নারীকে যৌন হেনস্তার ভিডিও প্রচার, মামলা দায়ের

কানাইঘাট প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
০২:৩৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
০২:৩৯ পূর্বাহ্ন



নারীকে যৌন হেনস্তার ভিডিও প্রচার, মামলা দায়ের

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ঝিংগাবাড়ী ইউনিয়নের আগতালুক গ্রামের ৬ সন্তানের জননী পঞ্চাশোর্ধ বিধবা নারীকে যৌন হেনস্তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ভিডিও ধারণকারীসহ ৪ জনকে আসামি করে কানাইঘাট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম ও ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হকের নেতৃত্বে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, যৌন হেনস্তার শিকার ওই নারী গত সোমবার একই গ্রামের বরকত উল্লার ছেলে বড় আব্দুল্লাহ (৩৫), সিরাজ উদ্দিনের ছেলে জব্বার (২২), নুর উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২৫) ও রফিক আহমদের ছেলে সায়েদ উল্লাহকে (৩০) আসামি করে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪) (খ) তৎসহ ও পর্ণোগ্রাফি আইনে রেকর্ড করে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট রাতে যৌন নির্যাতন ও হেনস্তা করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৬ সন্তানের জননী ওই নারীর আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে সম্পর্কে ওই নারীর নাতি একই বাড়ি বাসিন্দা আব্দুল্লাহ। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে একই বাড়িতে থাকা জব্বার।

স্থানীয়রা জানান, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের জের ধরে গ্রামের একপক্ষের সাবেক ইউপি সদস্য হারুন রশিদ ও অপর পক্ষের মাওলানা জসিম উদ্দিনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা চলছে। মামলার আসামি হয়ে গ্রামের হারুন রশীদ গোষ্ঠীর বরকত উল্লার ছেলে বড় আব্দুল্লাহ ওই নারীর বসতঘরে বিভিন্ন সময় রাত্রিযাপন করত। জমিজমা নিয়ে ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে একই বাড়ির সিরাজ উদ্দিনের ছেলে জব্বারদের বিরোধ চলে আসছিল। গত ২৩ আগস্ট রাতে বড় আব্দুল্লাহ ওই নারীর ঘরে রাত্রিযাপন করতে যায়। এই সুযোগে জব্বার ও ছোট আব্দুল্লাহ নারীর ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন। একপর্যায়ে তারা ওই নারী ও বড় আব্দুল্লাহকে বলে, 'আমরা তোমাদের আপত্তিকর ভিডিও আমরা ধারণ করেছি। ৩০ হাজার টাকা না দিলে ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেব।' একপর্যায়ে তারা বড় আব্দুল্লাহকে বলে ওই নারীকে জড়িয়ে ধরতে। তারা এ দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করে মোটা অংকের টাকা পাবে এবং সেই টাকা ৩ জন ভাগ করে নেবে বলে জানায়। বড় আব্দুল্লাহ তাদের কথামতো ওই নারীকে প্রায় বিবস্ত্র করে যৌন হেনস্তা করে এবং ছোট আব্দুল্লাহ ও জব্বার তা ভিডিওতে ধারণ করে।

মানহানির ভয়ে ঘটনার রাতে হেনস্তার শিকার নারী তাদেরকে ২০ হাজার টাকা দেন ভিডিও প্রকাশ না করার জন্য। কিন্তু তারা নারীর কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ধারণকৃত ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেবে বলেও হুমকি দেয় তারা। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সায়দুল্লাহ সালিশ বসিয়ে তারা দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা দেওয়ার জন্য ওই নারীকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে টাকা না পেয়ে ছোট আব্দুল্লাহ তার মোবাইলে ধারণকৃত আপত্তিকর ভিডিওটি ২৫ হাজার টাকায় বিনিময়ে গ্রামের অপর গোষ্ঠীর একজনের কাছে দিয়ে দেয়। পরে গত রবিবার প্রথমে কয়েকটি ফেক আইডি থেকে ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়। পরে অনেকে ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিবাদী পোস্ট দিতে শুরু করলে ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে এলাকাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ভিডিওটি পুলিশের নজরে এলে তাৎক্ষণিক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন থানার ওসি তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।


এমআর/আরআর-১০