দেশের ২৮৫৬ লেভেল ক্রসিংয়ের প্রায় অর্ধেকই অবৈধ

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ৩১, ২০২২
০২:৫৩ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ৩১, ২০২২
০৩:০২ অপরাহ্ন



দেশের ২৮৫৬ লেভেল ক্রসিংয়ের প্রায় অর্ধেকই অবৈধ

ছবি- প্রতীকি

সারা দেশে রেলওয়ের বিদ্যমান ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই অবৈধ আর নাজুক। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে এমন দাবি করেছে। 

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় যানবাহন কার্যালয় (ডিটিও) সূত্রে সংগঠনটির এ দাবির সত্যতা জানা গেছে। তবে তারা কোনো তথ্য-উপাত্ত দিতে রাজি হয়নি।

এ ছাড়া রেলওয়েতে দীর্ঘদিন গেটম্যান নিয়োগ প্রক্রিয়াও বন্ধ। এসব সংকটের কারণে লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা লেগেই আছে।

শুধু গত ৭ মাসে রেলপথে ছোট-বড় ১ হাজার ৫২টি দুর্ঘটনায় ১৭৮ জনের প্রাণহানি ও ১ হাজার ১৭০ জন আহত হয়েছেন। গত আড়াই বছরে লেভেল ক্রসিংয়ে ১১৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২১৯ জন। ২০২০ সাল থেকে গত ২৯ জুলাই পর্যন্ত হওয়া এসব দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর তথ্য গতকাল রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই গেটম্যানদের অবহেলার কারণে সংঘটিত হয়েছে। অথচ গত সাত বছর আগে অস্থায়ী গেটম্যান নিয়োগ ও নাজুক ক্রসিংগুলো সংস্কারের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ দুটি প্রকল্প হাতে নিলেও তেমন সুফল নেই। এসব প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থই অস্থায়ী গেটম্যানের বেতন-ভাতার পেছনে ব্যয় হওয়ায় রেলক্রসিংয়ের সংস্কারকাজ তেমন হয়নি। যার কারণে প্রতিনিয়ত লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে ট্রেন ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ১১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

রেলওয়ের সর্বশেষ ওয়ার্কিং টাইম টেবিলের (৫২ নম্বর) তথ্যানুসারে, চট্টগ্রাম বিভাগে বৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে ১৩৭টি। এর মধ্যে রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের ৬১টি ও প্রকৌশল বিভাগের ৭৬টি এবং ঢাকা বিভাগে বৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে ৩৭৫টি। এর মধ্যে রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের ১৬৭টি ও প্রকৌশল বিভাগের ২০৮টি। এ ছাড়া রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে বিদ্যমান লেভেল ক্রসিংয়ের প্রায় অর্ধেকই অবৈধ। এর বাইরেও শতাধিক লেভেল ক্রসিং গড়ে উঠেছে। যদিও রেলের নথিতে এসব লেভেল ক্রসিংয়ের তথ্য নেই।

গতকাল শুক্রবার শান্তা ফারজানা স্বাক্ষরিত সেফ দ্য রোডের বিবৃতিতে বলা হয়, সারা দেশে ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টি অবৈধ। বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে ৬৩২টিতে গেটকিপার নেই।

এদিকে, রেলক্রসিং পারাপারে জনসচেতনতার ঘাটতি দেখছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিজের জীবনের নিরাপত্তা আগে। সবাইকে চিন্তা করতে হবে, লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকুক আর না থাকুক; পার হওয়ার আগে সিগন্যালটা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়; ট্রেন আসতে থাকায় ক্রসিংগুলোতে সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে বা গেটম্যান বার ফেলেছে; এরপরও অনেকে এসবকে তোয়াক্কা না করে তাড়াহুড়ো করে পার হচ্ছে; যা কোনোভাবে কাম্য নয়।’ 

তিনি বলেন, ‘ট্রেন চলে তার নিজস্ব গতিতে; তা তৎক্ষণাৎ থামানো সম্ভব নয়। তাই রেলক্রসিং পারাপারে সবাইকে সচেতন হওয়া জরুরি। পাশাপাশি জননিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সারা দেশে বিদ্যমান লেভেল ক্রসিংগুলোকে সামনে ওভারপাস বা আন্ডারপাসে রূপান্তর করা প্রয়োজন। এতে রেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাবে।’ 

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিংগুলোর পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন শীর্ষক দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। চার বছর মেয়াদে প্রকল্পের অধীনে পূর্বাঞ্চলে ৩২৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের মানোন্নয়ন ও ১ হাজার ৩৮ জন গেটকিপার নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৮১৭ জন নিয়োগ হলেও ‘অনিয়মিত বেতন-ভাতার কারণে’ নিয়োগপ্রাপ্তদের বড় একটি অংশই চাকরি ছেড়ে দেন। শুরুর দিকে এই প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। প্রথম দফায় ২০১৯ সালের জুনে মেয়াদ শেষ হওয়ায় দি¦তীয়বার সংশোধিত এই প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। তখন প্রকল্পের আকার ১০০ কোটি টাকা করা হয়। যদিও অস্থায়ী গেটম্যানদের বেতন-ভাতা পরিশোধে এই প্রকল্পের দুই-তৃতীয়াংশ টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু রেল ক্রসিংয়ে তেমন কোনো সংস্কারকাজ করা হয়নি।

এই প্রকল্প প্রসঙ্গে জানতে পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিংগুলোর পুনর্বাসন-মানোন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক শেখ নাইমুল হক, পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ও ডিটিওর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তা সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। মূলত অস্থায়ী গেটম্যানদের বেতন-ভাতায় এসব অর্থ ব্যয় করা হয়। এর মধ্যে অস্থায়ী হওয়ায় অনেক গেটম্যান চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এতে সংকট তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় স্থায়ী গেটকিপারও নিয়োগ হচ্ছে না। সবকিছু মিলে একটি সংকট তৈরি হয়েছে। আশা করি শিগগিরই নতুন নিয়োগের মাধ্যমে এই সংকট কেটে যাবে।

সূত্র : দেশ রূপান্তর

এএফ/১