শ্রীমঙ্গলে কাঁচা ধান কেটে ফেলছেন আতঙ্কিত কৃষকরা

কাজী গোলাম কিবরিয়া, শ্রীমঙ্গল


এপ্রিল ১৫, ২০২০
০১:২১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৫, ২০২০
০১:২১ পূর্বাহ্ন



শ্রীমঙ্গলে কাঁচা ধান কেটে ফেলছেন আতঙ্কিত কৃষকরা
ফলন ভালো হওয়ার পরেও কৃষকদের মাথায় হাত

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওর ও বিভিন্ন গ্রামে চলতি মৌসুমে পানি সংকট ও বোরো ২৮ কাঁচাপাকা ধানে চিটা পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। সে কারণে জীবিকার একমাত্র অবলম্বন আধাপাকা বোরো ধান কেটে ঘরে তুলছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মৌলভীবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করায় ধান কাটার শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হতে না পারায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল সদর, ভূনবীর, আশিদ্রোন, সিন্দুরখানসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বোরো ২৮ আধাপাকা ধান কাটছেন ওই এলাকার কৃষকরা। জানা যায়, সঠিক সময়ে পানি না দিতে পারায় এবং ধান জ্বলে চিটা পড়ে যাওয়ার ভয়ে উঠতি ফসল কোনোমতে ঘরে তোলার জন্য আধাপাকা ধান কেটে মাড়াই করা শুরু করেছেন এসব অঞ্চলের কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শ্রীমঙ্গলে প্রায় ৯ হাজার ৪শ ১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩শ ৯৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত বোরো আবাদ হয়েছে।

উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা বলেছেন, পানির অভাবে প্রায় কয়েকশ একর ধানের চারা নষ্ট হতে বসেছে। শুকিয়ে যাওয়া মাটি ফেটে চৌচির। এই সময়ে ধান গাছে ফুল এসেছে, কিন্তু পানির অভাবে এসব ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় ধানের চারা মরে গেছে। চলতি করোনা মহামারির কারণে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় এই ধানের উপর তারা আশার বীজ বপন করেছিলেন। এখন তাদের সব স্বপ্ন ধুলায় মিশে যেতে বসেছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামের বোরো ধান চাষী আলমগীর মিয়া বলেন, ধানের ফলন ভালো হলেও আধাপাকা অবস্থায় সব ধানে চিটা পড়ে গেছে। আমার ১০ কেদার (৩০ শতাংশে ১ কেদার) বোরো ২৮ ধান জ্বলে চিটা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে ১ কেদারে ১৬ থেকে ১৮ মণ ধান পেতাম, সেখানে এ বছর ৮ মণ ধানও পাব না।

একই গ্রামের মোছদর মিয়া বলেন, করোনাভাইরাসে কাজ না থাকায় ঘরে এক সপ্তাহ ধরে খাবার নেই। ধানেও রোগ দেখা দিয়েছে। তাই কাঁচা ধান ঘরে তুলছি। কাঁচা ধান না কাটলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

জানা যায়, গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া গতকাল সোমবার চিটা হওয়ার ক্ষোভে তার ধানে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে আশপাশের কৃষকরা এসে সেই আগুব নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ধান গাছ তার জীবনচক্ররে মধ্যে কাইচথোড় থাকে। ফুল ফোটা পর্যন্ত সময়ে অতরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরম সহ্য করতে পারে না। ওই সময় বাতাসের তাপমাত্রা যদি ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে অথবা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে যায়, তাহলে ধানে ব্যাপকভাবে চিটা দেখা দেয়। তাছাড়া ধান যখন দুধ পর্যায়ে থাকে, তখন খরা হলে বা জমিতে পানির অভাব হলে ধানে চিটা হতে পারে।

তিনি আরও জানান, ঝড় বা রোগ, পোকামাকড়রে আক্রমণে ধানে চিটা হতে পার। যে কারণে এই এলাকার কৃষকরা আগাম ধান কেটে নিচ্ছেন।

 

জিকে/আরআর