কুলাউড়ার জহিরুলের বদলে চাকরি করছেন কুমিল্লার জহিরুল

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ০৮, ২০২২
০৭:১৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০৮, ২০২২
০৭:১৪ অপরাহ্ন



কুলাউড়ার জহিরুলের বদলে চাকরি করছেন কুমিল্লার জহিরুল

জহিরুল ইসলামের বয়স এখন ৩৮। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়পাশা গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল সবার কাছে এশু নামেই পরিচিত। মাত্র ২০ বছর (২০০৩ সালের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি) বয়সে কারারক্ষী পদে নিয়োগ পেতে পরীক্ষা দেন জহিরুল। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শারীরিক ফিটনেস এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে নিয়োগের বিষয়ে কুলাউড়া থানা থেকে অধিকতর তদন্ত করা হয়। এ পর্যন্ত গল্প শেষ। ওই চাকরির যোগদানপত্র আর পৌঁছায়নি জহিরুলের কাছে।

এদিকে, জহিরুল চাকরির আশা ছেড়ে দিয়েছেন। চাকরির বয়সও একদিন শেষ হয়ে গেছে। এরপর স্থানীয় বাজারে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এখন তাই দিয়েই চলছিল সংসার। এরমধ্যেই সেই কাউন্সিলরের কাছে আসা একটি চিঠিতে ভেসে উঠল 'পুরনো কাঁসুন্দি'।

৮ ডিসেম্বর কুলাউড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম খাঁন খছরুর কাছে একটি চিঠি আসে। সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে আসা ওই চিঠি থেকে যায়, জহিরুল ইসলাম এশু একজন সরকারি চাকরিজীবী। কারারক্ষী হিসেবে তার চাকরি হয়েছে ১৮ বছর আগে। তার ক্রমিক নম্বর ২২০১৪।

জহিরুল ইসলাম এশু কুলাউড়া পৌর শহরের জয়পাশা এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে তিনি জয়চন্ডী ইউনিয়নের কামারকান্দি এলাকায় বসবাস করছেন।

এদিকে, কুমিল্লার জহিরুল ইসলাম নামে একজন নামপরিচয় ব্যবহার করে কুলাউড়ার জহিরুল খাঁন এশু'র চাকরি করছেন বলে দাবি তার। তিনি এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে কর্মরত রয়েছেন। বিষয় নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জহিরুল ইসলাম নামে একজন ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে কর্মরত আছেন। তবে প্রকৃত জহিরুল কে সেটি তদন্তের পর জানা যাবে।'

কাউন্সিলর খছরু চিঠিটি পেয়ে একটি প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে জহিরুল ইসলাম এশুকে জানান। প্রত্যয়নপত্রটি পেয়ে এশু কারারক্ষী পদে চাকরি করেন না এবং তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কে চাকরি করছেন এই বিষয়টি জানিয়ে ২৬ ডিসেম্বর কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য ২২ ডিসেম্বর সিলেটের ডিআইজি’র সঙ্গে দেখা মৌখিক আবেদন এবং ৩ জানুয়ারি সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন জহিরুল।

বিষয়টি জানাজানি হলে তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্যরা হলেন, খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার এজি মাহমুদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন।

জহিরুল ইসলাম পরিচয়ধারী বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে কর্মরত রয়েছেন। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমার বাড়ি কুমিল্লায়। কিন্তু কুলাউড়ার ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সিলেট ডিআইজি প্রিজনকে আমার সকল কাগজাদি জমা দিয়েছি। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন।'

ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম খাঁন এশু বলেন, 'রহস্যজনক কারণে আমার যোগদানপত্র না আসায় আমি চাকরিতে যোগদান করতে পারিনি। যখন আমার কাছে পৌরসভা থেকে চিঠি আসে তখন আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারি। এখন আমি আমার সেই চাকরি ফিরে পেতে চাই।' 

তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার এজি মাহমুদ মুঠোফোনে বলেন, 'বিষয়টি তদন্তনাধীন আছে। জহিরুল ইসলাম নামে যে ব্যক্তি চাকরি করছেন তার প্রকৃত নাম ও ঠিকানা সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। যদি একি নামে দুজন হয় তাহলে তদন্ত করে প্রকৃত ব্যক্তি যাতে চাকরি পান আমরা সেটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।'

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান সিলেট কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামাল হোসেন বলেন, 'বিষয়টি তদন্তনাধীন আছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।'

সূত্র: কালের কণ্ঠ

আরসি-১৩