দশ বছর পরও বিচারের অপেক্ষায় ফেলানির বাবা-মা

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ০৭, ২০২২
০৩:০৫ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০৭, ২০২২
০৩:০৫ অপরাহ্ন



দশ বছর পরও বিচারের অপেক্ষায় ফেলানির বাবা-মা

কুড়িগ্রামের ফেলানির কথা মনে আছে তো আপনাদের? ১১ বছর আগে ২০১১ সালে আজকের এই দিনেই কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানি খাতুন। মৃত্যুর পরেও প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা নিথর ফেলানি ঝুলে ছিলো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাঁটাতারে।

কিশোরী ফেলানি হত্যার সেই ঘটনা ১০ বছর পেরিয়ে ১১ বছরে পড়লো আজ। অথচ এতোদিন পর এসেও কণ্যার মৃত্যুর কাঙ্ক্ষিত রায় পায়নি তার বাবা-মা। বাবা নুরুল ইসলাম নুরু সন্তানের নিথর দেহ কাঁটাতারে ঝুলে থাকতে দেখেছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। মা জাহানারা বেগম এখনও আঁতকে ওঠেন প্রতিটা মুহুর্তে।

কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানির লাশের ছবি নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকার পর লাশটি সরিয়ে নেয় বিএসএফ। এরপর বিজিবি-বিএসএফ দুইদিনের পতাকা বৈঠকের পর প্রায় ৩০ ঘন্টা পর বিজিবির কাছে লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ। ময়নাতদন্ত শেষে ঐদিনই দাফন করা হয় কিশোরির লাশ।

নির্মম এই হত্যার ঘটনায় বিশ্ব গণমাধ্যমসহ অনেক মানবাধিকার সংগঠনের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারতীয় প্রশাসন আর বিএসএফ। পরে বিএসএফের বিশেষ কোর্টে দুই দফায় বিচারিক কার্য শেষে খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্ত আত্মস্বীকৃত আসামি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার।

আন্দোলনের মুখে বিচারকার্য শুরু হলেও দফায় দফায় পিছিয়েছে বিচারের তারিখ। শেষ পর্যন্ত এই ১১ বছরে এসে এখনও নিজের সন্তান হারানোর বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন ফেলানির মা জাহানারা বেগম।

লানি হত্যার প্রায় আড়াই বছর পর ২০১৩ সালের অগাস্টে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শুরু করা হয় ভারতের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস আদালতে। বিএসএফের এই আদালতের বিচারে খালাস দেয়া হয় বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষকে। রায় প্রত্যাখান করে ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে পুনরায় বিচারের দাবি জানান ফেলানির বাবা নুরুল ইসলাম নুরু। পরেরবার এই বিচার প্রক্রিয়াতেও খালাস পান আসামি।

ফেলানির বাবার সহায়তায় এবার এগিয়ে আসেন ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)। ফেলানির বাবার পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন করে এই সংস্থা। দফায় দফায় তারিখ পরিবর্তন করা হলেও আজও সেই মামলার বিচারকার্য রয়ে গেছে অসমাপ্তই। সর্বশেষ গেলো বছর ১৮ মার্চ শুনানির তারিখ ধার্য করা থাকলেও পিছিয়ে দেয়া হয় সেই দিনও।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও গ্রামে। ২০১১ সালে ফেলানির বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। সেইজন্যই ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করেন নুরুল ইসলাম। অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে পার হওয়ার সময় হঠাৎ গুলির শব্দ আর মেয়ের আর্তনাদেি বুঝতে পারেন তাদের উদ্দেশ্য করেই গুলি ছুড়ছেন বিএসএফ। নিজে আহত হন আর নিজের মেয়েকে কাঁটাতারে ঝুলে তিলে তিলে মারা যেতে দেখেন বাবা নুরুল ইসলাম।

ফেলানির বাবা নূরুল ইসলাম জানান, ২ বার কুচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের নৃশংসতার বর্ণনাও দিয়েছি। তারপরও ন্যায্য বিচার পাইনি। ন্যায্য বিচার পাওয়ার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেছি। শুনানি হচ্ছে না। তারপরও আশা ছাড়িনি। প্রতীক্ষায় আছি। যত দিন ন্যায্য বিচার পাব না, তত দিন বিচার চাইতেই থাকব।

ফেলানি হত্যা মামলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস. এম. আব্রাহাম লিংকন বলেন, একের পর এক তারিখ পরিবর্তনের পর ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রামানা ও বিচারপতি মোহন এম সান্তনা গৌদ্ধারকে নিয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য আইটেম নম্বর-৩ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত অসমাপ্তই রয়ে ঘেছে বিচারকার্য।

ফেলানি হত্যার এই বিচারকাজ বিএসএফ এর বিশেষ আদালতের পরিবর্তে ভারতের সিভিল আদালতে হওয়া উচিত ছিল বলেও জানান অ্যাডভোকেট লিংকন।

আরসি-১১