প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা বিতরণ তালিকায় অনিয়ম

কুলাউড়া প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১
০৯:১৭ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১
০৯:১৭ অপরাহ্ন



প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা বিতরণ তালিকায় অনিয়ম
ক্ষুব্ধ মৌলভীবাজারের সাংবাদিকরা

করোনাকালে দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিকদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদান ও সাংবাদিক তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মৌলভীবাজার জেলা পর্যায়ে একই ব্যক্তি দুই পত্রিকার নামে দুইবার ও একই পত্রিকায় জেলা প্রতিনিধি ৩ জনের নাম লিখিয়ে ১০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এতে মফস্বল পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফায় জেলার ৪৯ জন গণমাধ্যমকর্মীকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তার চেক প্রদান করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। 

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আর্থিক সহায়তার তালিকায় জেলার কতিপয় সিনিয়র সাংবাদিক নেতাদের সিন্ডিকেট নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পছন্দের সাংবাদিকদের নাম দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, করোনাকালে অনেক সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করলেও তাদের নামের কোনো তালিকা নেই। অথচ পেশাদার সাংবাদিক নয়- এমন লোকও তালিকায় রয়েছেন।

মৌলভীবাজারে অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত বাংলার দিন ও মৌলভীবাজার বার্তার সম্পাদক বকশি ইকবাল আহমদের দুই পত্রিকার নামে ৮ জনকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তাপ্রাপ্তির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকেরই সাংবাদিক হিসেবে কোনো পরিচিতি নেই। পত্রিকা দু’টির স্টাফ রিপোর্টার, প্রধান প্রতিবেদক এসব নানা পদ ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তার টাকা নেওয়া হয়েছে। দৈনিক মৌমাছির কন্ঠ পত্রিকার পরিচয়েও যারা প্রকৃত সাংবাদিকতায় নেই, এমন ৩ জনের নামে টাকা প্রদান করা হয়েছে। সাপ্তাহিক পাতাকুঁড়ির দেশ পত্রিকারও অনুরূপ ২ জনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। সাংবাদিক তালিকায় রাখার জন্য এসব ব্যক্তিদের ব্যাপারে সুপারিশ করেন মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব, মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব ও জেলা সাংবাদিক ফোরামের নেতারা। এসব অনিয়ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে এবং মফস্বলের সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল মছব্বির বলেন, বিগত ৩১ বছর ধরে মফস্বলে সাংবাদিকতা করে এলেও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা পাইনি। জেলা পর্যায়ে অখ্যাত প্রতিনিধিদের নাম দিয়ে সিন্ডিকেট করে টাকা নেওয়া হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক।

কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও সাংবাদিক সমিতি কমলগঞ্জ ইউনিটের সভাপতি নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, তালিকায় অনিয়ম করা হয়েছে। প্রকৃত সাংবাদিকতায় নেই এমন ব্যক্তিরাও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। অথচ যারা করোনাকালে মাঠে-ঘাটে কর্মরত ছিলেন তাদের নাম নেই। এতে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক এই সহায়তা ম্লান হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আবেদন করার পরও কমলগঞ্জের সাংবাদিক আলমগীর হোসেন আজও আর্থিক সহায়তা পাননি। এটি মোটেও ঠিক হয়নি।

মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্ত সাংবাদিকদের বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের কোনো সদস্য ছাড়া আমরা কারও নাম সুপারিশ করিনি।

জেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি বকশি ইকবাল আহমদ বলেন, আমি আমার পত্রিকা ও সংগঠন থেকে কয়েকজনের ব্যাপারে সুপারিশ করেছি। 

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলার তথ্য কর্মকর্তা ও আর্থিক সহায়তা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি কিভাবে হয়েছে তা আমার জানা নেই। সম্পূর্ণ বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিক সংগঠনের দেখার কথা। স্ব স্ব সংগঠনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে আবেদন পাঠানো হয়েছে। 

বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম কবির বলেন, জেলা প্রশাসক ও প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সুপারিশ থাকায় আমরা অনুদানের চেক প্রদান করেছি।


জেএইচ/আরআর-০৫