বড়লেখায় কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে ছাত্রলীগ

বড়লেখা প্রতিনিধি


এপ্রিল ২৪, ২০২০
০২:১৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৪, ২০২০
০২:১৭ পূর্বাহ্ন



বড়লেখায় কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে ছাত্রলীগ

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু এতেও কৃষকের মুখে হাসি ছিল না। কারণ করোনাভাইরাসের কারণে দেখা দিয়েছিল শ্রমিক সংকট। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষকরা। তবে এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ। তারা কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী হাকালুকি হাওরের মুর্শিবাদকুরা গ্রামের কৃষক মনোরঞ্জন বিশ্বাসের তিন বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছেন। এতে ওই কৃষক ভীষণ খুশি হয়েছেন। 

পর্যায়ক্রমে তারা বিভিন্ন এলাকার কৃষকের ধান কেটে দেবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে কৃষকের ধান কেটে দেওয়ায় অনেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাধুবাদ জানাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী হাকালুকি হাওরপারের মুর্শিবাদকুরা গ্রামের কৃষক মনোরঞ্জন বিশ্বাসের জমির ধান কেটে দিচ্ছেন। 

এ সময় কথা হয় কৃষক মনোরঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। আমি গরিব মানুষ। আয়-রোজগারও কম। একদিকে করোনাভাইরাসের ভয়, অন্যদিকে বন্যার ভয়। যার কারণে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে পারব কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরে এই বিষয়টি আমি আমার এলাকার এক ছাত্রলীগ নেতাকে জানাই। পরে তিনি আমার ধান কেটে দেওয়ার কথা বলেন। আজ সকালে এসে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা মিলে আমার ধান কাটা শুরু করেন। বিপদের সময় তারা ধান কেটে আমার যে উপকার করেছেন, এ জন্য আমি তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদ বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকদিন থেকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা হলে কৃষকদের ধান পানিতে তলিয়ে যাবে। এসব কথা চিন্তা করে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা মিলে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা আজকে একজন কৃষকের তিন বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে বাকি কৃষকদের ধান কেটে দেওয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে সমাজের সবাইকে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। 

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৫শ ৭৫ হেক্টর জমিতে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৪শ ৬৮ হেক্টর। কৃষি বিভাগের তৎপরতায় ১০৭ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধান আবাদ হয়েছে হাকালুকি হাওরপাড়ের তিন ইউনিয়ন তালিমপুর, সুজানগর ও বর্ণিতে। অন্য ৭টি ইউনিয়নেও কম-বেশি ধান আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধারা হয়েছে ২৬ হাজার ২শ ১৫ মেট্রিক টন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবল সরকার বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগ কৃষকদের ধান কেটে দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। ছাত্রলীগের পাশাপাশি এখন সবার উচিত এভাবে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে কৃষক সমিতিগুলোকে ধান কাটার যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ধান কাটা চলছে। এখানে ধান কাটার অনেক শ্রমিক আছেন। তারা ধান কেটে দিচ্ছেন। আমরা তাদের ধান কাটার কাজে উৎসাহিত করছি। তারপরও যাতে ধান কাটার শ্রমিক সংকট না হয়, সে ব্যাপারেও কৃষি বিভাগ ব্যবস্থা নিয়েছে। শুধুমাত্র আবহওয়া ভালো থাকলেই ধান কেটে ঘরে তোলা সম্ভব হবে।

 

এজে/আরআর