চার বছর পর সিলেটে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফিরছে আজ

রাফিদ চৌধুরী


মার্চ ২৯, ২০২২
১২:০৮ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৯, ২০২২
১২:০৮ অপরাহ্ন



চার বছর পর সিলেটে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফিরছে আজ
বাংলাদেশ-মঙ্গোলিয়া প্রীতি ফুটবল ম্যাচ

নয় বছর আগে নেপালের বিপক্ষে সিলেটে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে দর্শকের চাপ গ্যালারিও ধারণ করতে পারেনি। ক্রীড়া পাগল দর্শকরা সেদিন জেলা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক ভেঙে মাঠে প্রবেশ করেছিলেন। তবে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই ম্যাচটি শেষ হয়েছিল।

তাতেই সিলেট জানান দিয়েছিল, এখানে খেলা মানেই দর্শকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ¡াস। সেই সিলেটে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফিরছে প্রায় চার বছর পর। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। 

সিলেটে সবশেষ আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের অক্টোবরে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ হয়েছিল এই মাঠে। বাংলাদেশ খেলেছিল দুই ম্যাচ। ১ অক্টোবর উদ্বোধনী ম্যাচে লাওসের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ঘরের ছেলে বিপলুর দেওয়া একমাত্র গোলে। যদিও পরের ম্যাচে ফিলিপাইনের বিপক্ষে একই ব্যবধানে হেরেছিল স্বাগতিকরা। তবে প্রথম ম্যাচের জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ উঠেছিল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে। এবারও জয় দিয়ে সিলেট রাঙাতে চান লাল সুবজের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া।

গতকাল সোমবার বিকেলে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে প্রস্তুতি শেষে গণামাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশ কাপ্তান। এসময় তিনি বলেন, শেষ ম্যাচের ফল নিয়ে আমরা অবশ্যই হতাশ। তবে পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। ভুলগুলো শুধরে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছি। পরের ম্যাচে আমাদের কাছে জয়ের বিকল্প কিছু নেই। জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠে নামব। সে অনুযায়িই আমরা পরিকল্পনা করেছি। নিজেদের মাঠে আমাদের অবশ্যই জিততে হবে।

চলতি শতকের শুরুতে সপ্তাহের ব্যবধানে দুবার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-মঙ্গোলিয়া। দীর্ঘ ২১ বছর পর অচেনা এক মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামাটা চ্যালেঞ্জিং কি না জানতে চাইলে জামাল বলেন, প্রতিটি ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং। আমরা দীর্ঘদিন তাদের বিপক্ষে খেলিনি। তবে আমরা তাদের ভিডিওগুলো দেখেছি। তাদের খেলার ধরন ও খেলোয়াড়দের নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। এসব হোমওয়ার্ক করেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। জয়ের জন্যই আমরা তাদের বিপক্ষে খেলতে নামব।  

অতীতের মতো এবারও সিলেটের মাঠে গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ থাকবে বলে প্রত্যাশা করেছেন জামাল ভূঁইয়া। ‘সিলেটে খেলা মানেই দর্শকের উপস্থিতি। গ্যালারি থাকে না ফাঁকা। এজন্য সিলেট স্টেডিয়াম আমি সবসময় পছন্দ করি। এবার তেমনটাই হবে বলে আশা করছি। তারা মাঠে আসেন আমাদের উৎসাহ দিতে। বাংলাদেশের জয় দেখতে পাওয়াটাই তাদের প্রত্যাশা। আমরা শুধু সিলেট নয়, সারাদেশের সব দর্শক-সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিজেদের সেরাটা উজার করে দেব।

মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ২-০ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। দেশে সিলেটে এসেই রিকভারির দিকে বাংলাদেশ গুরুত্ব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কোচ জাভিয়ের কাবরেরা। 

তিনি বলেন, সিলেটে এসেই মালদ্বীপ ম্যাচের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করেছি। ছেলেদের সঙ্গে খুবই ভালো সেশন গিয়েছে। ম্যাচের আগে আরেকটা সেশন পাব। আমরা জয়ের বিকল্প কিছু ভাবছি না। 

আজকের ম্যাচের কৌশল কি হতে পারে জানতে চাইলে কোচ বলেন, ‘দ্টুা ম্যাচের পরিকল্পনা ও মনোভাব ভিন্ন রকম হবে। মালদ্বীপ এমন একটা দল, যারা টেকনিক্যালি মেধাবী, তারা বিল্ড-আপের সময় সম্ভবত বেশি ঝুঁকি নেয়। আমার মনে হয়েছে মঙ্গোলিয়া প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর দল। মালদ্বীপের মতো কৌশলী নয়, সম্ভবত ডিরেক্ট ফুটবল খেলে। তবে নিজেদের পরিকল্পনা নিয়েই আমাদের মনোযোগী হতে হবে। কিভাবে আমরা কৌশলগুলো রপ্ত করব, মাঠে প্রয়োগ করব, প্রতিপক্ষের চেয়ে আমাদেরকে এদিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আগের ম্যাচের মতো ৪-৪-২ এর বদলে এবার নতুন কিছু দেখতে পারবেন। মালদ্বীপে আমরা ওটা করেছি যাতে মাদ্বীপের বিল্ড-আপ ফুটবল আটকে দিতে পারি।’

