জুড়িতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

জুড়ী প্রতিনিধি


অক্টোবর ০২, ২০২২
০৮:৩১ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০২, ২০২২
০৮:৩১ অপরাহ্ন



জুড়িতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলন শিরিন আক্তার।

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুক আহমদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁর স্ত্রী শিরিন আক্তার।

আজ রবিবার (২ অক্টোবর ) দুপুরে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

শিরিন আক্তার জুড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক  সম্পাদক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে মো. মাসুক আহমদের স্ত্রী। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, আমি পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। গতকাল শনিবার আমার স্বামী মাসুক আহমদ একটি সংবাদ সম্মেলনে আমাকে নিয়ে অনেক কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান, মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেন। এ বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমন অমানবিক, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগসমুহ শুনে আমি স্থির থাকতে পারিনি। আমার মনে হয়েছে গণমাধ্যমে এ বিষয়গুলোর আসল সত্যতা প্রকাশ করা দরকার।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মাসুক আহমদের সঙ্গে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাকে একজন ভালো স্বামী হিসেবেই পাই। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে আমাদের মেয়ের জন্ম হয়। এরপর থেকে বিভিন্নভাবে আমার স্বামীর চরিত্রের ওপর দিক দেখতে পাই। মেয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘদিন আমি মুখ বুঝে এসব সহ্য করে এসেছি। আমার বক্তব্যের শেষের দিকে এ নিয়ে কিছু বিষয় আপনাদের অবহিত করব। এ পর্যায়ে তার করা অভিযোগ সমুহের বিষয়ে আমি বলতে চাই।      

নিজের উপর উত্থাপিত অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন, আমার স্বামী অভিযোগ করেছেন,আমার বাবার বাড়ীতে বসার জায়গা পর্যন্ত না থাকায় তার টাকায় আমার বাবার বাড়ীতে দালান করে দিয়েছেন। আসবাবপত্র কিনে দিয়েছেন এবং পাঁচ শতক জমি কিনে দিয়েছেন। এ অভিযোগটি সম্পুর্ণ মিথ্যা।‌ আমার পিতা দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর কফিল থেকে ৩০ লাখ টাকা আমাদেরকে প্রদান করা হয়। তখন আমাদের পরিবারের অভিভাবক হিসেবে আমার স্বামী মাসুক আহমেদের হাতে এই টাকা তুলে দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে আমাদের বাড়ি কুলাউড়ার আমতৈলে একটি গৃহ নির্মাণ করা হয়। আমার নিজের জমানো ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ৫ শতক জমি আমি নিজে ক্রয় করেছি।

আমি একটি সম্ভ্রান্ত ও সচ্ছল পরিবারের সন্তান। আমার বিয়ের পর আমার পরিবারের ভরনপোষণ, ভাই-বোন সকলের লেখাপড়ার খরচ, বোনদের বিবাহে টাকা খরচ ও ভাই বিদেশ যাবার সময় নগদ টাকা দিয়ে সাহায্যের যে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট । সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন আমার ভাইকে চা বাগানে চাকুরী দিয়েছেন। বাগানে খোঁজ নিয়ে দেখুন আমার ভাই মাস্টার্স পাশ করে তার নিজের যোগ্যতায় চাকরি নিয়েছে।

তিনি (মাসুক আহমদ) আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তার দেওয়া স্বর্নালংকার আমি গোপনে বিক্রি করে টাকা লুট করে নিয়েছি। সত্য ঘটনা হলো ‌গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় তিনি অনেক টাকা ঋণগ্রস্থ ছিলেন। আমি আমার ব্যবহৃত সাড়ে নয় ভরি স্বর্ণ বিক্রির টাকাসহ মোট ১৫ লাখ টাকা তার (মাসুক আহমদ)  হাতে তুলে দিয়েছি। এছাড়াও তিনি অনুরোধ করলে আমি কুলাউড়ার কুকিল কন্ট্রাক্টর এর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা, জুড়ীর প্রবাসী রুহুল আমিনের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ও বাচ্চু কনট্রাক্টর থেকে ৬ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ঋণ এনে দেই। যাতে তিনি নির্বাচন ও ঋন পরিশোধ করতে পারেন।

