শাবিপ্রবির একাধিক ভবনে ফাটল, ক্যাম্পাসে আতঙ্ক

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি


জুন ০৯, ২০২১
১০:৫৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৯, ২০২১
১০:৫৯ পূর্বাহ্ন



শাবিপ্রবির একাধিক ভবনে ফাটল, ক্যাম্পাসে আতঙ্ক

সিলেটে ১০ দিনের মধ্যে ১০ দফায় ভূমিকম্পের পর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরকম পরিস্থিতিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার খবরে ক্যাম্পাস জুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। 

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন, ইউনিভার্সিটি সেন্টার, শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে। একাডেমিক ভবন ‘এ’-এর নিচতলায় উত্তর-পূর্ব পাশের একটি দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। একইভাবে ‘ডি’ ভবনের নিচ তলায় ও ১০২২ নম্বর কক্ষের মেঝে কিছুটা দেবে গেছে। এছাড়া লাইব্রেরি ভবনের নিচ তলায় ১০১ নং কক্ষের পূর্ব পাশের একটি দেয়াল এবং তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সামনের অংশের দেয়ালে ফাটল ধরেছে।  

শাবি’র ইউনিভার্সিটি সেন্টারে অবস্থিত (ইউসি) সোনালী ব্যাংকের মূল ফটকের সামনে দক্ষিণ পাশের একটি দেয়াল ও একটি কলামে ফাটল ধরছে। ভেতরে ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারের দক্ষিণ পাশের একটি দেয়াল, নিচ তলার ৭টি কলাম এবং উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দেয়ালে, দ্বিতীয় তলায় ৬টি কলাম ও উত্তর পশ্চিম পাশের দেয়ালে ফাটল ধরেছে।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল শাবির ইউনিভার্সিটি সেন্টারের কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালের ৮ আগস্ট শেষ হয় নির্মাণ কাজ। প্রায় ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতল এ সেন্টারটি নির্মিত হয়। মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবনটি চার তলা হওয়ার কথা থাকলেও ঝুঁকি বিবেচনায় তা করা হয়নি। এ ভবনে প্রক্টর কার্যালয়, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের কার্যালয়, ডে-কেয়ার সেন্টার, সনাতন ধর্মালম্বীদের মন্দির, ছাত্রদের সাংগঠনিক কক্ষ ও নিচ তলায় একটি ইউনিটে সোনালী ব্যাংকের শাখা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘দ্বিতল বিশিষ্ট ইউনিভার্সিটি সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ পরিকল্পনাহীনভাবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজ করায় ভবনটিতে এ ফাটল দেখা দিয়েছে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে দেখা গেছে সেখানে প্রথম বেদির দুটি দেয়াল, দ্বিতীয় বেদির দুই পাশে ৪টি দেয়াল এবং মূল বেদির সামনের ও পেছনের দেয়াল এবং মূল ফ্লোরে ফাটল ধরেছে। মূল বেদির পেছনের অংশ পশ্চিম দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

শাবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নির্মিত হয়। প্রায় ৬ হাজার ৮৮৬ বর্গফুট জায়গার উপর শহীদ মিনার নির্মাণে ব্যয় হয় ৩৩ লাখ টাকা। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত শহীদ মিনার এটি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জহির বিন আলম সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত ১০ বছরে সিলেট শহরে যে বিল্ডিংগুলো হয়েছে তা ১৯৯৬ এর বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়েছে। তবে এর আগের অধিকাংশ স্থাপনা বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হয়নি। তাই এ ভবনগুলো অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবন ও ইউনিভার্সিটি সেন্টারের কন্সট্রাকশন ঠিকভাবে করা হয়নি। তাই এই ভবনগুলো ঝুঁকিতে আছে।’ পরবর্তীতে যে ভবনগুলো নির্মাণ হবে তা মানসম্পন্ন করতে বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ‘ছোট ছোট ভূমিকম্পের ফলে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা দেখা দেয়। সামনে বড় ধরণের ভূমিকম্প হতে পারে। তাই সবদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধান বের করব।’

আজ বুধবার সিসিকের সঙ্গে একটি এমইউ সিগনেচার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখব। তবে আমাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।’

আরসি-০৬