রক্ষণভাগের শিষ্যদের প্রশংসা করে কোচ বলেন, ‘রক্ষণে আমাদের জমজমাট। আক্রমণভাগে রাকিব ও সুমন ভালো করছে। আবারও বলছি, আমাদের নিজেদের নিয়েই ভাবছি। মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে যেন মালদ্বীপ ম্যাচের ইতিবাচক দিকগুলো থাকে, পাশাপাশি চেষ্টা করছি ওই ম্যাচের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে আমরা মাঠে নামতে পারি।’

এদিকে ২১ বছর আগের দুঃখ ঘোচাতে মরিয়া মঙ্গোলিয়াও। নিজেদের প্রস্তুতি যথেষ্ঠ নয় মানলেও জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী দলটি। দলটির কোচ ইচিরো অচোকা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি খুব একটা ভালো নয়, কিন্তু তারপরও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুনে আমাদের সামনে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব আছে। এই ম্যাচটা আমাদের জন্য প্রস্তুতির সুযোগ। অবশ্যই এই ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

তবে মঙ্গোলিয়ান কোচকে ভাবাচ্ছে বাংলাদেশের আবহাওয়া। এই গরমের সঙ্গে খেলোয়াড়রা কতটা মানিয়ে নিতে পারবে সেটাই ভাবাচ্ছে তাকে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোচ ইচি বলেন, ‘এখানে তাপমাত্রা অনেক গরম। তবে আজকে খুব বেশি না। আমাদের জন্য ভালোই বলা চলে। মঙ্গোলিয়ায় এখনো হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রা। তবে খেলোয়াড়দের কী অবস্থা সে সম্পর্কে আমার ধারণা খুব কম। তবে আশা করি ভালো একটা ম্যাচই হবে।’

দলের প্রস্তুতি যথেষ্ঠ নয় উল্লেখ করে ইচি বলেন, ‘জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমি মঙ্গোলিয়ার কোচ হয়ে এসেছি। এসময় তাপমাত্রা ছিল -২০ ডিগ্রির মতো। খেলোয়াড়রা গত নভেম্বরের পর থেকে অনুশীলন করার সুযোগ পায়নি। আমরা মার্চ থেকে অনুশীলন শুরু করেছি। মাত্র ৭ জন খেলোয়াড় নিয়ে আমরা অনুশীলন শুরু করেছিলাম। এমনকি সব খেলোয়াড়ের নামও আমি জানি না। বুঝতেই পারছেন আমাদের অনুশীলনটা একদমই ভালো হয়নি। জুনে আমাদের বড় কয়েকটা ম্যাচ আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো। খেলোয়াড়দের জন্যও।’

এদিকে মঙ্গোলিয়ান খেলোয়াড়রা ঘাসের মাঠের খেলায় অভ্যস্থ নয় বলে জানান দলটির জাপানি কোচ ইচি। বলেন, ‘মঙ্গোলিয়ায় আর্টিফিসিয়াল মাঠে খেলা হয়। আমাদের খেলোয়াড়েরা ঘাসের মাঠে খেলে অভ্যস্ত নয়। তাই এখানে খেলাটা কঠিনই হবে। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচে কিন্তু ঘাসের মাঠেই খেলা হয়, তাই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করব।’

ঐতিহ্যগতভাবে কুস্তি জনপ্রিয় দেশটির ফুটবল দলের কোচ বন্ধুর কাছে জেনেছেন বাংলাদেশে অনেক ভালো ফুটবলার আছে। ইচি বলেন, ‘আমার বন্ধু আমাকে বলেছে বাংলাদেশে অনেক ভালো ফুটবলার আছে। অধিনায়ক অনেক ভালো ফুটবলার। গোলরক্ষক জিকোও দারুণ। অনেক কঠিন হবে। বাংলাদেশ দল অনেক দ্রæত আক্রমণে যায়। অধিনায়ক অনেক দূর থেকে পাস দেয় শুনেছি।’

মঙ্গোলিয়া অধিনায়ক টিসেন্ড আইয়ুশ বলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে পারাটা সৌভাগ্যের। বাংলাদেশ দলের খেলা আমার স্মৃতিতে খুব ভালোভাবেই আছে। ২১ বছর আগের সেই ড্র মঙ্গোলিয়ার ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সেটাই ছিল আমাদের প্রথম পয়েন্ট পাওয়া। মঙ্গোলিয়ার থেকে এখানকার তাপমাত্রা অনেক ভিন্ন। লাওসে আমরা সাতদিন অনুশীলন করেছি তাই প্রস্তুতিটা খুব একটা খারাপও না। লড়াই করতে প্রস্তুত আমরা।’

আরসি-০২