সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ
জুন ৩০, ২০২১
০৯:১৬ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ৩০, ২০২১
০৯:১৬ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এই উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ৫০ বছর পর ২০১৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়। কিন্তু কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণের তিন বছরের মাথায় ভবনটির ২য় ও ৩য় তলার প্রায় শতাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন ডাক্তার, নার্সসহ সেবা নিতে আসা রোগীরা।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ৫০ বছর পর ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত হয়। ৮ কোটি ৩২ লাখ ৬ হাজার ৭০১ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) কর্তৃক বাস্তবায়িত তিনতলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৫ সালের ২ মে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি। প্রায় দেড় বছরে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও সংস্কার কাজটি বাস্তবায়ন করে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোদ্দার এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড এসসি। কাজ সমাপ্তের পর ২০১৮ সালের ১০ মার্চ উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, সাবেক চিফ হুইপ ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ এমপির সভাপতিত্বে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এছাড়া ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোদ্দার এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড এসসি।
গত সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবন উদ্বোধনের তিন বছরের মাথায় ভবনের ২য় ও ৩য় তলার পিলার, ভিমসহ দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিক ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে ডাক্তার, নার্সসহ আগত রোগীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনে যে সংস্কার কাজ করা হয়েছিল তাও প্রায়ই খসে পড়ছে। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কক্ষ, পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কক্ষ, জরুরি বিভাগ ও রোগীদের থাকার ওয়ার্ডের ছাদের প্লাস্টার খসে পড়েছে। সিলেট বিভাগ উচ্চ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হওয়ায় যে কোনো সময় ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কমলগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া জানান, যে সময়ে এই ভবনে কাজ হয়েছিল ওই সময় তিনি এখানে কর্মরত ছিলেন না। ভবনের ফাটলের বিষয়টি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, নতুন ভবনের ফাটলের বিষয়টি অবগত হয়েছি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ফাটল ও ঝুঁকিপূর্ণ দেয়াল পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মৌলভীবাজার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নতুন ভবনের ফাটলের বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভবনটি উদ্বোধনকালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে সিলেট স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী) ছিলেন শফিকুর রহমান। তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নতুন ভবনের কাজটি যখন শুরু হয় তখন তিনি ছিলেন না। উদ্বোধনের ২ মাস পূর্বে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ভিম ও কলামে ফাটল ধরার কথা নয়। মৌলভীবাজার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করলে ফাটলের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এসডি/আরআর-০১