সিলেট মিরর ডেস্ক
জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
০৭:০৩ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
০৭:০৩ অপরাহ্ন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মো. জহুর আলী (৩০)। এর এক মাস পর তার বড় ভাই হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে করেন মামলা।
সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন সাবেক পরিকল্পনামমন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মুহিবুর রহমান মানিকসহ ১১৯ জন। এছাড়া কারাগারে রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাদের বখতসহ বেশ কয়েকজন।
মামলার প্রায় চার মাস পর এসে তা আর চালাতে চাইছেন না বাদী হাফিজ আহমেদ। আহত ভাই জহুর মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার আদালতে উপস্থিত হয়ে আপসনামা দাখিল করেছেন তিনি।
সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ হাকিম নির্জন কুমার মিত্র আপসনামা নথিতে রেখে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করার আদেশ দিয়েছেন।
২ সেপ্টেম্বর হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে যে মামলা করেছিলেন তাতে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুটসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। মামলার দুই নাম্বার আসামি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান ও তিন নাম্বার আসামি সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিক।
বাদীর আইনজীবী মো. নানু মিয়া জানিয়েছেন, সোমবার আদালতে দেওয়া আপসনামায় বাদী ও আহত জহুর বলেছেন, আসামিরা জামিন পেলে তাদের কোনও আপত্তি নেই। এ মামলা চালাতে তারা আর আগ্রহী নন।
শুরু থেকেই এই মামলা নানা ধরনের প্রশ্নের জন্ম দেয়। মামলা নিয়ে বাণিজ্যেরও অভিযোগ ওঠে।
মামলার ১ মাস ২০ দিন পর হাফিজ আহমদ আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছিলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি কোনও কিছু জানেন না, কোনও আসামিকেও চেনেন না। পরে গত ১১ নভেম্বর তিনি আদালতে এলে সেখান থেকে একদল যুবক তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে সদর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং জিম্মায় নেন। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান।
গুলিতে আহত মো. জহুর আলী বলেন, `আমার ভাই (বাদী) সহজ-সরল মানুষ। আমি গুলিতে আহত হয়ে তখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলাম। আমার ভাইকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আমাকে গুলি করছে পুলিশ। আমি এখনও পুলিশের বিচার চাই। কিন্তু একজন সাংবাদিক সবাইকে আসামি দিয়ে ব্যবসা করেছে।'
জহুর আলী বলেন, ‘যেহেতু পুলিশ আমাকে গুলি করেছে, তাই পুলিশের বিরুদ্ধে এ মামলা করার কথা ছিল। পরে দেখা যায়, মামলায় ৯৯ জন আসামির নাম। নাম ছাড়া আরও আসামি ২০০ জন। পরে মামলা নিয়া ব্যবসা শুরু হয়। টাকা নিয়ে জেলে ঢুকায়, বের করে। মামলায় যাদের নাম নাই তাদেরই পুলিশ ধরে বেশি।
‘আমরা আর মামলা চালাব না বলেছি। আর কারও শত্রু হতে চাই না। আমি বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাব। তাই এ মামলার ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে চাই।’
জহুর আলী সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাধনপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তিনি শহরের একটি সার-বীজের দোকানে চাকরি করতেন। তার গ্রামের বাড়ি জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার এরোয়াখাই গ্রামে।
হাফিজ আহমদও জানান, তিনি এত লোককে আসামি করতে চাননি। একজন সাংবাদিকই তাকে দিয়ে সব করিয়েছেন।
আদালতে দেওয়া হলফনামায় তিনি লিখেছেন, তার বাড়ি দোয়ারাবাজার উপজেলার এরোয়াখাই গ্রামে। ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ থেকে অনেক দূরে। তাই তিনি ঘটনার বিষয়ে কোনো কিছু জানেন না। আসামিদেরও চেনেন না।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম শেফু বলেন, “সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের আগেই এই মামলা নিয়ে আপসের কথাবার্তা আমরা বিভিন্নভাবে জেনেছিলাম। বাদী এর আগেও আপসনামা দিতে আদালতে এসেছিলেন। একটি পক্ষের বাধার কারণে তখন আপসনামা দাখিল করতে পারেননি।”
সবশেষ সোমবার তারা আপসনামা দিতে পেরেছেন এবং আপসনামা নথিভুক্ত করে তা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
এএফ/০১