নতুন ওয়ার্ডে ভোটার বেশি, পুরনো ওয়ার্ডে কম

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ২১, ২০২৩
০৪:২১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২১, ২০২৩
০৪:২১ অপরাহ্ন



নতুন ওয়ার্ডে ভোটার বেশি, পুরনো ওয়ার্ডে কম

বাইরে জটলা থাকলেও ভেতরে ভোটার উপস্থিতি হাতে গোনা। ছবিটি নগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ইউসেপ ঘাসিটুলা টেকনিক্যাল স্কুল ভোট কেন্দ্রের। ছবি- সিলেট মিরর


সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৪২ ওয়ার্ডের মধ্যে পুরনো ২৭টি এবং নতুন সংযুক্ত হয়েছে আরো ১৫টি ওয়ার্ড। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে এবারই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেকারণে ওয়ার্ডগুলোতে ভোটারদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। তবে পুরনো ২৭ ওয়ার্ডে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এসব ওয়ার্ডে যতটা না ভোটার উপস্থিতি তারচেয়ে বেশি জটলা দেখা গেছে কেন্দ্রের বাইরে।  ফলে পুরনো ওয়ার্ডে ভোট দিতে এসে দ্রুত ভোট দেওয়া গেলেও পুরনো ওয়ার্ডে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ভোটারদের।

আজ বুধবার (২১ জুন) সরেজমিন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র ঘুরে, ভোটার, প্রার্থী এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলিয়া মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে বেলা দেড়টার দিকে ভোট দেন প্রকাশক রাজীব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দাঁড়াতে হয়নি।’ একই কথা বললেন নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা প্রণতি রাণী পাল। তিনি বলেন, ‘সময় লাগেনি। ৯টার দিকে গিয়েছিলাম। লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়ে বেরুতে ১০ মিনিটের মতো লেগেছে। দ্রুতই ভোট দেওয়া গেছে।’ 

নগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ইউসেপ ঘাসিটুলা টেকনিক্যাল স্কুল ভোটকেন্দ্রে বেলা দেড়টার দিকে গিয়ে দেখা গেল ভোটার উপস্থিতি কম। ভোট কেন্দ্রে কথা হয় লামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৎস ব্যবসায়ী হুমায়ুন আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বেশি সময় লাগেনি। লাইনে দাঁড়ানোর পর তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে ভোট দিতে পেরেছি।’  একই ওয়ার্ডের জালালাবাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোট কেন্দ্রে ভোট দেন কামরুল হাসান এহিয়া। তিনিও বলেন, ‘ভোট দিতে তেমন সময় লাগেনি। ভিড় ছিল না তেমন। আট-দশ মিনিটে ভোট দিতে পেরেছি।’

ইউসেপ ঘাসিটুলা টেকনিক্যাল স্কুল ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অরবিন্দ কুমার দত্ত বলেন, ‘আমার এখানে খুব সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। ভোটাররা দ্রুত ভোট দিতে পেরে সন্তুষ্ট। একটা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪১০ জন ভোট দিয়েছেন।

সিসিকের পুরো ২৭টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ভোটারদের খুব বেশি সময় লাইনে অপেক্ষা করতে হয়নি। তুলনামূলক দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা ভোট দিয়েছেন। তবে সম্প্রসারিত সিটি করপোরেশনের নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটারদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এসব কেন্দ্রে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। 

সিটি করপোরেশনের নতুন অন্তভূক্ত ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তিরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় পুরুষ ও নারীদের দীর্ঘ সারি। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এক থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে তারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ভোট নেওয়ার গতি মন্থর। এই কয়েকদিন পর সূর্য তার তেজ দেখানোর কারণে গরমে কষ্ট পাচ্ছিলেন ভোটাররা। 

স্থানীয় মীরেরচক গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ভোটার রোকেয়া বেগম প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে গরমে কাহিল হয়ে সারিতেই মাঠে বসে পড়েন। তার এই অবস্থা দেখে মহিলা বুথে নিয়ে তাকে ভোট দিতে সহযোগিতা করেন এক পুলিশ সদস্য।

রোকেয়া বেগম বলেন, ‘ইভিএমে ভোট নেওয়া হচ্ছে স্লো গতিতে। আমরা অনেক্ষণ দাড়িয়ে থেকেও বুথে ঢুকতে পারছি না, কষ্ট হচ্ছে।’ তবে বুথে ঢোকার পর তার ফিঙ্গারপ্রিন্টে সমস্যা না হওয়ায় দ্রুত ভোট দিয়ে ফিরে এসেছেন বলে জানান তিনি।

এই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা তরুণ ভোটার সোহেল আহমদ বলেন, আমি লাইনে আগে থাকলে মুরুব্বিদের কষ্ট দেখে তাদেরকে সুযোগ দিচ্ছি। কিন্তু একটি বুথে একটি মেশিন। আরেকটি মেশিন হলে সহজ হতো।

সিসিকের নতুন অন্তভুক্ত ৪২ ওয়ার্ডের সিরাজ উদ্দিন আহমদ একাডেমি ভোট কেন্দ্রে কথা হয় সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আহমেদুর রব। তিনিও অভিযোগ করে বলেন, ‘ভোট প্রক্রিয়া অতিরিক্ত স্লো। নারী ভোটাররা গরমের মধ্যে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন।’

দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে কথা হয় শ্রীরামপুরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি ভোট দিতে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সকাল সাড়ে ৮টায়। প্রায় চার ঘণ্টা দাঁড়িয়েও ভোটের লাইনে তখনো অন্তত ১৫ জনের পেছনে তিনি। নিজের প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ‘সংসারের কাজ ফেলে সকাল সকাল এসেছিলাম দ্রুত ভোট দিয়ে চলে যাবো বলে। কিন্তু চার ঘণ্টায়ও ভোট দেওয়া যায়নি।’

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিরাজ উদ্দিন আহমদ একাডেমি ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রাণতোষ গুপ্ত বলেন, ‘দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ৪১৪ জন। এর মধ্য পুরুষ ভোটার ২৩২ এবং নারী ভোটার ১৮২ জন।’ ধীরগতিতে ভোট হওয়ায় নিয়ে ভোটারদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মেশিনে কোনো ত্রুটি নেই। এখানে যারা ভোট দিতে আসছেন তারা অভিজ্ঞ নন। যে কারণে অনেকের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ভোটাররা বেশি সময় নিচ্ছেন। যে কারণে ভোট প্রক্রিয়া কিছুটা মন্থর হচ্ছে।’ 

সিলেট সিটিতে ১৯০টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ৩৬৭টি ভোটকক্ষে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৩৬ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন এবং ছয়জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।

এই সিটিতে মেয়র পদে আটজন, ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৯৪ জন এবং ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাকের পার্টির মো. জরিহুল আলম, স্বতন্ত্র মো. আব্দুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মো. শাহ জাহান মিয়া এবং মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।


এএফ/০৭