বড়লেখায় স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ স্ত্রীর

বড়লেখা প্রতিনিধি


আগস্ট ২৭, ২০২১
০৭:৪৬ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০২১
০৯:২০ অপরাহ্ন



বড়লেখায় স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ স্ত্রীর

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতন, গুম ও পুড়িয়ে হত্যার হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বড়লেখা পৌরসভার হাটবন্দ এলাকার বাসিন্দা ফয়ছল আহমদ সাগরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার স্ত্রী সাহেদা আক্তার সাকি।

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৪টায় বড়লেখা পৌরসভার হলরুমে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে নানা অভিযোগ তোলে ধরেন। অভিযুক্ত ফয়ছল আহমদ সাগর বড়লেখা পৌরসভার হাটবন্দ এলাকার মৃত মনজ্জীর আলীর ছেলে। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাহেদা আক্তার সাকি বলেন, ২০০২ সালে ফয়ছল আহমদ সাগরের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর সংসার ভালোভাবে চলছিল। আমাদের পরিবারে ৪টি সন্তান রয়েছে। প্রায় ৮ বছর আগে টনি নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে আমার স্বামী পালিয়ে সিলেটে চলে যান। সেখানে গিয়ে আমাকে জানান যে তিনি চাকরি করছেন। প্রথমে কয়েকমাস যোগাযোগ রাখলেও হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। আমার ৪টি সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। পরে জানতে পারি তিনি আমার অজান্তে সিলেটে একটি বিয়ে করেছেন। আমি বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। প্রায় ২ মাস আগে তিনি হঠাৎ করে সিলেট থেকে বাড়িতে এসে বলেন, আমার সংসারে থাকতে হলে ২ লাখ টাকা যৌতুক দিতে হবে। আমি টাকা কোথায় পাব- এটা বলতেই তিনি আমাকে নির্যাতন শুরু করেন। তার নির্যাতন থেকে বাঁচতে বিষয়টি আমি এলাকার লোকজনকে জানালেও তার ভয়ে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায় না। তার আত্মীয়-স্বজনও এগিয়ে আসে না। পরবর্তীতে ন্যায়বিচারের দাবিতে আমি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সুষ্ঠু বিচার পাইনি। প্রায়ই টাকার জন্য সিলেট থেকে বাড়িতে এসে আমার ওপর নির্যাতন করেন তিনি। কোনো ভরণ-পোষণ দেন না।   কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাহেদা আক্তার সাকি বলেন, সব অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে আমার চার সন্তানের দিকে তাকিয়ে আমি এত বছর মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে চলেছি। চলতি বছরের ১৪ জুলাই তিনি (সাগর) সিলেট থেকে বাড়িতে এসে আবারও আমার ও আমার মেয়ের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালান। নির্যাতন সইতে না পেরে গত ১৯ জুলাই বড়লেখা আদালতে মামলা করেছি। কিন্তু এটা জানতে পেরে তিনি আমাকে ও আমার সন্তানদের মারধর ও গুম করে পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি একজন বড় সাংবাদিক। মামলা করে কিছুই করতে পারবি না। বিগত দিন কত মামলা ঘাঁটছি, কত বেটারে পিটাইছি, ইতার ভয় দেখাইছ না। পুলিশের বড় বড় লোকজন আমার পকেটে রয়েছে।’ এতে আমি ও আমার সন্তানরা আতঙ্কে দিন পার করছি।

সাহেদা আক্তার সাকি বলেন, ফয়ছল আহমদ সাগরের একটি ভুয়া সাংবাদিক বাহিনী রয়েছে, যারা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মানুষকে হয়রানি ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ফয়ছল আহমদ সাগরসহ তার বাহিনীর কেউ ফাইভ পাশ করেনি। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তারা ইয়াবা, গাঁজা, নারী ব্যবসা করে বলে বড়লেখার সকলেই জানেন। এই বাহিনী দ্বারা আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বার বার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে মাহবুব নামের এক ব্যক্তি বাড়িতে এসে আমাকে শাসিয়ে বলেছে ‘বড়লেখা থানার পুলিশ আমার নিয়ন্ত্রণে। মামলা করে কিছু করা যাবে না। মামলা উঠাইয়া আনো।’

তিনি তার ও সন্তানদের প্রাণের নিরাপত্তা চেয়ে বলেন, ফয়ছল আহমদ সাগর আমার এবং সন্তানদের যে কোনো সময় বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেন। আমি প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে ন্যায়বিচার ও আমার সন্তানদের প্রাণ ভিক্ষা চাইছি।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়ছল আহমদ সাগর বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আর আমি আমার স্ত্রীকে প্রায় ৫ মাস আগে তালাক দিয়েছি। তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। নির্যাতনের অভিযোগও সঠিক নয়। পুলিশ আমার পকেটে থাকে- একথা আমি বলিনি। কাউকে হুমকিও দেইনি। আর আমি আমার সন্তানদের ভরণ-পোষণ সব দিচ্ছি।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ইয়াবা, গাঁজা ও নারী ব্যবসার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ১৭ বছর ধরে সাংবাদিকতা করি। আমার কোনো বাহিনী নেই। আমি কাউকে হয়রানিও করিনি। এ সবকিছু মিথ্যা। এগুলো সব ষড়যন্ত্র। 

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার শুক্রবার বিকেলে বলেন, থানায় নির্যাতনের অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


এজে/আরআর-০৬