কি ঘোষনা দেবেন আরিফুল হক চৌধুরী ?

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ২০, ২০২৩
০২:৫৭ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২০, ২০২৩
০৩:৩০ অপরাহ্ন



কি ঘোষনা দেবেন আরিফুল হক চৌধুরী ?



সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা দুবারের মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সেটিই এখন টক অব দ্যা সিটি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। 

নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা এবিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পাষ্ট করতে আজ শনিবার বিকেলে সিলেট শহরে রেজিস্টারি মাঠে ‘ভোটার, সমর্থক ও কর্মীদের’ নিয়ে সমাবেশ ডেকেছেন আরিফুল হক। এই সমাবেশ থেকে নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে তিনি এর আগে ঘোষণা দিয়েছেন।

বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু জনপ্রিয়তা বিবেচনায় আরিফুল হক সিলেটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন, সে আলোচনা শুরু থেকেই রয়েছে। তবে তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। ফলে বিষয়টি নিয়ে সিলেটের মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, এই নির্বাচন নিয়ে তিনি নানামুখী চাপে আছেন। একদিকে দলীয় অবস্থান, অন্যদিকে পারিপার্শ্বিক অবস্থা—সব মিলিয়ে নানা হিসাব–নিকাশ মেলাতে হচ্ছে তাঁকে।

আরিফুল হক ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রয়াত মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে প্রথমবার মেয়র হন। ২০১৮ সালের পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চারটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। একমাত্র সিলেটে বিএনপি থেকে আরিফুল হক মেয়র নির্বাচিত হন। যে কারণে এবারও সিলেটের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল বেশি।

তাঁর ঘনিষ্টজনরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এখন আন্দোলনে রয়েছে। এ অবস্থায় দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে আরিফুল হককে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা নিরুৎসাহিত করেছেন।  দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে গিয়ে পরাজিত হলে তাঁকে দলীয় রাজনীতিতে মূল্য দিতে হবে।

এদিকে আজ ২০ মে  নাগরিক সভা করে সিটি নির্বাচনে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন, এটা আগেই জানিয়েছিলেন আরিফুল হক। গত মঙ্গলবার সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফের কাছে নাগরিক সভার বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে নগরের রেজিস্টারি মাঠে মঞ্চ নির্মাণের জন্য শ্রমিকেরা উপকরণ নিয়ে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সদস্যরা শ্রমিকদের জানান, নাগরিক সভা করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। খবর পেয়ে সাড়ে চারটার দিকে সেখানে ছুটে যান মেয়র আরিফুল হক। পুলিশ তাঁকেও মাঠে ঢুকতে বাধা দেয়।

দলীয় সূত্র জানায়, মাঠের প্রধান ফটক বন্ধ করে রাখায় মেয়র আরিফুল হক ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না। এরপর তিনি ফটকের সামনে একটা চেয়ার পেতে অবস্থান নেন। সভা করার অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত ফটকের সামনেই অবস্থান করবেন বলে ঘোষণা দেন। খবর পেয়ে তাঁর সমর্থকেরা নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সেখানে জড়ো হন। এ অবস্থায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ আগের সিদ্ধান্ত বদল করে সভা করার মৌখিক অনুমতি দেয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস গণমাধ্যমকে বলেন, নাগরিক সভা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে আরিফুল হককে প্রথমে সভা না করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। পরে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁকে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়।

সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ফটক খুলে দেওয়া হলে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আজ শনিবার বেলা তিনটায় পূর্বনির্ধারিত সভা হবে। সেখানেই তিনি প্রার্থিতার বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও দলটির মনোনয়ন নিয়ে টানা দুই বারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। গত মাসের শুরুতে আরিফুল হক লন্ডনে যান। প্রায় দুই সপ্তাহে সেখানে তিনি অবস্থান করেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সবুজ সংকেতের জন্যই তিনি লন্ডনে গিয়েছিলেন বলে তাঁর অনুসারীরা মনে করেন। তবে তিনি প্রার্থী হলে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রশ্নের মুখে পড়বে—এমন বার্তা দিয়ে দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আরিফুলের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয় বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

এবিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দল–মতনির্বিশেষে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাপ দিচ্ছেন। অন্যদিকে যৌক্তিক কারণেই তাঁর দল বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আজ শনিবার ৪২টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে জনসভায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন তিনি।

এদিকে গত বুধবার এক সভা শেষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে বলেন, আমি উনাকে (মেয়র আরিফ) ওয়েলকাম জানাই কারণ উনি একজন সম্মানিত মানুষ। ২০ তারিখে উনি জনসভা ডেকেছেন, আমরা আশা করবো উনি নির্বাচনে সাড়া দেবেন এবং আগামী ২১ জুনের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতিকেই নির্বাচন করবেন।

নির্বাচন অংশগ্রহনমুলক হোক প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, সিলেটের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতিসহ সব কিছুই আছে। এটা ছোটখাটো বিষয়। ২৩ তারিখ নমিনেশন দাখিলের শেষ দিন। এখনও সময় আছে। উনি দুই বারের মেয়র। তাঁর বিশাল একটা বিষয় আছে। তিনি নির্বাচনে আসুন। আমি নৌকা আর উনি ধান নিয়ে নির্বাচন করুক। জনগণ যাকে ভোট দিবে সেই নির্বাচিত হবে এটাই মুল কথা।

তবে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিলেট রেজিষ্টারি মাঠের জনসভায় আরিফ কি ঘোষনা দেন তাই দেখার অপেক্ষায় নগরবাসী।

উল্লেখ্য নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সিলেট সিটি নির্বাচনের ভোট হবে আগামী ২১ জুন। মনোনয়নপত্র দাখিল করার শেষ দিন ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। ২ জুন প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে পারবেন।


এসই/ ০৪