করোনা ঝুঁকির মধ্যে খেলাধুলায় শিশু কিশোররা

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ০৪, ২০২০
০৯:৩২ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৪, ২০২০
১০:২১ অপরাহ্ন



করোনা ঝুঁকির মধ্যে খেলাধুলায় শিশু কিশোররা
অভিভাবকদের সুযোগ, বাচ্চাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার

ঘড়ির কাঁটায় বিকেল সাড়ে চারটা ছুঁইছুঁই। নগরের নবাব রোড এলাকার সড়কে জনসমাগম স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম। করোনা আতঙ্কে ঘরে বন্দী সময় কাটাচ্ছেন মানুষ। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বেরুচ্ছেন না। তবে প্রতিদিনের মতো এলাকার সৌরভ খেলার মাঠে শিশু কিশোরদের ভিড় ঠিকই জমে উঠেছে। ব্যাট বল হাতে জড়ো হয়েছে শিশু-কিশোররা। তাদের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো। মাঠের দৃশ্য দেখে বোঝার উপায় নেই, করোনা আতঙ্কে রয়েছে পুরো দেশ।

এই দৃশ্য প্রতিদিন বিকেলবেলায় দেখা যায় বলে জানা গেছে এলাকাবাসির সঙ্গে আলাপকালে। শুধু নবাব রোড এলাকতেই নয়। এই দৃশ্য নগরের প্রায় সব পাড়া-মহল্লার প্রতিদিনের বিকেল বেলার চিত্র।

নগরের চৌকিদেখি এলাকার শেষ প্রান্তে লাক্কাতুরা চা বাগানের ফ্যাক্টরি। এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাড়ে বিকেলে খেলতে জড়ো হচ্ছে শিশু কিশোররা। প্রতিদিন বিকেলবেলা ১৫ থেকে ২০ জন জড়ো হয়ে খেলতে নামে। করোনাভীতি যেন তাদের স্পর্শই করছে না। খেলার সময় স্বভাবতই একে অন্যকে স্পর্শ করছে, এতে করোনা ঝুঁকি বাড়ছে। খেলাধুলার পাশাপাশি বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার গল্লির সামনে আড্ডা বসাতেও দেখা গেছে শিশু-কিশোরদের। উদ্ভত এই পরিস্থিতিতে এসব কিছুই ঝুকিপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। অভিভাবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই সময়ে বাইরে খেলাধুলা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘এই সময়ে সবার ঘরে থাকাটা খুবই জরুরী। শিশু কিশোরদের ঘরের ভেতর খেলাধুলা করার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। ছবি আঁকা কিংবা ঘরের বড়দের সঙ্গে গল্প করা, পরিবারের সবাই একসঙ্গে মিলে টিভিতে কার্টুন কিংবা সিনেমা দেখা যেতে পারে।’

যান্ত্রিক জীবনে বর্তমানে শিশু-কিশোররা বাবা মায়েদের কাছে পায় খুব কম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সুযোগ রয়েছে নিজের সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় দেওয়ার।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের মধ্যে করোনা ছড়ালে তেমন কিছু হবে না। তবে তাদের মাধ্যমে পরিবারের প্রবীণ কারও মধ্যে ছড়ালে সেটি হবে ভয়াবহ। কারণ মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি তাদের। তাই বাসায় থাকাটা সবচেয়ে বেশি জরুরী।’

করোনাভাইরাসের এই সময়টা মা-বাবাদের সুযোগ এসেছে বাচ্চাদের বেশি সময় দেওয়ার বলে মনে করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস। এসময়টায় পড়াশোনার জন্য চাপ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘এখন বেশিরভাগ সময় শিশু-কিশোররা ঘরে সময় কাটাচ্ছে। একটানা ঘরে থাকায় তাই মস্তিষ্কে এক ধরণের চাপ পড়ে। এই সময়ে তাই পড়াশোনার জন্য শিশুদের চাপ না দেওয়াই ভালো বলে আমি মনে করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে মা-বাবাদের উচিৎ সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দেওয়া। তাদের সঙ্গে গল্প করা। কথা ও খেলার ছলে তাদের পছন্দ কিংবা আগ্রহের বিষয়টা অনুধাবন করা। তবে শিশুদের মস্তিষ্ক সুস্থ থাকবে।’

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. জেদান আল মুসা সিলেট মিররকে বলেন, ‘এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে পুলিশ সদস্যদের। তারা নজরদারি করছেন। তবে অভিভাকদের এই বিষয়ে একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তাদের সন্তানরা যাতে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা। এছাড়া প্রত্যেকটি এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও এই বিষয়ের প্রতি নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছি আমরা।

 

আরসি-০৯/