কুলাউড়ায় চা শ্রমিককে চাকরিচ্যুত, বাগান বন্ধ ঘোষণা

কুলাউড়া প্রতিনিধি


জুন ২৩, ২০২১
০৯:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২৪, ২০২১
০৫:০১ অপরাহ্ন



কুলাউড়ায় চা শ্রমিককে চাকরিচ্যুত, বাগান বন্ধ ঘোষণা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার লুহাইউনি চা-বাগানের এক শ্রমিককে চাকরি থেকে অব্যাহতির ঘটনায় গত দুইদিন থেকে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বুধবার (২৩ জুন) থেকে বাগান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। আর ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাগানের মণ্ডপে মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।

সরেজমিনে লুহাউনি চা-বাগানে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, লুহাউনি চা-বাগানের শ্রমিক শ্যামল পাশী তার ক্ষেতের জমি বাগান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দেওয়ায় গত ২২ মে তাকে ভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে সহকারী ব্যবস্থাপক নজরুল ও বাগানের চৌকিদার সাধুর নেতৃত্বে কিছু শ্রমিক অভিযান চালায়। এ সময় শ্রমিকরা ফলজ গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় বাগান পঞ্চায়েত গত ৯ জুন বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করে। গত ১৪ জুন বাগানের মহাব্যবস্থাপক বরাবরে লিখিত আবেদন করেন পঞ্চায়েতসহ বাগানের শ্রমিকরা। তখন ৫ দিনের মধ্যে প্রতিকার না পেলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।

এদিকে বাগান কর্তৃপক্ষ গতকাল মঙ্গলবার (২২ জুন) কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই শ্যামল পাশীকে বাংলাদেশ লেবার অ্যাক্ট এর ২৬ (ক) ধারায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মঙ্গলবার শ্রমিকরা অফিসের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বাগানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন শ্রমিকরা। দিনভর অবরুদ্ধ থাকার পর রাতে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

এরপর বুধবার সকাল থেকে বাগানের প্রধান ফটকে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং বাগানের কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়।

বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অজিত কৈরি জানান, মঙ্গলবার শ্রমিকরা শ্যামল পাশীকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে প্রতিবাদ করেন। দুপুর ১২টায় প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে শ্রমিকরা কাজে যেতে চাইলে লাইন চৌকিদার এসে জানায়, সাহেব (জিএম) বাগানের কাজ বন্ধ করেছেন। এ সময় বাগান কর্তৃপক্ষ অফিসে অবস্থান করছিলেন। বাগানের এলাকার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সত্য নারায়নের নেতৃত্বে ১৩ জনের একটি প্রতিনিধিদল জিএম মাহবুব আলীর সঙ্গে দেখা করেন। জিএম তাদের জানান, বাগান মালিকের নির্দেশে কাজ বন্ধ করা হয়েছে।

বুধবার শ্রমিকরা চাকরিচ্যুত শ্যামল পাশীকে চাকরিতে পুনর্বহালসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য বাগান মণ্ডপে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন লংলা ভ্যালি ক্লাবের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জু গোস্বামী ও সহ-সভাপতি জেসমিন আক্তার।

এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে বাগানের জিএম মাহবুব আলী প্রথমে জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে এবং পরে জেলা প্রশাসকের অফিসে রয়েছেন বলে জানান। চলমান অচলবস্থা প্রসঙ্গে তিনি জানান, একজন শ্রমিক খুব ভালো। কিন্তু তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে। আইনও আছে। আমি সেই আইনে তাকে চাকরিচ্যুত করি। আর যেসব দাবি-দাওয়ার কথা বলা হয়েছে সব ভুয়া।

বাগানে দায়িত্বরত কুলাউড়া থানার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, বুধবার সকাল ৮টা থেকে তারা শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।


জেএইচ/আরআর-১৬