মাসুক আহমদ আমাকে পরকীয়ায় জড়িত অভিযোগ করলেও তিনিই প্রকৃতপক্ষে একজন নারী লোভী মানুষ। তার নারী আসক্তির কারণেই আমি ঘর ছেড়েছি। তার যৌন অত্যাচারে বাসায় কোন কাজের মেয়ে টিকতে পারে না। তাছাড়াও জুড়ীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য কক্সবাজার যান। ‌ ওই সময় তার সঙ্গে জুড়ীর আরও ১৫-২০ জন ছিলেন। জুড়ীর এত লোক থাকা সত্ত্বেও আমোদ ফুর্তি করার জন্য তিনি ওই সফরে শ্রীমঙ্গল থেকে একজন মক্ষীরানীকে সঙ্গে নিয়ে যান।‌ এই বিষয়টি আমি জানার পর প্রতিবাদ করলে আমাকে মারধর করেন এবং তালাক দেওয়ার হুমকি দেন। ফুলতলার এক ব্যক্তির স্ত্রীর উপর মাসুক আহমেদের কুদৃষ্টি পড়ায় তাকে স্বামীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনে জুড়ী শহরের একটি বাসায় প্রায় দুই মাস রাখেন। সেখানে তিনি দুই মাস নিয়মিত যাতায়াত করেন এবং ভরণপোষণ দেন। ‌ আমি ঘটনাটি জানার পর প্রতিবাদ করলে তিনি আমাকে মারধর করেন। পরে আমি জায়ফরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী মাসুম রেজার সহযোগিতা ওই মহিলাকে জুড়ী থেকে মুন্সিবাজার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে পেশাদার যৌনকর্মীদের বাসায় এনে নাচের আসর, মদের আসর করতেন এবং তার বিকৃ্ত যৌন চাহিদা চরিতার্থ করতেন। নাচ গানের শব্দে পার্শ্বস্ত মসজিদ-মাদরাসাসহ আশপাশের লোকজনের সমস্যা হত। তারা অভিযোগ করলেও তিনি কর্ণপাত করতেন না। আমি এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমাকে মারধর করতেন। আপনারা তার প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ নিলে এর সত্যতা জানতে পারবেন। ফুলতলার বিরইনতলা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা দুই সন্তানের জননীকে আমার বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। তার সঙ্গে মাসুক আহমদ অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে প্রায়ই তার সঙ্গে আমার ঝগড়া হতো। এক পর্যায়ে রাগ করে আমি পিত্রালয় চলে গেলে তিনি কাজের মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেন। আমার একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কাজের মেয়েকে বিয়ে করার পরও আমি মাসুক আহমদের বাসায় গিয়ে ১৪ দিন থাকি। ভরণপোষণ দিয়ে ওই মেয়েকে আলাদা বাসায় সরিয়ে দেয়ার কথা বললে তিনি আমার কাছে ২০ লাখ টাকা‌ দাবী করে বলেন, টাকা না দিলে তাকে বাসা থেকে সরানো যাবে না। ‌

এইসব কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি আমাকে মারধর করে হত্যা করতে চাইলে আমি  আমি ৯৯৯ কল দেই। পরে জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী বাসায় এসে আমাকে উদ্ধার করে পিত্রালয়ে পাঠান। এই ঘটনার পর আমি নিরূপায় হয়ে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে গত ৩০ জুন একটি মামলা দায়ের করি। তখন আদালত ওইদিনই মাসুক আহমদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী করলে, পরদিন আপোসের শর্তে তিনি আদালত থেকে জামিন নেন। পরবর্তীতে আদালতে হাজির না হওয়া এবং জামিনের শর্তগুলো ভঙ্গ করায় আদালত আবার তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর দুইদিন পর আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে  বিষয়টি আপোস মীমাংসা করার সময় দেন, অন্যথায় আদালত আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

আদালতের এমন আদেশের পর তিনি (মাসুক আহমদ) ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকেন। মামলা প্রত্যাহার না করলে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের তিনি বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। আমার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করতে তিনি উঠে পড়ে লেগেছেন। আপনারা জানেন তিনি একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তি। এমতাবস্থায় আমি, আমার মেয়ে ও আমার পরিবারের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অদ্যাবধি আমি বিচার ব্যাবস্থার উপরে আস্থা রেখে আছি। আশা করি আদালতে আমি ন্যায় বিচার পাব।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুক আহমদ বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।  আমার বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।


এইচআরকে-০১/এএফ-০২