ঘুর্ণিঝড়ে শান্তিগঞ্জ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, মাটিতে মিশেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি

সোহেল তালুকদার, শান্তিগঞ্জ


এপ্রিল ০১, ২০২৪
০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০১, ২০২৪
০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন



ঘুর্ণিঝড়ে শান্তিগঞ্জ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, মাটিতে মিশেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি


◾ শিশু ও নারীসহ আহত শত শত মানুষ
◾ হাজারো মানুষোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড়ে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা সবকটি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘরবাড়ি, যানবাহন, দোকানপাট, গাছ-গাছালির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বড় বড় গাছ। বিদ্যুতের তারে পেঁচিয়ে আছে রাস্তা, ঘরবাড়িসহ মহাসড়ক। এতে বন্ধ রয়েছে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কসহ চলাচল উপযোগী প্রায় সবক’টি সড়ক। আহত হয়েছেন অনেক নারী, পুরুষ ও শিশু।

রবিবার (৩১ মার্চ) দিবাগত রাত ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। ১০ মিনিট পর এই বাতাস রূপ নেয় প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড়ে। চলে ১১টা পর্যন্ত। মাত্র ১০ মিনিটের এই ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড়ে তছনছ করে দেয় সব কিছু। নিঃস্ব করে দেয় শত শত মানুষকে। এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত বিদ্যুত চমকাচ্ছিলো। হচ্ছিলো ভারী বৃষ্টিপাত। বজ্রপাত ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা দোকানপাটের মালামাল সামলাচ্ছেন। অন্ধকারে খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিজের ঘরের চাল।

ঘুর্ণিঝড়ের পর রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলার শান্তিগঞ্জ বাজার, পাগলা বাজার, পাগলা রায়পুর, কান্দিগাঁও, আস্তমা, কামরূপদলং এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কারো ঘরের চাল নেই, কারো আবার ঘরই নেই। কারো ঘরের চাল ভয়ঙ্করভাবে আটকে আছে বৈদ্যুতিক খুঁটির আগায়। শত শত ঘরের টিন রাস্তা ঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দোকানপাটের মালামালের খুঁজ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের একাধিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে রাস্তায়। গাছের বড় বড় ডালও ভেঙে পড়েছে। বসত ঘর ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে। আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ। কারো হাত কাটা, কারো মাথা ফাটা, কারো পা কাটা। সকলেই স্থানীয় ফার্মেসি ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাচ্ছেন চিকিৎসা নিতে। এদিকে, চলাচলের রাস্তা বন্ধ থাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে আটকা পড়েছে অসংখ্য দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যানবাহন। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুত সরবরাহ।  উপজেলার সকল ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে একই দৃশ্যের খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই সেহরি খাওয়ার মতো অবস্থা নেই। আর ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় হতদরিদ্রদের সংখ্যা খুব বেশি। তাদের মাথাগুঁজার ঠাঁই নষ্ট হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে এসব মানুষকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করতে হবে। প্রবাসী ও মানবিক মানুষরা তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। না হলে এসব মানুষ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। 

রায়পুর পুরানবাড়ির হোসেন মিয়া বলেন, আমার সব শেষ। একমাত্র আশ্রয়স্থল ঘরটি পড়ে গেছে। আমার সব শেষ। আমার পাশের আরো দুটি ঘরও মাটির সাথে মিশে গেছে। একই গ্রামের সত্তোরোর্ধ মালিকুন বেগম। তার ঘরের চালের টিন পড়ে হাত কেটে ৭টি সেলাই লেগেছে। 

পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী আমজদ আলী, ব্রয়লার মোরগের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন ও ইফতারির দোকানদার লিটন মিয়া বলেন, আমাদের জীবনেও এমন ঘুর্ণিঝড় দেখিনি। সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। আমাদের ব্যবসার ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। কিচ্ছু বলার নেই।

সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে যাবেন পৌরশহরের বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম ও ইমরাস হোসেন। তারা বলেন, আমরা সিলেট থেকে পাগলায় আটকা পড়েছি। জানিনা কবে যেতে পারবো। এমন ঝড় জীবনেও দেখিনি।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, আমি তখন পাগলা বাজারে ছিলাম৷ একটি দোকানের চালের টিন উপড়ে এসে আমার হাতে পড়েছে। সামান্য আহত হয়েছি। তবু আমি ও ইউএনও সাহেব মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ক্লিয়ার করা জন্য কাজ করছি। পাগলা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সি বিভাগ খোলা রেখেছি। পরে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে কাজ করবো৷ জেলা পরিষদ, প্রশাসনকে জানাবো।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, এখন রাত ১টা বাজে। রাস্তায় পড়ে থাকা গাছপালা সরিয়ে দিচ্ছি। হাসপাতালগুলো খোলা রেখেছি। ইতোমধ্যে ডিসি স্যারকে জানিয়েছি। উপর মহলে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে আমাদের। ##



এএফ/০২