করোনার টিকা গ্রহণে দুর্ভোগে সুনামগঞ্জের দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ


নভেম্বর ২৪, ২০২১
০৯:৫০ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২৪, ২০২১
০৯:৫০ অপরাহ্ন



করোনার টিকা গ্রহণে দুর্ভোগে সুনামগঞ্জের দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা

সুনামগঞ্জে শুরু হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম। জেলার ১২টি উপজেলার ২০২১ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সুনামগঞ্জ সদরে এনে ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে হাওরাঞ্চলের দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।

তবে অপেক্ষাকৃত উন্নত যোগাযোগের উপজেলা দিরাই, ছাতক, জগন্নাথপুরে ভেন্যু করার কথাও জানালেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

হাওর-বাওরের জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ। এখনও জেলার অনেক উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে পায়ে হাটাই ভরসা। তিনটি উপজেলার জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ মোটর সাইকেলে করতে হয়। দীর্ঘ পথ মোটর সাইকেলে আসা কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে আরও কঠিন।

আগামী দুই ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ২০২১ শিক্ষা বর্ষের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে শুরু হয়েছে টিকা প্রদান কার্যক্রম। দুর্গম হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জেলা সদরে এনে টিকা দেওয়ার আয়োজনে ভোগান্তিতে পড়েছেন শত শত শিক্ষার্থী।

অনেক ছাত্রীর সঙ্গে জেলা সদরে এসেছেন অভিভাবকরাও। তারা বলছেন নিজ নিজ ইউনিয়ন বা উপজেলা সদরে এই ভ্যাকসিন প্রদান হলে সময়, শ্রম ও আর্থিক ভোগান্তিতে পড়তে হতো না তাদের।

টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি মাধ্যমিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী জয়ধর আলম বলেন, আমাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো স্থান হতো উপজেলা অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কষ্ট করে সুনামগঞ্জে অনেক দূরদূরান্ত থেকে আমরা এসেছি। অনেক শিক্ষার্থীর টাকা পয়সার সংকট থাকলেও প্রতিষ্ঠানের চাপে এখানে আসতে হয়েছে। গতকাল আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়া লাগবে। এখান থেকে ভ্যাকসিন না নিলে আমাদেরকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না। 

তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থী ইতি রায় বলেন, করোনার ভ্যাকসিনটা যদি আমাদের উপজেলা থেকে নেওয়া হতো তাহলে আমাদের অনেক ভালো হতো। সামনে আমাদের পরীক্ষা। এখানে ভোগান্তি স্বীকার করে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এই সময়টা যদি পড়া যেতো তাহলে কাজে লাগতো।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মো. আশরাফ উদ্দিন নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার একজন শিক্ষার্থী তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজে পড়াশুনা করে। এবার সে এইসএসসি পরীক্ষার্থী। আমরা হাওর এলাকার মানুষ। এখানে আসাটা আমাদের জন্য সুবিধার নয়। অনেক টাকা খরচ করে সুনামগঞ্জ সদরে আসতে হয়েছে। যদি স্কুলে ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ হতো তাহলে আমাদের অনেক ভালো হতো। 

শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সৈয়দুর রহমান বলেন, আমাদের জন্য এই টিকা কেন্দ্র অনেক দূরে হয়ে গেছে। উপজেলা সদরে আমাদের একটা হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে যদি টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো তাহলে বাচ্চাদের এরকম টাকা খরচ হতো না। কষ্টও লাঘব হতো। 

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফাইজারের টিকা উপজেলা পর্যায়ে সংগ্রহের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের জেলা পর্যায়ে এনে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।’ ভালো টিকা নিতে একটু কষ্ট সহ্য করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দিরাই, ছাতক, জগন্নাথপুরসহ কয়েকটি দুর্গম এলাকায় ভেনু করা হবে। 

তিনি জানান, সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩ হাজার এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। মঙ্গলবার শান্তিগঞ্জে ৪৭২, বিশ^ম্ভরপুরে ৬৮৫, জামালগঞ্জে ৬৬৪ ও তাহিরপুর উপজেলার ৮৭২ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

আরসি-১৬