আবির হাসান মানিক, তাহিরপুর
মার্চ ১১, ২০২২
০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ১১, ২০২২
০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন
কোনো রাখঢাক ছাড়াই নেওয়া হয় ঘুষের টাকা। সেবা প্রাপ্তির সময়সীমা, সেবার ধরন সবই নির্ভর করে ঘুষের উপর। না হলে মাসের পর মাস ঘুরেও মেলে না কাক্সিক্ষত সেবা। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এমন ঘুষ লেনদেন এখানকার ওপেন সিক্রেট।
বলছিলাম সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসের ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে। ভুক্তভোগীরা অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সেবা নিলেও সহজে মুখ খুলতে চান না। তাদের ভয়, জানতে পারলে পরেরবার এসে সেবা না-ও মিলতে পারে।
তবে ভুক্তভোগীদের মুখের শুকনো হাসিই জানিয়ে দেয়, এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। বরং চাহিদামতো টাকা না দিলে সেবার বদলে মিলছে বারোমাসি অপেক্ষা। রয়েছে নানা হয়রানি আর ভোগান্তি। তাই এখানে সেবা নিতে আসা অধিকাংশ মানুষ মাসের পর মাস ধর্না দিতে নারাজ। তার বদলে অতিরিক্ত ফি দিয়েই সেবা নিতে আগ্রহী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত ফি নেওয়া হয়ে থাকে। এর একটি সাধারণ, অন্যটি জরুরি ফি। কিন্তু তাহিরপুর নির্বাচন অফিসে এসব নিয়মকানুনের কিছুই মানা হয় না। নতুন ভোটারের অনলাইন এনআইডি কপি, সংশোধন, হারানো-নষ্ট বা ভোটার স্থানান্তরের আবেদনে নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছেমাফিক টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়দল উত্তর ইউনিয়নের এক নতুন ভোটার বলেন, আমার পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদন করতে নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর জানতে চাওয়া হয় জরুরি নাকি সাধারণ? বললাম জরুরি।
জানাল জরুরি হলে এক হাজার টাকা দিতে হবে। আমি তাতে রাজি না হয়ে সাধারণ আবেদন করি। কিন্তু কয়েকবার অফিসে গিয়েও ওই আইডি কার্ডের হদিস মেলেনি। পরে সাত মাস পর তা হাতে আসে। এমন ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে পরেরবার এক হাজার টাকা দিয়ে নতুন ভোটারের আবেদন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই তা পেয়ে যাই।
একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত রিতু আক্তার বলেন, তাহিরপুর নির্বাচন অফিসে নতুন ভোটারের আবেদন করতে গেলে তারা আমাকে চার পাঁচ দিন পর আসার জন্য বলেন। পরেরবার অফিসে যোগাযোগ করলে বলা হয়, কার্ডের কাজ সম্পূর্ণ করতে এক হাজার টাকা লাগবে। পরে আটশ টাকা দিয়ে রাজি করিয়ে অনলাইন কপি পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, শুনেছি আরও অনেকেই নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করেছিল। এবং যারা অতিরিক্ত টাকা দিয়েছে শুধু তারাই কার্ড পেয়েছিল।
বাদাঘাট ইউনিয়নের রিয়াদ আহমেদ জানান, দুই মাস আগে অনলাইন ¯িøপের জন্য নির্বাচন অফিসে গিয়েছিলাম। আমি জানতাম ¯িøপের জন্য কোনো টাকা লাগে না। কিন্তু এই কাজের জন্য আমার কাছ থেকে ৩২০ টাকা নেওয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, টাকা দিয়ে নির্বাচন অফিসে কাজ করাতে হয়, প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া কোনো ভুক্তভোগী এমন অভিযোগও করেনি। আপনি ভুক্তভোগীদের আমার নিকট আসতে বলুন, প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি ও হয়রানি বন্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি তদন্তকাজে ভুক্তভোগীদের এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার সিলেট মিররকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলব। তাছাড়া অফিসার ও স্টাফদের বলা আছে বেটার সার্ভিস দেওয়ার জন্য। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরসি-০২