ভোজ্যতেলের দাম কমেছে লিটারে ৫৩ টাকা

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ১৯, ২০২২
০৮:১২ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৯, ২০২২
০৯:৫৫ অপরাহ্ন



ভোজ্যতেলের দাম কমেছে লিটারে ৫৩ টাকা
বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও দেশের খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা

দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫৩ টাকা কমে গেছে। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দরপতনের জেরে গত ১৫-২০ দিনে মণ প্রতি প্রায় ২ হাজার টাকা হ্রাস পেয়েছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে।

খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের শীর্ষ পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। -খবর বাসস

খাতুনগঞ্জের অন্যতম শীর্ষ পাইকারি ব্যবসায়ী আলমগীর পারভেজ মঙ্গলবার দুপুরে বাসস'কে বলেন, ‘সরকার প্রতি লিটারে ১৪ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতিদিন ভোজ্যতেলের দাম কমছে। গত ১৫ থেকে ২০ দিনের ব্যবধানে পাম অয়েল মণ প্রতি  ২ হাজার টাকা গেছে। সয়াবিন তেল কমেছে ১ হাজার টাকার বেশি।’

পাইকারি বাজারে প্রতিমণ ৪০ কেজির পরিবর্তে হিসাব করা হয় ৩৭ দশমিক ৩২ কেজি হিসাবে।

তিনি জানান, দরপতনের এ ধারায় তেলের দাম আরও কমবে। নতুন এলসির তেল এলে সপ্তাহ দিনের মধ্যে তেলের দাম মণপ্রতি আরও ৫-৬ শত টাকা কমে যাবে।

তবে, পাইকারি বাজারের এ দরপতনের প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি। খুচরা ব্যবসায়ীরা এখনও বর্ধিত দামে তেল বিক্রি করছেন। ফলে, তেলের মূল্যহ্রাসের ইতিবাচক প্রভাব সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছেনি।

এদিকে, চাক্তাই-খাতুগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাসস’কে বলেন, ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। এক মাস আগে প্রতিমণ পাম অয়েল ৬ হাজার ৩ শ টাকায় বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ, পাম অয়েল প্রতিমণে দুই হাজার টাকার মতো কমে গেছে। আমাদের এই মার্কেটে প্রতিটি আমদানি পণ্য সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেচাকেনা হয়। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে যখন বেড়েছিল তখন আমাদের এখানেও দাম বেড়ে যায়। আবার দরপতন শুরু হওয়ায় আমাদের পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়- খুচরা বাজারে এখনও বর্ধিত মূল্য বহাল আছে। খুব কম খুচরা ব্যবসায়ী থাকবেন যারা কোরবানির আগে কেনা তেল এখনও বিক্রি করছেন। কোরবানির পরে যারা তেল তুলেছেন তারা নিশ্চয় অনেক কম দামে কিনেছেন। বিভিন্ন কৌশলে চড়া দামে বিক্রি করে অযৌক্তিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।’

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‌'বিশ্ববাজারে যখন ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যায়, তখন ব্যবসায়ীরা কারও সঙ্গে আলাপ না করেই দাম বাড়িয়ে দেন। কিন্তু, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ভোজ্যতেলের দাম পড়ে গেল তখন তারা ন্যায্যতার ভিত্তিতে দাম কমাননি।'

ক্যাবের তথ্যমতে, গত রমজানের ঈদের পর ৫ মে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সরকার পুনঃনির্ধারণ করেছিল। সে সময় সয়াবিনের দাম লিটার প্রতি ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এরপর গত ৯ জুন মিল পর্যায়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৮০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ টাকা ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক লিটারের খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫৮ টাকা করা হয়। এক্ষেত্রে সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটার প্রতি ৫-৭ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ২০০ থেকে ৪৯০ ডলার। অথচ ব্যবসায়ীরা এক মাসে দু’দফায় প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম বাড়িয়েছেন ৫১ টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিল ১৩৮৫ ডলার। চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৯৫৬ ডলার।

বিশ্বব্যাংকের ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ১৮ জুলাই পাম অয়েলের দাম কমে প্রতিটন বিক্রি হয়েছে ৮৬৬ ডলার ৭৫ সেন্ট, যা গত মে মাসে ছিল ১৭১৬ ডলার। সে হিসাবে, পাম তেলের দাম কমেছে সাড়ে ৪৯ শতাংশ। সয়াবিন তেলের দাম একইদিনে কমে হয়েছে ১৩২৪ ডলার ৫৪ সেন্ট। সে হিসাবে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ৩২ শতাংশ।

এসএইচ/০৩