ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ হয়নি রাজা স্কুলের ভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৯, ২০২১
১২:০১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৯, ২০২১
১২:৫৯ অপরাহ্ন



ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ হয়নি রাজা স্কুলের ভবন
# দুতলা নির্মাণের তিন বছরের মাথায় নিচতলায় ফাটল # ৭০ বছরের পুরোনো ভবন এখনও অক্ষত

রাজা জিসি হাইস্কুলের ভবন ফাটল নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। গত সোমবার ভূমিকম্পে নতুন একটি ভবনে (বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ভবন) ফাটল দেখা দিলেও প্রায় ৭০ বছর আগে নির্মাণ করা ভবনটি এখনও অক্ষত আছে।

ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুন) দুপুরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম স্কুল ভবন পরিদর্শন করে এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।

স্কুলের ফাটল ধরা ভবনটির দ্বিতীয় তলা নির্মাণ করা হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। এর আগে দুইতলা ভিত্তির উপর ২০০৭ সালে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়।

অবশ্য, নজরুল হাকিম স্বীকার করেছেন ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্প সহনীয় করার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। তবে, নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি ছিল না বলে দাবি করেছেন তিনি। ভবনের নিচতলা ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

যদিও, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহা. আব্দুল মুমিত সিলেট মিররকে বলেছেন, ‘ভবনটি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা এতটুকু জানি। ভবনটির দুতলা সম্প্রসারণের ফলে আটটি শ্রেণিকক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ও বিজ্ঞানাগার রয়েছে। আর পুরোনো ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ৬০-এর দশকে।’

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় স্কুল পরিদর্শন করে মৌখিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণার কথা জানান নির্বাহী প্রকৌশলী। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলে ৬তলা ভিত্তির উপর একতলা আরও একটি ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। যেহেতু, কামরান ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, তাই শ্রেণিকক্ষের সংকট কাটাতে নতুন ভবনটি ৬তলা পর্যন্ত নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

ভূমিকম্প সহনীয় ভবন কেন নির্মাণ করা হয়নি- জানতে চাইলে নজরুল হাকিম বলেন, ‘২০০২-০৩ সালের আগে স্কুল ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোডের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময় থেকে এটি মানা হচ্ছে। আর দুইতলা বিশিষ্ট ভবনে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও খুম কম থাকে। এ কারণে হয়তো এই ভবনটি নির্মাণে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।’

স্কুল ভবন ফাটলের খবরে গতকাল সোমবার সকাল থেকে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও আশপাশের লোকজন ভিড় করেন। ১৯৬৯ সালে এই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করা সাবেক শিক্ষার্থী মো. আশরাফ আলী কিছুটা বিস্ময়ের সুরে বলেন, ‘আমরা যখন এই স্কুলে লেখাপড়া করেছি তখন উত্তরপ্রান্তের ভবনটি ছিল। কিছুদিন আগে এই নতুন ভবনটি নির্মিত হয়েছে। এতদিনের পুরনো ভবন এখনও কিছু হয়নি, অথচ মাত্র কয়েক বছরের ভবনটি ভেঙ্গে গেছে। ভবনটি সঠিকভাবে নির্মাণ করা হয়নি। এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

স্কুলের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিল ও সুহেল নিজেদের বিদ্যাপীঠে ফাটলের খবরে ছুটে যান। এ সময় মো. নাবিল জানান, ‘রাতে খবর পাওয়ার পর থেকে খুব ভয় কাজ করছিল। বন্ধুকে নিয়ে এসে দেখি আমাদের বিজ্ঞানাগার, ক্লাসরুমে বড় বড় ফাটল। নতুন ভবনের এই অবস্থা হলে আমরা নিরাপদ থাকব কীভাবে?’

গতকাল সকালে স্কুল ভবনটি পরিদর্শন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ভবনটি নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মানা হয়নি। তবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ভালো বলতে পারবে।’

গত সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা ২৯ মিনিটে সিলেটে ৩ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এক মিনিট পর আরেকদফা ভূমিকম্প হলেও সেটিকে বলা হচ্ছে ‘আফটারশক’। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর।

বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশ চন্দ্রের নামানুসারে ১৮৮৬ সালে বন্দরবাজারে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজা জিসি হাইস্কুল। স্কুলের পশ্চিম প্রান্তে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নামে নামকরণ করা দুইতলা ভবনের নিচতলায় ফাটল দেখা দেয়। ভবনের নিচতলায় বিজ্ঞানাগারে অন্তত ৬টি স্থানে এবং দশম শ্রেণিতে ৩/৪টি স্থানে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়। ভবনে আটটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এ ঘটনার খবরে সোমবার রাতেই স্কুল ভবনটি পরিদর্শন করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

এদিকে, গত ১০ দিনের মধ্যে সিলেটে পরপর অন্তত ১০ বার ভূকম্পন অনুভূত হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। ২০১৬ সালের তালিকা অনুযায়ী অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে ছয়টি মার্কেট ও একটি প্রতিষ্ঠান গত ১০ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব ভবনের বিষয়ে আজ বুধবার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এসএইচ/আরসি-০৮