নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ০৭, ২০২১
০১:২১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুন ০৭, ২০২১
০১:২১ পূর্বাহ্ন
টিলা ও পাহাড় কাটার মতো সিলেটে অবাধে নিধন হচ্ছে গাছপালাও। এতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জীবজন্তু হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল। খাবার সংকটে লোকালয়ে বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন প্রাণী। গাছপালা নিধনে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ।
সিলেট শহরে প্রায়ই বানরের উৎপাত শোনা যায়। খাবারের সন্ধানে তারা মানুষের বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন, বন উজাড়, পাহাড়-টিলা কাটা ও শহরের পরিধি বিস্তৃতির ফলে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। সিলেট শহর ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিঅধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন প্রাধিকারের সভাপতি আহমেদ রাফি জানান, বছরে বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য পশু-পাখি আটকের ঘটনা ঘটে। খবর পেলে আমরা সেখানে ছুটে যাই এবং সেগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বছরেএরকম শতাধিক ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় মানুষের আচরণ হওয়া উচিত প্রাণিবান্ধব। অন্যথায়, ভবিষ্যত সংকট ঘনিভূত হবে।’
পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশ-এর প্রধান সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, ‘সিলেটের পরিবেশ যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে, আমরা সন্দিহান আমাদের পরবর্তী প্রজন্মগুলো বসবাসযোগ্য পৃথিবী পাবে কিনা। মানুষ নিজেদের স্বার্থে পরিবেশের বিপদ ডেকে আনছে।’
তিনি বলেন,‘গত কয়েক বছরে সিলেটে শতাধিক প্রজাতির পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণী বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি এলার্মিং। এর জন্য দায়ী আমরা মানুষ। সবচেয়ে উত্তম উদাহরণÑ সিলেটের রাতারগুল। সংরক্ষিত বিশেষ ধরনের বন হওয়া সত্ত্বেও সেখানে পর্যটনের নামে বন ধ্বংস হচ্ছে। একদশক আগে শতাধিক প্রজাতির প্রাণী থাকার কথা বলা হলেও এখন ১০ প্রজাতির প্রাণী পাওয়া যাবে না।’
সিলেটের নদনদী ও হাওরের নাব্যতা সংকট নিয়ে কারও মাথাব্যাথা নেই। বৃষ্টিতে পাহাড়-টিলা ধসে এবং স্রোতের সঙ্গে নদ-নদী ও হাওরে গিয়ে পড়ে। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইন, খোয়াই ও ভাসিয়া নদীতে বিশাল বিশাল চর জেগে উঠে।
এ অবস্থায় শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়। পানি সংকটে পড়ে কৃষি। অপরদিকে, বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নামা পানি নামতে পারে না। প্রবাহ ঠিক না থাকায় নদনদী ও খাল-বিলে পানি আটকে যায়। দীর্ঘস্থায়ী হয় জলাবদ্ধতা এবং বন্যা দেখা দেয়।
নদী গবেষক ও সেভ দ্য হ্যারিটেজ এর প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল হাই আল হাদী বলেন, ‘সুরমা-কুশিয়ারার মতো শাখা নদীগুলো মরে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট আর বর্ষায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এ নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। এখনই পরিকল্পিত উদ্যোগ না নিলে সিলেটের ভবিষ্যত হবে অন্ধকার।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান সরকার বলছেন, ‘আপাতত সুরমা-কুশিয়ারা খননের পরিকল্পনা তাদের নেই। বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দেখছে।’
নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে পানি দূষণও বাড়ছে। বিষাক্ত হচ্ছে জল। বিভিন্ন সময় নদী ও হাওরে মাছ মরে ভেসে ওঠার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সিলেট নগরের গৃহস্থলী ও মেডিকেল বর্জ্য ছড়া ও খাল দিয়ে সুরমায় পড়ছে। এসব বিষাক্ত বর্জ্য নদনদীর মাছের খাদ্যে পরিণত হচ্ছে। সেই মাঠ আবার মানুষ খাচ্ছে। বিষয়টি সত্যিই ভয়ংকর।
উজানে ভারত থেকে প্রবাহিত কানাইঘাটের লোভাছড়া ও জৈন্তাপুরের লালাখালে বছরে পানি নীল হয়ে যাওয়ার ঘটনাও পরিবেশ দূষণের একটি বড় উদাহরণ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ বলেন, ‘লালাখালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঢলের সময় উজান থেকে ভারি শিল্পবর্জ্য নেমে আসে। এসব বর্জ্য পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি।’
এসএইচ/আরসি-০২