ভাইয়ের দেওয়া কিডনিতে মিলল নতুন জীবন

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
০৯:৩৯ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
০৯:৩৯ অপরাহ্ন



ভাইয়ের দেওয়া কিডনিতে মিলল নতুন জীবন

বদরুল হোসেন ও ছয়ফুল হোসেন

ভাইকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিচ্ছেন ভাই কিংবা বোন- এমন দৃশ্য সিনেমাতে হরহামেশাই দেখা যায়। এবার বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখায়। নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে বড়ভাইকে নিজের একটি কিডনি দিয়েছেন ছয়ফুল হোসেন (২৮) নামের এক যুবক। এতে ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার বিরল এক দৃষ্টান্ত গড়ে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। আর ছোটভাইয়ের দেওয়া কিডনি পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছেন বড়ভাই বদরুল হোসেন (৩৩)।

গতকাল শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ছয়ফুল হোসেনের দেওয়া কিডনি বদরুল হোসেনের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে তারা দুজনেই সুস্থ রয়েছেন। তারা দুজন বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঠালতলী) ইউনিয়নের দক্ষিণ মুছেগুল গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে।

এদিকে, বদরুলের চিকিৎসার ব্যয়ভার সংগ্রহের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী। মাত্র দেড় মাসে তারা বদরুলের চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৭ লাখ টাকা বদরুলের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়েছে।

জানা গেছে, বদরুল হোসেন প্রায় ৮ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন। সেখানে তিনি একটি দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর হঠাৎ বদরুলের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। পরে তিনি চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে জানান, তার দুটি কিডনি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি বদরুল দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে তার কিডনি ডায়ালাইসিস শুরু হয়। এতেও বদরুলের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এ সময় চিকিৎসকরা তাকে জানান, বাঁচতে হলে অন্তত একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন ২৫ লাখ টাকা। এরই মধ্যে বদরুলের চিকিৎসার পেছনে সহায়-সম্বল যা ছিল তা ব্যয় করে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়ে তার পরিবার।

এ অবস্থায় বদরুল ও তার পরিবারে যেন অন্ধকার নেমে আসে। কারণ একদিকে ২৫ লাখ টাকা, অন্যদিকে দুশ্চিন্তা- একটি কিডনি কে দেবে বদরুলকে! এ অবস্থায় নিজের জীবনের কথা না ভেবে বড়ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেন বদরুলের ছোটভাই ছয়ফুল হোসেন। তিনি নিজের একটি কিডনি বদরুলকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বদরুলের কিডনির সঙ্গে ছয়ফুলের কিডনি মিলে যায়। বদরুলের চিকিৎসার জন্য অনেকটা আলো হয়ে পাশে দাঁড়ায় শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী। তারা তার চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। পাশাপাশি চলে ফেসবুকে প্রচার। হাত বাড়িয়ে দেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। ফলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়।

২০২০ সালের জুলাই মাসে বদরুলের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। কারণ এরই মধ্যে বদরুলের শরীরে বাসা বাঁধে প্রাণঘাতী হেপাটাইটিস-সি ও যক্ষ্মা রোগ। প্রায় ১৪ মাস পর সুস্থ হয়ে ওঠেন বদরুল। এরপর গত শুক্রবার ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ছয়ফুল হোসেনের দেওয়া কিডনি বদরুল হোসেনের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।

বদরুল ও ছয়ফুলের বড়ভাই শিক্ষক মিলাদ হোসেন আজ শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বলেন, আমার ছোটভাই ছয়ফুলের দেওয়া কিডনি বদরুলের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। তারা দুজনেই এখন সুস্থ রয়েছে। বদরুলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী'র পাশাপাশি সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছয়ফুল হক বলেন, বদরুলের চিকিৎসার জন্য প্রথমে ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন ছিল। আমরা তার চিকিৎসার্থে তহবিল গঠন করে টাকা সংগ্রহ শুরু করি। দেড় মাসে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা তহিবেল জমা হয়। বদরুল কয়েকমাস অসুস্থ থাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন করতে দেরি হয়েছে। তার চিকিৎসায় প্রায় ২৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর তার ছোটভাই ছয়ফুল তাকে একটি কিডনি দিয়েছেন। ছয়ফুল তার ভাই বদরুলকে কিডনি দিয়ে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।


এজে/আরআর-০৭