আশা জাগাচ্ছে আমন, সিলেটে ছাড়িয়ে যাবে লক্ষ্যমাত্রা

শুয়াইব হাসান


সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
১২:০৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
০৬:৫৪ অপরাহ্ন



আশা জাগাচ্ছে আমন, সিলেটে ছাড়িয়ে যাবে লক্ষ্যমাত্রা

এবার বন্যা না হওয়ায় আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। রোপা আমন চাষেও আবহাওয়া ছিল অনুকূলে। সবমিলিয়ে কৃষকদের মধ্যে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আবাদেও লক্ষ্যমাত্রার আশা কৃষি কর্মকর্তাদের। 

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেটের চার জেলায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ হেক্টর। এরই মধ্যে ৯৫ ভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভাগে ৩ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। 

সূত্র আরও জানায়, সিলেটের চার জেলায় ২০ হাজার ৯৬৪ হেক্টর বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে, সময়মতো বৃষ্টি ও বন্যামুক্ত হওয়ায় ২২ হাজার ৪২৪ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বীজতলা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। বীজতলা তৈরিতে সিলেট জেলা এগিয়ে। ৭ হাজার ৫৬৩ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বীজতলা হয়েছে ৮ হাজার ৩১৯ হেক্টরে। অগ্রগতি ১০ শতাংশ বেশি। মৌলভীবাজারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩১ হেক্টর বেশি জমিতে, হবিগঞ্জে ১৫০ হেক্টর বেশি এবং সুনামগঞ্জে ২২৩ হেক্টর বেশি বীজতলা তৈরি করেছেন কৃষকরা। 

ঠিকমতো বীজতলা তৈরি করার সুবাদে ভালো মানের চারা এবং অতিরিক্ত চারায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমি আবাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা। 

সিলেট জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা (তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা) বিমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘গত বছর তিনদফা বন্যার কারণে কৃষকরা ঠিকমতো বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। এবার অনুক‚ল আবহাওয়ার কারণে সিলেট বিভাগে আউশের ভালো ফলন হয়েছে। এতে কৃষকরা আরও উৎসাহিত হয়েছেন। রোপা আমন চাষিরা দ্বিগুণ উৎসাহে এখন মাঠে নেমেছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আমন আবাদ হবে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।’ 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, এবার সিলেট বিভাগের চার জেলায় ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত। উফশী ৩ লাখ ৪১ হাজার ৯৭০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান আবাদের লক্ষ্য ৫৭ হাজার ৯৩৫ হেক্টর এবং হাইব্রিড ৯১ হেক্টর জমিতে আবাদ করার কথা। এরই মধ্যে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩ হেক্টর জমিতে উফশী, ৩৯ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে স্থানীয় এবং ২৮৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতীয় ধান আবাদ হয়েছে। প্রতিদিন কৃষকরা জমি আবাদে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে আগ্রহের কমতি নেই। 

বিভাগের মধ্যে মৌলভীবাজারের কৃষকরা সবার আগে। তারা এরই মধ্যে শতভাগ লক্ষ্য পূরণ করেছেন। ৯৯ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্য থাকলেও তারা এরই মধ্যে এক লাখ হেক্টর জমি আবাদ করেছেন। কোনো লক্ষ্যমাত্রা না থাকা সত্তে¡ও ১৮০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করেছেন এ জেলার কৃষকরা। 

হবিগঞ্জ জেলার কৃষকদের লক্ষ্যমাত্রাও প্রায় অর্জিত। ৭৯ হাজার ৯১ হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় তারা এরই মধ্যে প্রায় ৮৮ হাজার হেক্টর জমি আবাদ করেছেন। ৯১ হেক্টর হাইব্রিড, ৭৬ হাজার ৮শ উফশী এবং ২ হাজার ২০০ স্থানীয় জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা এ জেলায়। উফশী জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। 

সিলেট জেলায় মোট আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী ১ লাখ ৮৫০ হেক্টর, স্থানীয় ৩৭ হাজার ৮০০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী জাতের ধান আবাদের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে। ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৮ হেক্টর জমিতে। তবে, স্থানীয় জাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা আছে। 

সুনামগঞ্জে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৮১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী ৬৪ হাজার ৫২০ হেক্টর এবং স্থানীয় ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টরে। তবে, এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ জেলা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ২৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। 

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ দিলীপ কুমার অধিকারী জানান, এ বছর ভালো ফলনের আশা দেখছেন তারা। উফশী জাতের ২ দশমিক ৭৪ এবং স্থানীয় জাতের ১ দশমিক ৩৭ গড় ফলনে বিভাগে ১০ লাখ ১৮ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। আবাদ বেশি হলে উৎপাদনের পরিসংখ্যানও বাড়বে বলে জানান তিনি। 

তিনি বলেন, ‘সিলেট অঞ্চল বন্যাপ্রবণ এলাকা। অন্য বছরগুলোতে বন্যার কারণে ঠিকমতো আবাদ করা কঠিন হয়। এবার নিয়মিত বৃষ্টি থাকায় ও বন্যামুক্ত হওয়ায় কৃষকরা ভালোভাবে ধান রোপণের সুযোগ পেয়েছেন। পোকা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি না হলে এবার অনেক বেশি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, এ বছর আউশেরও আশানুরূপ উৎপাদন হয়েছে। যদিও, আউশ আবাদের সময় বৃষ্টিখরায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে ধান রোপণ হয়েছে। এবার সিলেট বিভাগে ১ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমি আবাদ হয়। এরই মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। 

আরসি-০১