ট্রাম্পের টিকে থাকার লড়াই!

ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, নিউইয়র্ক


নভেম্বর ০১, ২০২০
০৫:৫৫ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৩, ২০২০
০৫:৩৫ অপরাহ্ন



ট্রাম্পের টিকে থাকার লড়াই!

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের মাত্র তিনদিন আগে চলছে ত্রাহি অবস্থা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এ যেন এক মরা বাঁচার লড়াই। শেষ তিনদিনে ১৪টি প্রচারণা সভায় তাঁর বক্তৃতার কর্মসুচি রয়েছে। জনমতে আপাত এগিয়ে থাকা ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনও বসে নেই। চষে বেড়াচ্ছেন। ফ্লোরিডা থেকে পেনসিলভেনিয়া। আইওয়া থেকে উইসকনসিনে নির্বাচনী উত্তাপ এখন চরমে। 

সমস্ত আমেরিকায় নির্বাচনের কোনো তাপ নেই। উত্তাপের দেখা মিলে মাত্র হাতেগোনা কিছু রাজ্যে। এসব রাজ্যের ভোট কোনদিকে যাবে,কেউ বলতে পারেন না। ফ্লোরিডা, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, এরিজোনা, ওহাইয়ো, জর্জিয়া, উইসকনসিন, টেক্সাস এবারে হয়ে উঠেছে নির্বাচনের মাঠ। প্রচারণা দেখলেই বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প একাই লড়ছেন। ডেমোক্রেট দলের প্রচারণা অনেকটাই সংগঠিত। দলীয় নেতারা মাঠে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মাঠে নেমেছেন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য। 

প্রতিযোগিতাপূর্ন রাজ্যগুলোর টিভিতে বিজ্ঞাপন চলছে। স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপনের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অবিরাম ফোন বেজে চলছে। সামাজিক যোগাযোগের প্রচারণায় নিত্য যোগ হচ্ছে নানা সৃষ্টিশীলতা। আমেরিকার ১০টি রাজ্যেই অর্ধেক জনগোষ্ঠির বসবাস। এসব রাজ্যের অধিকাংশ ডেমোক্রেট প্রধান। চিহ্নিত ডেমোক্রেট প্রধান রাজ্যে নির্বাচনের তেমন কোন প্রচারণা নেই। যদিও এবারে ভোট দেয়ার উৎসাহ দেখা যাচ্ছে লোকজনের মধ্যে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। 

জরীপ নির্ভর আমেরিকার রাজনীতি। এখানে জরীপ ধরেই সব আলোচনা। এখন পর্যন্ত জনমত জরীপে ডেমোক্রেট প্রার্থীর বিজয় নিয়ে আগাম উচ্ছ্বসিত ডেমোক্রেট দলের সাধারণ সমর্থকরা। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিরোধীরা মনে করছেন, তিন তারিখের নির্বাচনেই ট্রাম্প যুগের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। 

প্রকৃত বাস্তবতা এমন নাও হতে পারে। আমেরিকার জটিল রাজনীতিতে মাত্র কয়েকটি রাজ্যের ইলেকটোরেল ভোট সব হিসেব পাল্টে দিতে পারে। যেমন করে পাল্টে দিয়েছিলো ২০১৬ সালে। জরিপের ফলাফলের কথা বললে, ট্রাম্প সমর্থকদের মুচকি হাসতে দেখা যায়। তাদের বিশ্বাস, ট্রাম্পের পক্ষে আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠির নীরব সমর্থনে ফলাফল দেখা যাবে তিন নভেম্বরের নির্বাচনে। 

এবারে করোনা মহামারির কারণে আগাম ভোট, ডাকযোগে ভোট এরমধ্যেই অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নয় কোটির বেশি মানুষ ভোট দিয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসব আগাম ভোটের মধ্যে ডেমোক্রেট ভোটই বেশি বলে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম বলছে। নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ ধারণার কথা জানানো হচ্ছে। যদিও এর সবই অসার প্রমাণিত হতে পারে। আগামী তিনদিনে নির্বাচনের মাঠ অনেকটা পাল্টেও যেতে পারে। 

সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন কখনো দেখা যায়নি। রাজনীতি নিয়ে আমেরিকার পরিবারগুলো বিভক্ত হয়ে পড়েছে। শ্বেতাঙ্গ পরিবারের পুরুষদের বেশি ভোট নিশ্চিত পাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শ্বেতাঙ্গ নারীদের মধ্যে জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন বেশি। আমেরিকার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পরিবারের লোকজন এক প্রার্থীকেই ভোট দেওয়ার অবস্থা নেই। এবারের নির্বাচনে এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 

যুব তরুণদের মধ্যে ভোট প্রদানের অনীহা দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সের লোকজনের মাত্র ২০ শতাংশ ভোট দিতে যায়। এবারে তার কতোটা ব্যতিক্রম হবে, বলা যাচ্ছে না। যুব তরুণ ব্যাপকভাবে ভোট প্রদান করলে ডেমোক্রেট প্রার্থীর বিজয় সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ট্রাম্প সমর্থক যুব তরুণরা ঠিকই ভোটে যাবে। তারা মনে করছে, এবারের নির্বাচন আমেরিকার রক্ষণশীলদের মরা বাঁচার নির্বাচন। 

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এমনিতেই জটিল। এবারের নির্বাচন নানা কারণে উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের নানা জটিল বিষয় নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। তেমন কিছু আদৌ নাও হতে পারে। তারপরও আলোচনা হচ্ছে, ইলেকটোরেট ভোট দুই প্রার্থীর পক্ষে সমান সমান হয়ে যাওয়া নিয়ে। ডাক ভোটের বা আগাম ভোটের গণনা নিয়ে নির্বাচনের বিষয়টি আদালতে গড়াতে পারে। উভয় পক্ষের শতশত আইনজীবি এ নিয়ে প্রস্তুত। 

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমনও ঘটনা আগে ঘটেছে। দুই পার্থীর ইলেকটোরেট ভোটের সংখ্যা সমান হয়েছে। এখন ৫৩৮ ভোটের ইলেকটোরেট ভোটের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ট ভোট পেতে হয় বিজয়ী প্রার্থীকে। ৫৩৮ সংখ্যাটি একটি জোড় সংখ্যা। কোনো কারণে উভয় প্রার্থীর হিসেবে ২৬৯ করে ইলেকটোরেল ভোটের হিসেব জমা হলেই বিপত্তি বাঁধবে। তখন প্রতিনিধি পরিষদে (কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ) ভোট হবে। যদি প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেট কোনো একজনকে নির্বাচিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত স্পিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। 

এবারের নির্বাচনে এমন কিছু হবে, কেউ মনে করছে না। তবে রাজনৈতিক পন্ডিতরা এসব নিয়ে আলোচনা করছেন। আমেরিকার উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব আলোচনার মাধ্যমে লোকজন মার্কিন রাজনীতির জটিল নানা বিষয় সম্পর্কে জানারও সুযোগ গ্রহণ করছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সত্যি সত্যি এমন ঘটনা একবার ঘটেছে। ইলেকটোরেট ভোটের সমান সমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো ১৮০০ সালে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন থমাস জেফারসন এবং এরোন বার। উভয় প্রার্থী তখন ৭৩টি করে ইলেকটোরেল ভোট পেয়েছিলেন (১৮০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্যের সংখ্যা কম ছিল)।