প্রাণ আর প্রকৃতি রক্ষাই যার ধ্যানজ্ঞান

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি


এপ্রিল ২৩, ২০২০
০১:০৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৩, ২০২০
০১:০৮ পূর্বাহ্ন



প্রাণ আর প্রকৃতি রক্ষাই যার ধ্যানজ্ঞান

মানব সমাজে অনেকে নির্মম হন পশু-পাখির বিরুদ্ধে। আবার মানব মনেই থাকে পশু-পাখির জন্য মমত্ব। সাংবাদিক হৃদয়ের জন্য দ্বিতীয় বাক্যটি প্রযোজ্য। পেশায় তিনি সংবাদকর্মী। কাজ করছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জিটিভি ও সারাবাংলা ডট নেট এ মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট হিসেবে। পাশাপাশি বন্যপ্রাণী ও পাখি সংরক্ষণ এবং প্রাণীর অধিকার আদায়েও তিনি সরব। প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তিনি কষ্ট পান। পরিবেশ বিপর্যয়ে যখন বাস্তুসংস্থান নষ্ট হচ্ছে, নগরায়ন কিংবা বন উজারের ফলে যখন বন্যপ্রানী আশ্রয় হারাচ্ছে, মানবসৃষ্ট দুর্যোগে যখন পাখি নীড় হারাচ্ছে, তখন প্রকৃতির যোদ্ধা হয়ে এগিয়ে এসেছেন সাংবাদিক হৃদয়। তার একান্ত চাওয়া, সবুজ প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষিত থাকুক।

গণমাধ্যমে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করেন হৃদয়। টিভি এবং প্রিন্ট মিডিয়াসহ অনলাইন পোর্টালে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি লাভ করেছেন জনপ্রিয়তা। পাখি ও সাপ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। ব্যাঙ, তক্ষক, টিকটিকি, হাতি, বানরের বেঁচে থাকার নিয়মে ব্যাত্যয় ঘটলে এড়িয়ে যায় না তার চোখ। প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সেগুলো তুলে আনেন। তার ক্যামেরায় উঠে আসে প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষার নানা দিক। তিনি তুলে ধরেন পরিবেশের সঙ্গে মানুষের বেঁচে থাকার সম্পর্কের কথা। পাশাপাশি তুলে আনেন বনখেকোদের বন উজার, পাহাড়ের বুক থেকে পাথর উত্তোলনকারীদের দস্যিপনার খবর। একাধিকবার নানা পরিবেশ ইস্যুতে তার প্রতিবেদনে চাকরি হারিয়েছেন খোদ বন বিভাগের লোকজন। তার পর থেকেই টনক নড়ে প্রশাসন ও পরিবেশবিদদের।

হৃদয় দেবনাথের ফেসবুক আইডি লক্ষ্য করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, সর্বদা প্রাণ ও প্রকৃতি বাঁচানোর জন্য তিনি কি কি করছেন। এ জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতেও ভয় পান না তিনি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করে বৃক্ষেরোপন ও সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০১৮ সম্মানেও ভূষিত হন সাংবাদিক হৃদয়। পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও তার অবদান রয়েছে।

হৃদয় দেবনাথ বলেন, প্রতিটি প্রাণী আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণ ও প্রকৃতি আঁকড়ে টিকে আছে আমাদের মানব সভ্যতা। তাই এগুলো রক্ষা করা মানে আমাদের নিজের সভ্যতা রক্ষা করা। কিন্তু বোঝে না বোঝে প্রাণী হত্যার মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত হত্যা করে চলেছি আমাদের ভবিষ্যত। প্রাণী ও প্রকৃতি রক্ষায় একটু হলেও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমার এই ছোট্ট প্রচেষ্টা। এখন পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় পাখি/বন্যপ্রাণী চোরা শিকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে মুক্ত করে দিয়েছি।

হৃদয় আরও বলেন, প্রাণী ও মানুষের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে মানুষ কথা বলতে পারে, অন্য প্রাণীরা পারে না। তাই প্রাণীকূলে মানুষের খেয়াল-খুশির কাছে ওরা অসহায়। ফলে মানুষের চরম নির্মমতায় কিংবা পরিবেশের চরম বিপর্যয়েও একটি প্রাণী কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। কিন্তু প্রাণীর না বলতে পারা সব কষ্ট ও কথাগুলো অনুধাবন করা মানুষের দায়িত্ব। অসহায় প্রাণীকে সাহায্য করার কথা প্রতিটি ধর্মেও উল্লেখ আছে। মনে রাখতে হবে, প্রাণীর স্বাধীন বিচরণে স্বাভাবিক থাকে পরিবেশের ভারসাম্য। তাই প্রাণী রক্ষা মানে আমাদের সভ্যতা রক্ষা করা।

পরিবেশ ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী রক্ষায় করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবেশরক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আর জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সংবাদমাধ্যমগুলো হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার। পাশাপাশি জেলা থেকে উপজেলা এমনকি গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষিত যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি দ্রুতই পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকেই প্রতিরোধ গড়ে উঠবে। আর আমাদের সংগঠন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে এটি। প্রতিটি সংবাদমাধ্যমেরও উচিৎ প্রাণ ও প্রকৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া। পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করি।

প্রকৃতি ও সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এমনকি এ করোনার ঝুঁকির মধ্যেও সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথের নেতৃত্বে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন টিমের প্রতিটি সদস্য একের পর এক সফল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের প্রতিটি কাজে আমরা বনবিভাগ সবসময় ছিলাম এবং আছি।

 

আরআর