অবশেষে অনশন ভাঙলেন শাবির শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক


জানুয়ারি ২৬, ২০২২
১০:২৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৬, ২০২২
০১:৫৪ অপরাহ্ন



অবশেষে অনশন ভাঙলেন শাবির শিক্ষার্থীরা

অবশেষে দীর্ঘ ১৬৩ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার সহধর্মিণী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।

অংশ নেওয়া ২৮ জন শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙান তারা। 

এসময় ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমি এখানে আসতে চাইছিলাম না। কারণ তোমরা আমার কথা না শুনলে তাই! তবে আমার ছেলে-মেয়েদের উপর আমার বিশ্বাস ছিল, তাই এসেছি। আমি সংকল্প করে এসেছি তোমাদের অনশন ভাঙিয়ে তারপর আমি সিলেট ছাড়বো। আমি চাই তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও, তবে অনশন ভেঙে আন্দোলন করো। আন্দোলন আর অনশন ভিন্ন জিনিস! আমি এসেছি তোমাদের অনশন ভাঙাতে। পরে সকালে শিক্ষার্থীরা পানি খেয়ে ড. জাফর ইকবালের হাতে অনশন ভাঙেন।

শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করেছিলাম যারা অনশন করতেছে তাদের যথাযথভাবে মেডিকেল সাপোর্ট দিচ্ছে। তবে আমি এখানে এসে যা দেখলাম তা দেখে খুবই হতাশ হলাম। চিকিৎসা না দিয়ে ডাক্তাররা যা করেছে তা খুবই অমানবিক কাজ করেছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জাফর ইকবাল বলেন, এই কয়দিনে তোমরা দেশের সব মহলকে দেখিয়ে দিয়েছ। তোমাদের কথা সবার কাছে পৌছে গেছে। আমি নিজেও এখঅন থেকে গিয়ে তোমাদের কথা পৌছে দিব। আমি চাইনা তোমরা নিজেদের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দাও। তাই তাঁড়াহুড়ো করে চলে এসেছি তোমাদের দেখতে আর তোমাদের অনশন ভাঙাতে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে টাকার অনুদান তুলে দিয়ে বলেন, আমি তোমাদের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দিলাম। এখন দেখি আমাকে কে গ্রেফতার করে! আমি দেখতে চাই কারা আমাকে এরেস্ট করতে আসেন।

এসময় ড. ইয়াছমিন হক বলেন, আমার মনে হয় যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে তা নামসর্বস্ব। এখন প্রতিটি ঘন্টা তোমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই তোমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন চালিয়ে যাও। তবে এজন্য তোমাদের বেঁচে থাকতে হবে। আমি এর আগে অনেক আন্দোলন দেখেছি এবয়ং করেছি। তবে এমন নিষ্ঠুর আচরণ শিক্ষার্থীদের সাথে করতে দেখিনি!

শিক্ষার্থীরা বলেন, এতোদিন আমাদের কথা শোনার মতো কেউ ছিলো। আমরা স্যার আপনাকে বিশ্বাস করি। আপনার আশ্বাসে আমরা অনশন ভাঙছি। তবে আমাদের কথা দিয়ে আপনারা তা ভঙ্গ করবেন না সে বিশ্বাস আমাদের আছে!

মঙ্গলবার (২৫ জাননুয়ারি) আন্দোলনকারীরা তাদের সহপাঠীদের অনশন ভাঙার ঘোষণা দেন। তবে তারা চেষ্টা করলেও অনশনকারীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন এবং অনশন চালিয়ে যান। এর আগে শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন মহল থেকে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করে তা সফলতার পথ পায়নি। অবশেষে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ড. জাফর ইকবালের ভরসা পেয়ে অনশন ভেঙেন শিক্ষার্থীরা। এসময় পানি খেয়ে তাদের অনশন ভাঙেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ।

প্রসঙ্গত, ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে ছাত্রীরা। পরে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ’ ছাত্রী।

এ ঘটনায় ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এছাড়া ১৬ জানুয়ারি ছাত্রীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে ভিসিকে মুক্ত করে। এতে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ৩টা থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মোট ২৮ শিক্ষার্থী অনশন করে আসছিলেন। বুধাবার সে অনশন এর অবসান হয় শিক্ষার্থীদের। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখে ফের হাসি ফোটে।

এইচএন/এনএইচ/আরসি-০৮