশাসন। প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। ফলে নগরে বেড়েছিল মাস্কের ব্যবহার। তবে ঈদের পর কমে আসে অভিযানের সংখ্যা। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি প্রতিদিনই জেলায় মোবাইল কোর্টের অভিযান চলছে। 

সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা, কোভিড-১৯ মিডিয়া সেল) শাম্মা লাবিবা অর্ণব সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন তিনটি মোবাইল টিম বের হচ্ছে। কিন্তু শুধু অভিযানেই মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

এনএইচ/আরসি-০৩