ভারতীয় দলে মিয়াভাইয়ের উত্থানের গল্প

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ১১, ২০২৩
০৫:২১ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১১, ২০২৩
০৫:২১ অপরাহ্ন



ভারতীয় দলে মিয়াভাইয়ের উত্থানের গল্প
মোহাম্মদ সিরাজ


খেলা ছেড়ে অটো চালাও, তাতে অন্তত পেটটা চলবে- এমন আহাজারি কম করে হলেও হাজারবার শুনেছেন মোহাম্মদ সিরাজ। বাসায় এসে কখনও দেখেছেন খাবার নেই। কখনও অটোচালক বাবার দেওয়া হাতখরচের ৭০ টাকার সবটাই গেছে গাড়িভাড়ায়। কিন্তু থেমে যাননি।

দারিদ্র্যের বিপক্ষে লড়েছেন, করেছেন বাবার স্বপ্ন পূরণ। এখন সিরাজে স্বপ্ন দেখছে পুরো ভারত। বিরাট কোহলির আদরের মিয়াঁভাইয়ের উত্থানের গল্পটি যদিও মসৃণ ছিল না। কণ্টকময় সেই গল্পে ছিল আশা, ছিল দুঃখ আর অপরিসীম ভালোবাসা এবং হার না মানা মনোভাব!

রাজ্য পর্যায় থেকে আইপিএল, এরপর জাতীয় দল, এখন ভারতের পেস আক্রমণের মূল অস্ত্র- গৎবাঁধা সিরাজের একাধারে লড়তে হয়েছে নিজের সঙ্গে, দলের শক্তিশালী সব সতীর্থের সঙ্গে। শান দিতে হয়েছে বোলিংয়ে, রাখতে হয়েছে দলের মান। আনকোরা সিরাজ তাতেই বনে গেছেন সেরা পেসারদের একজন। আইসিসির র‌্যাংকিংয়ে এখন এক নম্বর বোলারও তিনি। অথচ কিছুই ছিল না যেন সিরাজের।

ছিল শুধু বুক ভরা আশা, বাবার দেওয়া সাহস আর কঠোর পরিশ্রম। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ভক্ত সিরাজ নিজেকে ছাপিয়ে গেছেন দিনকে দিনে। কিচ্ছু না থেকে হয়েছেন অনেক কিছু! তাইতো ভারতের যখন খুব প্রয়োজন তখন সিরাজের ডাক পড়ে। বল হাতে আগ্রাসন দেখান। এরপর রোনালদোর মতো দুই হাত উঁচিয়ে সাঁই করে নিচে নামান, ‘সিউউ...’

সিরাজরা হার মানেন না। সেটির প্রমাণ বহুবার দিয়েছেন হায়দরাবাদের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলেটি। ২৯ বর্ষী পেসারের জীবনে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি ছিলেন তার বাবা মোহাম্মদ গাউস। কিন্তু অটোচালক বাবা ছেলের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। ২০১৭ সালে আইপিএল নিলামে যখন সিরাজ হইচই ফেলে দিলেন তখন তার বাবা অসুস্থ। ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ থেকে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে নাম লেখালেন দুই কোটি ৬০ লাখ রুপিতে।

সেই সময় সিরাজ দরদভরা গলায় বলেছিলেন, ‘বাবাকে এই বয়সে আর রিকশা চালাতে হবে না।’ মায়ের বিশাল বাড়ি করার স্বপ্নটাও পূরণ করতে পারব। সব হয়েছে সিরাজের। জায়গা বেড়েছে, মা শাবানার স্বপ্নের বড় বাড়িও উঠেছে, সিরাজ কিনেছেন পছন্দের বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ। কিন্তু আক্ষেপ সরছে না, বাবা দেখে যেতে পারেননি সাফল্য। 

২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট দলে ডাক পান সিরাজ। তখনও অভিষেক হয়নি। সিরিজ শুরুর আগেই জানতে পারেন প্রিয় মেন্টর বাবা আর নেই। দলের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং বাবার স্বপ্ন পূরণের তীব্র ইচ্ছার কারণে দেশে ফেরেননি। সফরে তারকা পেসারদের ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টেই মূল পেসারের ভূমিকায় নামেন।

অজিদের মাটিতে সিরাজের দাপটে সিরিজও জেতে ভারত। প্রথমবার ইনিংসে পাঁচ উইকেটের সাফল্য নিয়ে দেশে ফিরে সোজা বাবার কবর জেয়ারতে যান সিরাজ। বাবার পাশে গিয়ে বসেন, কথাও হয় তাদের। হয়তো মনে মনে বলছিলেন, বাবা তোমার স্বপ্ন পূরণ করেছি। আক্ষেপ নিয়ে সিরাজ সেদিন বলেছিলেন, ‘বাবার স্বপ্ন ছিল তার ছেলের খেলা সারা বিশ্ব দেখবে। তিনি বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।’

ক্রিকেটের সরঞ্জাম কিনতে হিমশিম খাওয়া সিরাজ এখন কোটি টাকার মালিক। এসিসি ও শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড কলম্বো এবং ক্যান্ডির কিউরেটর ও মাঠকর্মীদের ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার দিতেও কার্পণ্য করেন না। অথচ বাবার দেওয়া ৭০ টাকার মাঝে ১০ টাকা বাঁচাতে পারতেন কিছু কিনে খাবার জন্য। সেই সিরাজ এখনও শুধু বোলিং বৈচিত্র্য এনে নন, নিজের আদর্শেও ছাপিয়ে যাচ্ছেন।

দুর্দান্ত গতি আর দারুণ সব ইয়র্কারে সিরাজ ভাসেন উল্লাসে, তার আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় শত কোটি মানুষ। এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেট নিয়ে সিরাজ দেখিয়েছেন বোলিং ধার। বিশ্বকাপে ভারতকেও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। বাবার জন্য হলেও বিশ্বকাপে নিজের মান রাখতে চাইবেন, মিয়াভাইয়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস বিরাট কোহলিদের। সিরাজ নিশ্চয়ই হতাশ করবেন না!


এএফ/০৮