হাকালুকি হাওরে বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি


জুন ২৩, ২০২১
০২:৩০ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২৩, ২০২১
০২:৩২ অপরাহ্ন



হাকালুকি হাওরে বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন (ইসিএ) হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমি থেকে বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২২ জুন) রাত এগারোটার দিকে পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাতজনের নাম উলে­খ করে বড়লেখা থানায় মামলাটি করেছেন। 

সম্প্রতি হাওরের মালাম বিলে বাঁধ নির্মাণের নামে হিজল-করচ-বরুণসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০ হাজার বৃক্ষ কেটে নেয় আসামিরা। 

মামলার আসামিরা হলেন, বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের মনাদি গ্রামের সুফিয়ান আহমদের ছেলে জয়নাল উদ্দিন, কাজীরবন্দের গ্রামের মৃত আকদ্দছ আলীর ছেলে মক্তদির আলী, মৃত আমরুজ আলীর ছেলে মশাঈদ আলী, মৃত মইয়ব আলীর ছেলে রিয়াজ আলী, ছত্তার আলীর ছেলে জয়নাল উদ্দিন, আব্দুল হান্নানের ছেলে কালা মিয়া ও মৃত মইয়ব আলীর ছেলে সুরুজ আলী।  মামলায় ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে।  

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বুধবার (২৩ জুন) সকালে বলেন, জলজ বৃক্ষ কাটার ঘটনায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে বড়লেখা থানায় মামলা করা হয়েছে। 

মামলায় ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে। মামলার তদন্তে আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। 

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার (২৩ জুন) সকালে বলেন, হাকালুকি হাওরে গাছ কাটার ঘটনায় সাতজনের নামোল্লেখ করে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।  

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হাকালুকি জাগরণী ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ও মালাম বিল বনায়ন এলাকার পাহারাদার আবদুল মনাফ গত রোববার পরিবেশ অধিদপ্তরে একটি অভিযোগ দেন। 

তাতে বলা হয়েছে, হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমির প্রায় ১২ বিঘা জমিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ এবং প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছ কর্তন করা হয়েছে। মালাম বিলের বাঁধ ও চাষের জমি তৈরির জন্য প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। 

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২১ জুন) মামলার বাদী অভিযোগকারী, হাল­া ফরেস্ট বিটের বিট কর্মকর্তা সুমন বিশ্বাস এবং হাকালুকি ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, আসামিরা পর¯পর যোগসাজশে মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমির প্রায় ১২ বিঘা জমিতে সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ হিজল, করচসহ অন্যান্য প্রজাতি এবং প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ হাজার গাছ কর্তন করেছেন। তাঁরা মালাম বিলের বাঁধ নির্মাণ ও জমি চাষের জন্য উপযোগী করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৫-এর উপধারা ১ ও ৪–এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে হাকালুকি হাওরের ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া-ইসিএ) ঘোষণা এবং সুষ্পষ্ট বিধিনিষেধ আরোপ করে। ইসিএ এলাকার প্রতিবেশব্যবস্থা সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক ইতিমধ্যে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ জারি করা হয়েছে।

ইসিএ এলাকা হাকালুকি হাওরের জীববৈচির্ত্য সংরক্ষণের জন্য মৎস্য ও জলজ প্রাণী এবং পাখির বসবাসের উপযোগী রাখার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর হাকালুকি হাওরে বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুযায়ী বিদ্যমান প্রাকৃতিক অবস্থা এবং জীববৈচির্ত্য, বন্য প্রাণীর আবাসস্থলসহ সংরক্ষিত বন ও রক্ষিত এলাকা, নদ-নদী, খাল-বিল, প্লাবনভ‚মি, হাওর-বাঁওড়, লেক, জলাভ‚মি, পাখির আবাসস্থল, মৎস্য অভয়াশ্রমসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জলজ অভয়াশ্রম, জলাভ‚মির বন, ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় এলাকার অবক্ষয় সংক্রান্ত কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসামিরা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় আরোপিত বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত ও প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা জলজ বৃক্ষ কর্তনের মাধ্যমে হাকালুকি হাওরের মৎস্যসম্পদ, জলজ প্রাণী, পাখির আবাসস্থল, উদ্ভিদের জলজ অভয়াশ্রমের ক্ষতিসাধন করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৫-এর উপধারা ৪ এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬-এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন, যা দন্ডনীয় অপরাধ।

এ.জে/বি এন-০৩