হবিগঞ্জে আসা পাকিস্তানি সেই নারীকে মারধরের অভিযোগ

সিলেট মিরর ডেস্ক


ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩
০২:২১ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩
০২:২১ অপরাহ্ন



হবিগঞ্জে আসা পাকিস্তানি সেই নারীকে মারধরের অভিযোগ


স্বামীর সন্ধানে পাকিস্তান থেকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে আসা নারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। তাঁর অভিযোগের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, একটি মামলার জেরে মাহা বাজায়ো নামের ওই নারীকে স্বামীর আত্মীয়-স্বজন পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বড়াইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, পাকিস্তানি নারীকে মারপিটের খবর পেয়েছেন। এটি তাঁদের পারিবারিক বিরোধ। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী নারী মাহা বাজোয়া জানান, গত বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জ আদালত থেকে তাঁর স্বামীর চাচাতো ভাই স্বপন মজুমদারের সঙ্গে উপজেলার বড়াইল গ্রামে স্বামীর বাড়িতে যান। বৃহস্পতিবার সকালে শ্বশুরবাড়িতে তাঁর স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও ভাইবোন মিলে তাঁকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে জাতীয় জরুরি নম্বরে ৯৯৯ ফোন করে পুলিশকে জানানো হয়। পরে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়।

সাজ্জাদ মজুমদারের চাচাতো ভাই স্বপন মজুমদার বলেন, গতকাল ওই নারীকে আদালত থেকে সঙ্গে করে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। তাঁর সঙ্গে আপস করা চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল বুধবার হবিগঞ্জ আমলি আদালতে পাকিস্তানি নারী তাঁর স্বামী সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করেছেন। এটি তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলা। মামলায় তিনি তাঁর অনুমতি ছাড়া স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে এবং প্রতারণার অভিযোগ করেন। এ মামলায় বৃহস্পতিবার আদালত মামলার তদন্ত ভার দেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। এ আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাহেলা পারভীন।

মুসলিম পারিবারিক আইনের ৬(৫) ধারায় এবং দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ধারায় এই মামলা দায়ের করা হলেও হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহেলা পারভীন ৪০৬ ও ৪২০ ধারা আমলে নেননি। তিনি মুসলিম পারিবারিক আইনের ৬(৫) ধারা আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ আমলি আদালত-২-এর পেশকার তাজুল ইসলাম।

এর আগে একই আদালতে মাহা বাজোয়া তার স্বামী তাজুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা যৌতুকের মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আসামীর বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করে আদালত।

মাহা বাজোয়া বলেন, তিনি যেকোনো মূল্যে স্বামী সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে সংসার করতে চান। তাঁর আট বছরের মেয়ে বাবার জন্য পাগলপ্রায়। 

তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী সাজ্জাদ হোসেন তাঁর অনুমতি ছাড়াই অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করে বাংলাদেশে এসেছেন। যাঁকে তিনি বিয়ে করেছেন সেই বাড়ির মালিকের গাড়ি চালক ছিলেন সাজ্জাদ। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামে। এ খবর জেনেই তিনি স্বামীর খোঁজে চুনারুঘাট আসেন।

আদালত সূত্র জানায়, পাকিস্তানের লাহোর প্রদেশের বাসিন্দা মকসুদ আহমেদের মেয়ে মাহা বাজোয়ার সঙ্গে ১০ বছর আগে সাজ্জাদ হোসেনের পরিচয় হয়। পরে তাঁরা ৩০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়েও করেন। তাঁদের সংসারে জান্নাত নামে আট বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

বিয়ের পর মাহা বাজোয়া ও সাজ্জাদ দুবাই, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করেন। ২০১৮ সালে মাহা সাজ্জাদের বাড়িতে কয়েক মাস অবস্থান করেন। পরে মাহা বাজোয়া পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর স্বামীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। গত ১৭ নভেম্বর মাহা বাজোয়া পাকিস্তান থেকে স্বামীর বাড়িতে এসে অবস্থান নেন। স্বামী সাজ্জাদ মজুমদার তাঁর স্ত্রীর প্রতি অবহেলা করার পাশাপাশি ব্যবসা করার জন্য ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন।

গত ৮ ডিসেম্বর যৌতুকের ১০ লাখ টাকা না দেওয়ায় মাহা বাজোয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেন সাজ্জাদ। পরে মাহা বাজোয়া বাদী হয়ে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় স্বামী সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।


কালের কণ্ঠ/এএফ-০৫