মৌলভীবাজারে পর্যটকদের ভিড়ে স্বস্তিতে ব্যবসায়ীরা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি


আগস্ট ২৩, ২০২১
০৬:৩৫ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৩, ২০২১
০৬:৩৭ অপরাহ্ন



মৌলভীবাজারে পর্যটকদের ভিড়ে স্বস্তিতে ব্যবসায়ীরা

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর লকডাউনের কারণে প্রায় ৫ মাস বন্ধ থাকার পর দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, বাইক্কা বিলসহ সকল পর্যটন কেন্দ্র। এরপর থেকেই এসব স্থানে ভিড় বেড়েছে পর্যটকদের। আর এতে করে খুশি এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন ফুরিয়ে গেলেও গতকাল রবিবার সকাল থেকেই পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে এসব স্থান। শুধু লাউয়াছড়াই নয়, পর্যটকরা সেখান থেকে দলবল নিয়ে যাচ্ছেন মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, বড়লেখার মাধবকুন্ড, কমলগঞ্জের মাধবপুর লেকসহ বিভিন্ন চা-বাগানে।

রবিবার সকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের। কিন্তু প্রবেশদ্বার অতিক্রম করার পর অধিকাংশ পর্যটকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। ছবি তোলা কিংবা অক্সিজেন গ্রহণের অজুহাতে অধিকাংশ পর্যটকই মাস্ক রাখছিলেন না মুখে। তবে পর্যটকরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদ্যানে চলাচল করেন, সেজন্য কাজ করছে লাউয়াছড়া উদ্যানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পর্যটন পুলিশ ও বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট লোকজন।

কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মঞ্জুর আহমেদ আজাদ মান্না বলেন, করোনা মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করলে তা নিরাপদ হবে। 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পর্যটন পুলিশের এসআই নাছির উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আগত পর্যটকদের বলা হচ্ছে। যাদের মাস্ক নেই, তাদেরকে টিকিট কাউন্টার থেকে মাস্ক সংগ্রহ করে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি। পাশাপাশি পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ। 

লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি নির্দেশনার আসার পর থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আসা দর্শনার্থীদের করোনার বিধিনিষেধ মানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পর আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে দেই। 

এদিকে, দীর্ঘদিন পর পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় স্বস্তি বিরাজ করছে মৌলভীবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে গড়ে ওঠা হোটেল-মোটেলগুলোর ব্যবসায় নেমে এসেছিল মন্দা। 

হোটেল প্যারাডাইজের মালিক আবুজার বাবলা বলেন, করোনার কারণে সব বন্ধ থাকায় পর্যটকরা না আসায় হোটেলও বন্ধ রাখতে হয়েছে। নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে ৮-১০ জন কর্মীকে বেতন দিতে হয়েছে প্রতি মাসে। এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব। স্বাস্থ্যবিধি ও প্রস্তুতির বিষয়ে আমরা শতভাগ প্রস্তুতি নিয়েছি। 

লাউয়াছড়া ইকো ট্যুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া জানান, করোনায় সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় তারা প্রায় ২৫ জন গাইড কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের এ দুঃসময়ে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। এখন পর্যটন কেন্দ্র খুলেছে। অনেক পর্যটক ইতোমধ্যে যোগাযোগও শুরু করেছেন।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বন বিভাগের সব পর্যটন কেন্দ্র দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীরা এসব স্থানে প্রবেশ করবেন। 

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, সরকারি নির্দেশে সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে প্রয়োজনে পর্যটন কেন্দ্র আবার বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।


এসএইচ/আরআর-০১