বড়লেখায় বাড়ির পর এবার জঙ্গল থেকে চাল উদ্ধার

এ জে লাভলু, বড়লেখা


এপ্রিল ১৪, ২০২০
১২:৫৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৪, ২০২০
১২:৫৭ পূর্বাহ্ন



বড়লেখায় বাড়ির পর এবার জঙ্গল থেকে চাল উদ্ধার

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভাটিউচি গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে সরকারি গুদামের আরও ৪ বস্তা চাল ও খাদ্য অধিদপ্তরের ৮টি খালি বস্তা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে ওই এলাকার মুজম্মিল আলীর বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে চাল ও বস্তাগুলো উদ্ধার করা হয়। 

এর আগেরদিন শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় একই গ্রামের দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরের বাড়ি থেকে ৮ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, আব্দুস শুক্কুরের বাড়িতে পাওয়া চালগুলো স্থানীয় চাল ডিলার মো. সুলেমান কালোবাজারে বিক্রির জন্য লুকিয়ে রেখেছিলেন। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ঘটনার আগেরদিন সকালে ডিলার চালগুলো ওই বাড়িতে পাঠান। ডিলার সুলেমানের বাড়ি ভাটাউচি গ্রামে।

এদিকে চাল উদ্ধারের ঘটনায় শনিবার রাতে থানায় দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরকে আসামি করে মামলা করা হলেও অভিযুক্ত চাল ডিলার সুলেমানের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা অভিযুক্ত চাল ডিলার সুলেমানকে বাঁচাতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভাটাউচি গ্রামের আব্দুস শুক্কুরের বাড়িতে সরকারি ৩০ কেজি ওজনের ৮ বস্তা চাল পাওয়া যায়। খবরটি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোস্তাক আহমদকে জানানো হয়। তিনিসহ খাদ্য অফিসের কোনো কর্মকর্তাই এদিন কর্মস্থলে না থাকায় ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় নিরাপত্তা প্রহরী মাছুম আহমকে।

পরে খবর পেয়ে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। খাদ্য অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর উপস্থিতিতে পুলিশ চালগুলো জব্দ করে। এরপর নিরাপত্তা প্রহরী স্থানীয় ডিলারের কাছ থেকে স্টক রেজিস্টার নিয়ে চলে আসেন। এর পরদিন শনিবার বিকেলে স্থানীয় ডিলার সুলেমানের বাড়ির অদূরে মুজম্মিল আলীর বাড়ির পাশের জঙ্গলে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪টি প্লাস্টিকের বস্তায় আরও ১২২ কেজি চাল ও খাদ্য অধিদপ্তরের ৮টি খালি বস্তা উদ্ধার করা হয়। চাল ও খালি বস্তা উদ্ধারের পর খাদ্য কর্মকর্তা ডিলারের গুদামে তালা দিয়ে বাজার বণিক সমিতির সম্পাদক আখতার হোসেন রহিমের কাছে চাবি বুঝিয়ে দেন। ওই রাতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপখাদ্য পরিদর্শক প্রানেশ লাল বিশ্বাস বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরকে আসামি করে মামলা করেন।

শনিবার বিকেলে সরেজমিনে এলাকায় গেলে চাল রাখা দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরের স্বজন ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) ডিলার সুলেমান দিনমজুর শুক্কুরের বাড়িতে ৩০ কেজি ওজনের ৮ বস্তা চাল পাঠান। তখন শুক্কুর বাড়িতে ছিলেন না। বাইরে কোথাও দিনমজুরের কাজ করছিলেন। এ সময় শুক্কুরের স্ত্রী তার কার্ডের দুই বস্তা চাল ছাড়া বেশি চাল রাখতে রাজি হননি। পরে ডিলার সুলেমানের সঙ্গে শুক্কুরের স্ত্রী কথা বললে তিনি (সুলেমান) চালগুলো রাখতে বলেন। দিনমজুর শুক্কুরের বাড়িতে চাল রাখার ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে পরদিন লোকজন প্রশাসনকে খবর দেন। এরপর ওই বাড়ি থেকে ৮ বস্তা চাল জব্দ করা হয়।

দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরের স্ত্রী হাজিরা বেগম বলেন, আমার কার্ডের দুইমাসের ২ বস্তা চাল এক সঙ্গে পেয়েছি। আমরা গরিব মানুষ। প্যাঁচ বুঝি না। বাড়তি আরও ৬ বস্তা চাল সুলেমান ভাই তার লোকজন দিয়ে আমার ঘরে পাঠান। আমার স্বামী বাড়িতে না থাকায় রাখতে চাইনি। পরে সুলেমান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাকে এগুলো রাখতে বলেন। চালগুলো তিনি পরে নেবেন বলে আমাকে জানান। পরদিন সরকারি লোকজন এসে চালগুলো নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাল ডিলার মো. সুলেমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

বড়লেখা উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোস্তাক আহমদ বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সিলেটে বাসায় ছিলাম। প্রথমদিন নিরাপত্তা প্রহরীকে পাঠাই ঘটনাস্থলে। স্থানীয় ডিলারের স্টক রেজিস্ট্রার নিয়ে আসতে বলি। শনিবার ওই গুদামে খোঁজ নিতে গিয়ে খবর পাই আরও কিছু চাল ও খালি বস্তা পাওয়া গেছে। সেগুলোও পুলিশের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ডিলারের কাগজপত্রের মিল পাওয়া গেছে। যার ঘরে সরকারি চাল পাওয়া গেছে, তার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে থানার পুলিশ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধেও চার্জশিট দেবে। আমরা তো আর মামলা তদন্ত করতে পারি না।

ডিলারের সম্পৃক্ততা থাকার পরও কেন তাকে মামলায় আসামি করা হয়নি জানতে চাইল এই কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। মামলায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আসামি দেওয়া হয়েছে।

শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, প্রথমদিন ৮ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। ওইদিন খাদ্য অফিসের একজন নিরাপত্তা প্রহরীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তার ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে চাল জব্দ করা হয়। পরদিন স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে আরও কিছু চাল ও খালি বস্তা পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক বলেন, এটা সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন উপ-পরিদর্শককে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে যারাই জড়িত থাকুক, তাদেরকে তদন্তের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।

এজে/আরআর