ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে টিনের চালে, একই পরিবারের নিহত ৫

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ২৬, ২০২৪
০২:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৬, ২০২৪
০২:১৩ অপরাহ্ন



ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে টিনের চালে, একই পরিবারের নিহত ৫


মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে ঝড়ের সময় বিদ্যুতের তার ছিড়ে টিনের চালের উপর পড়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচ জন নিহত হয়েছেন।  এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোরে উপজেলার পূর্ব গোয়ালবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ এক শিশুকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসার  জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন গ্রামের ফয়জুর রহমান (৫০), তার স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), মেয়ে সামিয়া বেগম (১৫) ও সাবিনা আক্তার (৯) এবং ছেলে সায়েম উদ্দিন (৭)। দগ্ধ অবস্থায় আরেক মেয়ে সোনিয়া বেগমকে (১২) সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে ওই এলাকায় ঝড় ও বাতাস বইতে শুরু করে। এ সময় বিদ্যুৎ ছিল না। এর মধ্যে কোনো একসময় পেশায় ঠেলাচালক ফয়জুর রহমানের বসতঘরের  ছাউনির টিনের উপর ৩ হাজার ৩০০ কেভির হাই ভোল্টের পল্লী বিদ্যুতের একটি তার ছিড়ে পড়ে। সেহরীর পর সাড়ে ৪টার দিকে বিদ্যুৎ আসলে তাদের ঘরে বিদ্যুতায়িত হয়ে সবাই পুড়ে মারা যায়।

পরে স্থানীয়রা  খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস খবর দিলে তাদের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে ও ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে। পরিবারের সদস্য শিশুকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী মাছুম বলেন, দিনমজুর ঠেলাচালক ফয়জুল রহমান বোবা এবং শ্রবন প্রতিবন্ধী। খুবই সহজ সরল মানুষ ছিলেন।

তাদের পরিবার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা বর্তমানে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে  বসবাস করেন।এলাকার সবাই তাদের পরিবারের এই করুন মৃত্যুতে শোকাহত।

ওই ঘটনার পর সেখানে গিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজন মারা গেছেন। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।’

আজ সকাল নয়টার দিকে গিয়ে দেখা যায়,  বাড়িতে লোকজনের ভিড়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনেরাও ছুটে এসেছেন। লাশের পাশে বসে তাঁরা কান্নাকাটি করছেন। ঘরের ভেতর বিদ্যুতের তার, মিটার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খাটের লেপ-তোশকও পুড়ে গেছে।

ফয়জুর রহমানের ঘরের পাশ ঘেঁষে পূর্ব ভাঙারপার জামে মসজিদ। ওই মসজিদের দারুল ক্বিরাতের শিক্ষক আনোয়ার আশরাফ সিদ্দিকী বললেন, সকাল পৌনে ছয়টার দিকে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ফজরের নামাজ পড়ার পর তিনি বিদ্যুৎ লাইনের একটি খুঁটিতে আগুন জ্বলতে দেখতে পান। তিনিসহ অন্য মুসল্লিরা পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার চেষ্টা করেন।

আনোয়ার আশরাফ সিদ্দিকী আরও বলেন, এরপর তারা ফয়জুরের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, ভেতর থেকে টিনের দরজা লাগানো। ডাকাডাকি করেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ মিলছিল না। পরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকেন। একজনের ওপর আরেকজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। দ্রুত তারা ফায়ার সার্ভিস, সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ ও জুড়ী থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানান। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে এলাকাবাসীর সহায়তায় লাশ বের করে আনেন। দগ্ধ সোনিয়াকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ওই ঘটনার পর পবিসের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সারোআর আলম, জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং প্রমুখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণত কোনো ঘরের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানা হয় না। লাইন স্থাপনের পর ঘরটি তৈরি করা হয়েছিল। এখন লাইনটি সরানো হবে। দগ্ধ শিশুর চিকিৎসার বিষয়ে তাঁরা সহযোগিতা করবেন।


এএফ/০৩ি