কমলগঞ্জে আউশের ভালো ফলন, চলছে ফসল তোলার উৎসব

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


আগস্ট ২৬, ২০২১
০৫:৪৬ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৬, ২০২১
০৫:৪৬ অপরাহ্ন



কমলগঞ্জে আউশের ভালো ফলন, চলছে ফসল তোলার উৎসব

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় এখন চলছে আউশ ধান ঘরে তোলার উৎসব। যদিও মৌসুমের শুরুতে আশানুরূপ বৃষ্টিপাতের দেখা মিলেনি। অন্যান্য বছরের যে সময়ে জেলার হাওর, বাওড়, নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ভরপুর থাকে, এ বছর বর্ষার সেই চিরচেনা রূপ দেখা যায়নি। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে এ অঞ্চলে বষার্য়ও কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের দেখা ছিল না। এর মাঝেই অনেক কৃষক জমিতে আউশ ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। তারা ফসলও পেয়েছেন ভালোই।

যদিও উপজেলার অনেক কৃষক বৃষ্টি ও সেচের সংকটে আউশ চাষ করতে পারেননি, তবু এবার বিরূপ আবহাওয়ার পর সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে আউশের ফলন ভালো হওয়ায় কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। কেউ কেউ ধান কাটার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। আবার কেউবা ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য রোদে শুকাচ্ছেন । 

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে এ বছর আউশের চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার কম জমিতে আউশ ধান চাষ করা হলেও ফলন হয়েছে গত বছরের চেয়ে বেশি। সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সার, পোকা-মাকড় ও আগাছা দমনসহ সকল বিষয়ে উপযুক্ত সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে চাষিদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যে কারণে এ বছর আউশ ধানের ভালো ফলন হয়েছে এ উপজেলায়।

সরেজমিনে কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, শমশেরনগর, রহিমপুর, মুন্সিবাজার ও পতনঊষার ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, আউশ ধান ঘরে তুলতে কৃষাণ-কৃষাণি কারও যেন একটুও বিশ্রাম নেই। চারদিকে এখন ধান কেটে ঘরে তোলার প্রতিযোগিতা। কৃষাণ-কৃষাণি ও অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে নিজ নিজ জমির আউশ ধান কর্তন করছেন অনেকে। কেউ আবার মেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়াই করছেন, খড় থেকে ধান ছাড়াচ্ছেন। কোথাও আবার রাস্তায় খড় ও ধান রোদে শুকাচ্ছেন।

মুন্সিবাজারের কৃষক আব্দুস ছামাদ বলেন, এবার শুরু থেকে পানির অভাবে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার ৩ একর জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। ধান তুলতে ও শুকাতে কিছুটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। আকাশে কিছুসময় বৃষ্টি, আবার কিছুসময় রোদ থাকে। বৃষ্টির পানিতে উঠান ভেজা থাকায় আমাদের ধান শুকাতে সমস্যা হচ্ছে।

শমশেরনগর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল বারী, মছদ্দর আলী, আবুল কাশেম ও আমির আলী জানান, বর্ষার ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রায় ১০ একর আউশ জমি চাষাবাদ করতে পারেননি তারা। আউশের চারা রোপণেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে অল্প বৃষ্টিপাতের মাঝে ৫ একর আউশ জমি চাষ করেছেন। তাতে ফসল ভালো হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে আরও কিছু জমি চাষ করা যেত।

রহিমপুর ইউনিয়নের কৃষক আলতা মিয়া বলেন, বর্ষাকালে পানির অভাব ছিল এ রকম কোনো সময় দেখিনি। আউশ জমিতে ক্ষেত করতে খুব ভোগান্তি পেতে হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে ফসল ভালো হওয়ায় এখন আনন্দ লাগছে। বউ-বাচ্চা নিয়ে শান্তিতে ভাত খেতে পারব।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ রায় বলেন, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে আমরা সার, সেচ, পোকা-মাকড় ও আগাছা দমনসহ সকল বিষয়ে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে চাষিদের পরামর্শ প্রদান করেছি। যে কারনে এ বছর বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টির প্রতিকূলতা কাটিয়ে আউশ ধানের ভালো ফলন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেসব কৃষকের ধান পেকেছে এবং কাটার উপযোগী হয়েছে, তারা সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ধান কেটে ফেললে ভালো হবে। এতে ফলনের পরিমাণ ঠিক থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ে ধান না কাটলে বৃষ্টিপাতে ধান পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যে পরিমাণে ধান পাওয়ার কথা তার থেকে কম পাওয়া যাবে।


এসডি/আরআর-০১