মানুষের দিন কাটছে ভয় আর আতঙ্কে

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ০৫, ২০২০
০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৫, ২০২০
০৮:২২ পূর্বাহ্ন



মানুষের দিন কাটছে ভয় আর আতঙ্কে
করোনাভাইরাস

করোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের ওষুধবাটিকা আবিষ্কার হয়নি। অথচ দিনদিন বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলছে করোনার সংক্রমণে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে আইইডিসিআর জানিয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৩০জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে সার্বিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শঙ্কায় ভয় আর আতঙ্ক ঘিরে রেখেছে মানুষকে।সিলেটের অনেক মানুষের মানসিক অবস্থাও অনেকটা এ-রকমই।

জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির সূত্রানুযায়ী, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বিশ্বেও ১৮১টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লাখ ৩১ হাজার ৭১৩ জন। এর মধ্যে মারা গিয়েছেন ৬০ হাজার ১১৫ জন। যদিও অন্যান্য হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি বলে বিভিন্ন মাধ্যম দাবি করছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা গেছে। অথচ দেশটি মৃত ও আক্রান্ত লোকজনের বিষয়ে প্রকৃত তথ্য দেয়নি।

ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশগুলোও করোনোভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ খবর গণমাধ্যমে প্রচারের পরপর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও ভয় আর আতঙ্ক ঘিরে রেখেছে। তবে সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার নানাধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সবাইকে বাড়ি থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় নানা ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন ও মানুষের সামাজিক দূরত্বে থাকা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করতে আজ রোববার সকাল ১০টায় সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে দুইবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন।

করোনাভাইরাসের লক্ষ্মণ নিয়ে সন্দেহভাজন রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও এখন পর্যন্ত সিলেটে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। যদিও প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় বৃহত্তর সিলেটের চারটি জেলা ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। এ অবস্থায় মানুষজন আশঙ্কামুক্ত নন। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কোনো অবস্থাতেই মনোবল হারানো যাবে না।

করোনার সময়কালে বাসাতেই সময় কাটাতে হবে। কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই বাসার বাইরে বেরোনো যাবে না। বিশেষ প্রয়োজনে বেরোলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই হাঁটাচলা করতে হবে। অন্যদিকে বাসার ভেতরে মানুষজনদের থাকাটা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সদা তৎপর থাকতে হবে।

সিলেট নগরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুমিত দাশ বলেন, ‘করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী যে হারে ছড়াচ্ছে এবংমানুষ মারা যাচ্ছে, এতে সবার মধ্যেই একটা আতঙ্ক আর ভয় ঢুকে গেছে। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকজন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে সিলেটে আবার গত দুইমাসে প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী এসেছেন। এঁদের কারও মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সবমিলিয়ে একটা রুদ্ধশ্বাস অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে মানুষজন।’ সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসনাত বলেন, ‘ভয়ে ভয়ে সারাক্ষণ থাকতে হয়। গত দুই সপ্তাহে তিনবার বাসা থেকে বেরিয়েছি। তা-ও বেরিয়েছি, জরুরি প্রয়োজনে। রক্ষা, এখনও সিলেটে করোনা-আক্রানের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে, এখনও সিলেটের মানুষজন প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে বেরোচ্ছেন, এটা ঠেকানো প্রয়োজন। কোনো অবস্থাতেই যেন মানুষজন বাসার বাইরেনা বেরোন, সেটা নিশ্চিত করতে আরও প্রচারণা বাড়ানো প্রয়োজন।’

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাটাই আপাত সমস্যার সমাধান। সবাইকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে তাই উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সবাইকে বারবার হাত ধোয়ার কাজও করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নাক-মুখে হাত দেওয়া যাবে না।