কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
জানুয়ারি ০৩, ২০২২
০৯:১৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০৩, ২০২২
০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
৫ম ধাপে আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ও স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জুনেল আহমদ তরফদার ও তার সমর্থকরা এমন অভিযোগ উঠেছে।
সংসদ সদস্য অক্ষত অবস্থায় থাকলেও দুই পক্ষের সংঘর্ষে সংসদ সদস্যের গানম্যান, ব্যক্তিগত একান্ত সহকারী (এপিএস), গাড়িচালকসহ ৯ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংসদ সদস্যকে নিরাপদে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত দুজনকে সিলেটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাটি গত রবিবার (২ জানুয়ারি) রাত ১০টায় কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজারে ঘটে।
এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ৩৫ জনকে আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়কুট গ্রামের রাসেল মিয়া (৩২) ও প্রতাপী গ্রামের ওয়াহিদ মিয়া (৩৭) কে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি গাড়ি বহর নিয়ে মুন্সীবাজার এলাকায় তাঁর ছোট ভাই নৌকার প্রার্থী ইফতেখার আহমদ বদরুল এর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সামনে পৌছান।
এ সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জুনেল আহমদ তরফদার (ঘোড়া প্রতীক) এর সমর্থকরা মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি উঠাতে থাকে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে স্থানীয় সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী ইমাম হোসেন সোহেল, গানম্যান তরিকুল ইসলাম, গাড়িচালক স্বপনসহ অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদের ছোট ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অপর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুনেল আহমেদ তরফদার।
গত রবিবার রাতে শমশেরনগর থেকে ব্যক্তিগত একটি অনুষ্ঠান শেষ করে মৌলভীবাজার ফেরার পথে মুন্সিবাজারস্থ নৌকার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে এলে এলাকাবাসীর অনুরোধে নৌকার প্রধান নির্বাচনী অফিসে এসে চা খাওয়ার সময় বিদ্রোহী প্রার্থী জুনেল আহমদ তরফদার তার সমর্থকদের নিয়ে নৌকার প্রধান নির্বাচনী অফিসে হঠাৎ আচরণবিধি ভঙ্গের কথা বলে অতর্কিতভাবে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়।
এ ঘটনার খবর পেয়ে সংসদ সদস্যের ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী ইফতেখার আহমেদ বদরুলসহ সমর্থকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসলে উভয় পক্ষের মাঝে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ থানা থেকে পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানার নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সাথে সাথে সাংসদকে উদ্ধার করে ও আহতদের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হামলার সময় অফিসের শাটার বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাইরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সময় সংসদ সদস্য অক্ষত অবস্থায় থাকলেও দুই পক্ষের সংঘর্ষে এমপির গানম্যান, গাড়ির চালক ও ব্যক্তিগত একান্তসহকারীসহ ৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। দুপক্ষের হামলার ঘটনায় এমপি আব্দুস শহীদের গানম্যান তরিকুল ইসলাম, গাড়িচালক স্বপন, ব্যক্তিগত একান্ত সহকারী ইমাম হোসেন সোহেল, শ্রীমঙ্গলের আওয়ামী লীগ নেতা খালেদ সাইফুলাহসহ ৫ জন আহত হন। তাদের একজনের মাথা ফেটে গেছে এবং একজনের হাত ভেঙে গেছে। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনেল আহমেদ তরফদারসহ ৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তারা দাবী করছেন। এর মধ্যে গুরুতর ৫ জন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল ও সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপিকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে গুরুতর আহত গানম্যান তরিকুল ইসলাম, গাড়িচালক স্বপন ও ব্যক্তিগত একান্ত সহকারী ইমাম হোসেন সোহেলকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ আহতদের দেখতে কমলগঞ্জ হাসপাতালে যান এবং রাত ১২টায় শ্রীমঙ্গলস্থ নিজ বাসায় চলে যান। এদিকে ঘটনার পর বিদ্রোহী প্রার্থী ও সমর্থকেরা বাজার এলাকা থেকে সরে যান।
কমলগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংসদ সদস্য অক্ষত আছেন তবে তার গানম্যান, এপিএস ও গাড়িচালক আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
মামলার বাদি ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল বলেন, বড় ভাই সংসদ সদস্য ইপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ একেবারে ব্যক্তিগত সফরে রবিবার সন্ধ্যা রাতে শমশেরনগরে তার এক ছাত্রের বাসায় এসেছিলেন। সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি সিদ্ধেশ্বরপুর হয়ে শ্রীমঙ্গল ফেরার পথে ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমতিয়াজ আহমেদের সাথে দেখা করতে আসেন। তাকে না পেয়ে তিনি তার অফিসে বসেন। এসময় প‚র্ব পরিকল্পিতভাবে ওৎ পেতে থাকা আওয়ামী বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জুনেল আহমেদ তরফদারের উপস্থিতিতে তার নির্দেশনায় এ হামলা চালানো হয়।
রহিমপুর ইউনিয়নের আওয়ামী বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জুনেল আহমেদ তরফদার বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে ছয় বারের নির্বাচিত আওয়ামীলীগের দলীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিলেন। বিক্ষুব্ধ লোকজন ক্ষোভে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি কোন হামলার নির্দেশও দেন নি ও হামলাও করেন নি।
এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থী ইফতেখার আহমেদ বদরুলের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট বড় ভাই ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল বাদী হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে আসামী করে সোমবার সকালে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ দুইজন আসামীকে আটক করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
উল্লেখ্য, ৫ম ধাপে আগামি ৫ জানুয়ারি কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৩, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০৬ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩২৭ জনসহ মোট ৪৬৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।
এস ডি/বি এন-০৭