মায়ের টানে ২৩০ কি.মি. সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরলেন ছেলে

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি


আগস্ট ০৩, ২০২১
১২:১৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২১
০৩:৩০ পূর্বাহ্ন



মায়ের টানে ২৩০ কি.মি. সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরলেন ছেলে

সোহেল আহমেদ ও তার মা হাজেরা বিবি

বাড়ি থেকে খবর আসে মা'কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। লকডাউনে পরিবহনও বন্ধ। মায়ের টানে তাই উপায় না পেয়ে লকডাউনের মধ্যে বাইসাইকেল চালিয়ে ২৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নিজের বাড়ি পৌঁছালেন ছেলে সোহেল আহমেদ (২৮)। ঢাকা থেকে প্রায় ১৪ ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে গতকাল রবিবার উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের লংগুড়পাড় গ্রামে বাড়িতে পৌঁছান তিনি।

জানা যায়, উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের লংগুরপাড় গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ও মাধবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আসিদ আলীর ছোট বোন হাজেরা বিবি ওরফে কুঠিল (৪৮)। গত বুধবার (২৮ জুলাই) রাতে একই গ্রামে অবস্থিত বড়ভাই আসিদ আলির বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে হাজেরা বিবি প্রতিবেশী রকিব মিয়ার বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ভোরে ঘুম থেকে উঠে রকিব মিয়ার স্ত্রীকে চা বানানোর কথা বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে যান হাজেরা বিবি। রকিব মিয়ার স্ত্রী চা তৈরি করলেও হাজেরা বিবি আর ফিরে আসেননি। সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে গেলেও হাজেরা বিবি বাড়িতে না ফেরায় হাজেরার ছেলের ঘরের নাতনি শাম্মী (১০) বাড়ির পার্শ্ববর্তী দাদা আসিদ আলীর বাড়িতে গিয়ে দাদির খোঁজ করে। 

নিখোঁজ হাজেরার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আসিদ আলী বলেন, নাতনির মুখে দাদি বাড়ি ফিরেননি শুনে তাকে সঙ্গে নিয়ে বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখি দরজা তালাবদ্ধ, বাইরের বাতি জ্বলছে। অন্য ঘরে গাভীগুলো ডাকাডাকি করছে। তখন আমি আশপাশের বাড়ি-ঘরগুলোতে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে প্রতিবেশী রকিব মিয়ার স্ত্রী আমাকে জানান, রাতে হাজেরা বিবি তাদের বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন এবং ভোরে চা বানিয়ে রাখতে বলে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরে সম্ভাব্য সব আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তার কোনো সন্ধান না পেয়ে গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) বিকেলে কমলগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়রি করি (কমলগঞ্জ থানার সাধারণ ডায়রি নম্বর ১৩৬৮)।

গত শনিবার আসিদ আলী মুঠোফোনে ঢাকায় অবস্থানকারী তার ভাগ্নে (হাজেরার ছেলে) সোহেল আহমেদকে ঘটনাটি জানান। সোহেল মায়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে অস্থির হয়ে পড়েন। করোনার কারণে চলমান লকডাউনে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বাইসাইকেল চালিয়ে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে ১৪ ঘণ্টা পর কমলগঞ্জের লংগুরপাড়স্থ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছান তিনি। সোহেল বাড়ি পৌঁছে লোকজন নিয়ে রবিবার সারাদিন বাড়ির আশপাশের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার ঝোঁপঝাড়, খাল, ডোবা, পুকুরে খোঁজাসহ সব আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করেও মা হাজেরা বিবির কোনো সন্ধান পাননি। 

সোহেলের খালাতো ভাই ভানুগাছ চৌমুহনীস্থ সিএনজি অটোরিকশাচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া জানান, প্রায় ২০/২৫ বছর আগে একইভাবে তার খালু অর্থাৎ সোহেলের বাবা মানিক মিয়া নিখোঁজ হয়েছিলেন। তার সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়া নারীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলমান রয়েছে।


এসডি/আরআর-০৮