সিলেটে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে উত্তাপ, সংঘাত

সিলেট মিরর ডেস্ক


নভেম্বর ১৭, ২০২২
০৩:২৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৭, ২০২২
০৩:২৪ পূর্বাহ্ন



সিলেটে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে উত্তাপ, সংঘাত

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিলেটের রাজনীতি। সমাবেশ সফলে সিলেটজুড়ে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে দলটি। গত কয়েকদিনে প্রচার কার্যক্রম চলাকালে একাধিক স্থানে হামলা ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। সরকারদলীয় ও পুলিশের বিরুদ্ধে এসব হামলার অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। এছাড়া গ্রেপ্তারও হয়েছেন বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী।


বিএনপি নেতাদের শঙ্কা সমাবেশের আগে গণগ্রেপ্তার চালাতে পারে পুলিশ। একারণে নেতাদের অনেকে রাতে বাসায় থাকছেন না বলেও জানিয়েছেন তারা। এছাড়া আরও হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলেও শঙ্কা তাদের। সবমিলিয়ে সমাবেশ যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তাপ।


অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা করছে পুলিশও। তাই শুক্রবার থেকে সিলেটে শুরু হতে যাওয়া দুদিন ব্যাপী ইজতেমা পিছিয়ে নিতে বলেছে মহানগর পুলিশ। বিএনপির সমাবেশের পর ইজতেমা আয়োজন করে মঙ্গলবার আয়োজকদের অনুরোধ করে পুলিশ। তবে আয়োজকরা তা না শুনে বুধবার থেকেই ইজতেমা শুরু করেন।


বুধবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের লাখাইয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৮ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।


এরআগে মঙ্গলবার মধ্যরাতে সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে উপজেলা বিএনপির বৈঠক চলাকালে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।


এ সময় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহির খানকে আটক করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।


মঙ্গলবার বিকেলেই ওসমানীনগরে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা তাহসিনা রুশদীর লুনার গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়। লুনা নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী।


তার অভিযোগ, গণসমাবেশের প্রচারপত্র বিলিকালে পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে তার গাড়ি ভাংচুর করে। এসময় পুলিশ উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য ফয়সল আহমদ মিলন ও উমরপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা নুরুল ইসলামকে আটক করে বলেও জানান লুনা।


তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমদ আম্বিয়া পাল্টা অভিযোগ করেন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কর্মসূচী চলাকালে বিএনপি নেতাকর্মীরাই তাদের উপর হামলা চালায়।


একই দিনে, সিলেটের বিয়ানী বাজারেও বিএনপি প্রচার মিছিল চলাকালে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ। বিয়ানীবাজারের দক্ষিণবাজারে সমাবেশ সফলের আহ্বানে ছাত্রদল মিছিল বের করলে তাদের ধাওয়া করা হয়। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতারা অন্যত্র সরে যান।


ধাওয়ার বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাওছার আহমদ বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উস্কানিমুলক শ্লোগান দিয়ে এখানকার পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করেছিলো। ছাত্রলীগ সেটি প্রতিহত করেছে।


এরআগে গত সোমবার সিলেটের কানাইঘাটে, রোববার গোলাপগঞ্জে এবং মৌলভীবাজারে প্রচারপত্র বিলিকালে পুলিশ বাধা  প্রদান করে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।


সিলেট জেলা বিএনপির সভপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই সমাবেশের দিন যত ঘনিয়ে আসছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ততই বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা আমাদের প্রচার কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। হামলা চালাচ্ছে। তবে কোন বাধাই ১৯ নভেম্বর সিলেটে সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না।


মামলা

ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার ও বানিয়াচংয়ের ঘটনায় সিলেট ও হবিগঞ্জে প্রায় ৫শ' বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করে তিনটি মামলা হয়েছে। এর একটি মামলা হয়েছে ওসমানীনগর থানায়, একটি বানিয়াচং থানায় ও অপর মামলাটি হয়েছে বিয়ানীবাজার থানায়। এ নিয়ে ৬ নভেম্বরের পর থেকে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা হলো।


ওসমানীনগরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় সোয়া ৩০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এ ছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিএনপির অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার তথ্য বুধবার বিকেলে জানাজানি হয়।


এছাড়া হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির শতাধিক নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার রাতে মামলাটি করেন বানিয়াচং থানার উপপরিদর্শক শামসুল আরেফিন।


ধরপাকড়ের অভিযোগ

গণসমাবেশের আগে পুলিশ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাদের ধরপাকড় করছে বলে অভিযোগ দলটির নেতাদের।


তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, আগে থেকে মামলা থাকা ও  পুলিশের কাজে বাঁধা দেওয়ায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে কাউকেই ধরা হয়নি।


সিলেট জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিয়ানীবাজার উপজেলায় এক জন, কানাইঘাট উপজেলায় এক জন, বানিয়াচয়ংয়ে একজন, নবীগঞ্জে ৪ জন এবং ওসমানীনগর উপজেলায় দুই জন নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।


এরআগে সোমবার ভোররাতে হবিগঞ্জে বিএনপির ৩ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৫ নম্বর গুপায়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, একই ইউনিয়নের সাবেক আহ্বায়ক মো.শাহিন মিয়া ও সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ।


হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জিকে গউছের অভিযোগ, সমাবেশ সফলে বিএনপির প্রচার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করতেই পুলিশ আমাদের ৩ নেতাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না।


যদিও হবিগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা জানিয়েছেন, আগের একটি ভাঙচুর মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


এর আগে রোববার মৌলভীবাজার থেকে লিফলেট বিতরণকালে পুলিশকে মারধরের অভিযোগে জেলা ছাত্রদলের সভাপতিসহ বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিন দুপুরে শহরের চৌমুহনী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।


পরদিন দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে ১২ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।


মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মশিউর রহমান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা লিফলেট বিতরণকালে পুলিশকে মারধর করে। মারধরের ঘটনায় কয়েজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।  এ কারণেই মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


বিনা কারণে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করছে অভিযোগ করে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, কেবল সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করা ও নেতাকর্মীদের মধ্যে আতংক ঢুকিয়ে দিতেই এমনটি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সাথে পুলিশও আমাদের উপর হামলা চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারা ভয়কে জয় করে নিয়েছে। আর কোন বাধা দিয়ে কাজ হবে না।


তবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপিরই কাজই হচ্ছে মিথ্যাচার। মিথ্যা কথা বলে তারা মানুষকে উস্কে দিতে চায়।


শফিক বলেন, আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের কেউ কোথাও তাদের উপর হামলা চালায়নি। তারাই বরং হামলা চালাচ্ছে। এই নগরীতেই তারা মিছিল করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করেছি। তবু আমাদের নেতাকর্মীরা সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে।


আর পুলিশের সিলেট রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পুলিশ নিজে আক্রান্ত না হলে বা সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না পেলে তাদের বাধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপি নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করছে। বিনা কারণে কাউকে আটকও করা হয়নি।


এসই/০৪