নিজেদের সিদ্ধান্ত তুলে নিতে চায় সুনামগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ০৫, ২০২১
০৩:১০ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৫, ২০২১
০৩:১৭ অপরাহ্ন



নিজেদের সিদ্ধান্ত তুলে নিতে চায় সুনামগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থা

ছয় বছর আগে নিজ জেলার হয়ে খেলার ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে সিলেটে অনেকটা থিতু হয়ে গেছেন। সিলেটের বয়সভিত্তিক দলেও প্রতিনিধিত্ব করে ফেলেছেন। সুতরাং সে আহ্বানে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি ক্রিকেটার নাসুম আহমেদের। আর এই কারণে তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা।

বিষয়টি অনেকটাই আড়ালে ছিল। কিন্তু ৪ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে মূল ভূমিকা রাখার পর পুরোনো সেই ঘটনা আবার সামনে এসেছে। নিজেদের এমন সিদ্ধান্ত তুলে নিতে চায় সংস্থাটি। পরবর্তী সভায়ই তা কার্যকর করা হবে বলে সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার নাসুম আহমেদের জন্ম সিলেটে হলেও গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মধুরাপুরে। সিলেট নগরের পীরমহল্লা এলাকায় বেড়ে উঠা নাসুমের ক্রিকেটের হাতে খড়ি সেখানে। সিলেটে বয়সভিত্তিক দলগুলোতে খেলেই তিনি পরবর্তীকালে সিলেট জেলা ও বিভাগীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

২০১৫ সালে সুনামগঞ্জের স্থানীয় লীগে প্যারামাউন্ট ক্লাবের হয়ে খেলতে গিয়ে তিনি সুনামগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার চোখে পড়েন। এসময় সংস্থার পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জের ছেলে হিসেবে নিজ জেলার পক্ষে খেলার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় নাসুমকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দূর্দান্ত পারফরমেন্সের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা এখন নাছুমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চায়।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সিলেটের খ্যাতিমান কোচ এএইচএম মাহমুদ ইমনের তত্ত্বাবধানে ছিলেন নাসুম আহমেদ। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মাহমুদ ইমন সিলেট মিররকে বলেন, ‘নাসুমকে একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমি পেয়েছি। সে বন্ধুদের সঙ্গে স্টেডিয়ামে আসত। তাকে দেখে আমার মনে হয়েছে ঠিক মতো নার্সিং করলে সে অনেকদূর যাবে। যে কারণে তার প্রতি আমার বাড়তি নজর ছিল। সে এখানে থেকেই অনুর্ধ্ব-১৪ সিলেট জেলা দলে জায়গা করে নিয়েছে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সিলেট জেলা ও বিভাগীয় দলেও জায়গা করে নিয়েছে।’

সুনামগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার নাসুমকে বহিস্কার করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্যারামাউন্ট ক্লাবের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে আমাকে বলা হলো স্থানীয় লিগে তাদের ক্লাবে নাসুমকে খেলাতে চায় তারা। তখন নাসুম ফ্রি ছিল। আমি বললাম খেলুক। সেখানে ভালো পারফর্ম করার পর সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাকে তাদের জেলা দলে খেলার জন্য বলেছিল। কিন্তু যেহেতু সিলেটে তার সবকিছু, রেজিস্ট্রেশনও এখানে। সে কারণে সে তাদের প্রস্তাবে রাজি হতে পারেনি। পরবর্তীকালে তারা তাকে বহিস্কার করেছে এ কারণে।’

বহিস্কারের বিষয়টি তিনি জানতেন না জানিয়ে ইমন বলেন, ‘এ ঘটনায় যে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে সেটা আমি জানতাম না। আজকে অনেকে আমার সঙ্গে যোগযোগ করায় আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি।’

এই বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রাজা চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘তার বাড়িতো ভাটিপাড়ায়। তাই সুনামগঞ্জ জেলার ক্রিকেটারদের ডাকা হয় জেলার ক্রিকেট দল গঠনের সময়। ২০১৫ সালেও দল গড়ার সময় নাসুমকে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রিকেট কমিটি দলে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। কিন্তু কমিটির সে আহ্বানকে পাত্তা না দিয়ে সে সিলেট জেলা দলের হয়ে খেলেছে। যা সুনামগঞ্জ জেলা ক্রিকেট কমিটির অনুভূতিতে আঘাত করে।’

নাসুমের সঙ্গে নিপু নামে আরেক ক্রিকেটার একই কাজ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাই জেলা ক্রিকেট কমিটি তাদেরকে সুনামগঞ্জে নিষিদ্ধ করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিপু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আবেদন করেছিল। সে আবেদন গ্রহণ করা হলে তার নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। কিন্তু নাসুম এখনও আবেদন করেনি। আর এখন যেহেতু সে জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলছে। যা সুনামগঞ্জের হয়ে প্রথম, তাই এখন আর জেলা ক্রিকেট পড়ে থাকলে তো হবে না। আগামী সভায় আমরা তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেব।’ 

নাসুমের ক্রিকেট ক্যারিয়ার সিলেটেই শুরু হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সে স্থানীয় কোটায় প্যারামাউন্ড ক্লাবের হয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খেলেছে। তাছাড়া বাড়িও সুনামগঞ্জ জেলায়। তাই তাকে ডাকা হয়েছিল জেলা ক্রিকেট দলে খেলার জন্য।’

এএফ/আরসি-১২