বিশ্ব পাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়ন

শুয়াইব হাসান, দুবাই থেকে


নভেম্বর ১৪, ২০২১
০৪:৪৫ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৪, ২০২১
০৪:৪৫ অপরাহ্ন



বিশ্ব পাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়ন
# পরিসংখ্যানে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে # শক্তিমত্তায় পিছিয়ে নেই নিউজিল্যান্ড

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সপ্তম শিরোপার লড়াইয়ে আজ রবিবার (১৪ নভেম্বর) মুখোমুখি হচ্ছে তাসমান সাগরপাড়ের দুই দেশ নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম এই সংস্করণে আগের ছয় আসরে শিরোপার স্বাদ পায়নি দল দুটি। তাই, প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলতে মরিয়া দল দুটি।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় (দুবাই সময় ৬টা) শুরু হবে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ফাইনাল খেলা। দ্বিতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ২০১০ সালে ফাইনালে উঠলেও শিরোপার স্বাদ পায়নি। ইংল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে ম্যাচ হারে। এরপর আর ফাইনালে উঠার সুযোগ হয়নি ক্রিকেটমোড়লদের। সপ্তম আসরে এসে আবারও ফাইনালে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া।

অজিদের সেমিফাইনাল কিছুটা কঠিনই ছিল। তবে, প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের জয়রথ থামিয়ে পাঁচ উইকেটের জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমির ম্যাচে বেশিরভাগ সময়ই আধিপত্য বিস্তার করে খেলে পাকিস্তান। চালকের আসনেই ছিল তারা। কিন্তু, ১৬ থেকে ১৯ ওভারের মধ্যে ম্যাচে মোড় ঘুরিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটসম্যান মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথিউ ওয়েড।

পরিসংখ্যানেও নিউজিল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট ক্রিকেটে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ৬০ বার। অজিরা জিতেছে ৩৪ বার আর কিউইরা ৮টিতে। ওডিআইতে ১৩৭ বার খেলে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৯২ বার আর নিউজিল্যান্ড ৩৯ বার। টি-টোয়েন্ট ১৪ বার মুখোমুখি হয়ে ৯টিতে অস্ট্রেলিয়া ও ৫টিতে নিউজিল্যান্ড জিতেছে।

আইসিসি আয়োজিত ওয়ানডে সংস্করণে অস্ট্রেলিয়া পাঁচবার বিশ্ব চাম্পিয়ন হয়েছে। নিউজিল্যান্ড এখনও এই সংস্করণে কাপ জেতেনি।

টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এখন পর্যন্ত সাতটি আসর হয়েছে। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাঁচটি দেশ। দুবার আসরের শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একবার করে ট্রফি ঘরে তুলেছে ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। এবার নিউজিল্যান্ড প্রথমবার ফাইনাল খেলতে নামছে। অন্যদিকে দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠে এই ফরম্যাটের শিরোপা জেতার জোরালো দাবি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের।

দলের ক্রিকেটার-কোচের কথায় সেই আক্ষেপ। এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস কত সমৃদ্ধ। এই একটি শিরোপাই শুধু অধরা। চক্রটা পূরণ করতে পারলে দারুণ হবে। তবে, সেটা আপনাকে অর্জন করে নিতে হবে। ইতিহাস আপনার হয়ে ব্যাটিং-বোলিং করবে না।’

অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার স্টয়নিসও বলেছেন, ‘টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে কেউ আমাদের হিসাবে রাখেনি। আমরা কেবল বিশ্বাস করেছি এবং চেষ্টা করে গেছি। এখন ট্রফি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে পারলে সেটা হবে সত্যিকারের অর্জন।’

আগের ছয় আসরে কিউইদের সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল সেমিফাইনাল। ২০০৭ ও ২০১৬ সালের সেমিতে খেললেও ফাইনালে খেলার সুযোগ এবারই প্রথম।

ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করতে চায় নিউজিল্যান্ড। দলের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বলছেন, ‘ওয়ানডে বিশ্বকাপে শেষ দুই আসরের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই প্রথম ফাইনাল খেলছি আমরা। শিরোপা জিতে এটাকে স্মরণীয় করতে চাই। অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে জিততে হলে তাদের চেয়ে ভালো খেলতে হবে সবক্ষেত্রেই। ম্যাচের শুরু থেকেই অজিদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।’

পুরো আসরেই এ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসমেন ও বোলাররা ভালো খেলেছে। দলের সেরা ব্যাটাররা রানের মধ্যেই আছেন। আসরে মিচেল ১৯৭, গাপটিল ১৮০, উইলিয়ামসন ১৩১ ও কনওয়ে ১২৯ রান করেছেন।

নিউজিল্যান্ডের বোলিংকে দারুণভাবে সামাল দিচ্ছেন দুই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত বোল্ট ১১টি ও সাউদি ৮ উইকেট নিয়েছেন। স্পিন বিভাগে দারুন ফর্মে আছেন ইশ সোধি। ৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। স্পিন ঘুর্ণিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারদর্শি তিনি। তাই, ব্যাটার ও বোলারদের সম্বনয়ে ফাইনাল মঞ্চে আরও একটি শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে নিউজিল্যান্ড।

এ বছর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল কিউইরা। তবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম শিরোপার স্বপ্ন নিউজিল্যান্ডের।

নিউজিল্যান্ডকে সমীহ করলেও ফাইনাল জিততে চান অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তিনি বলেন, ‘এটি ফাইনাল ম্যাচ। আর প্রতিপক্ষ হিসেবে নিউজিল্যান্ড অনেক ক্যালকুলেটিভ দল। তারা অনেক পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে নামবে। আমাদের সেভাবেই প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ফাইনাল জিততে হবে।’

তবে, ফাইনাল ম্যাচে চাপ অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। যা সেমি ফাইনালেও তারা অনুভব করেছেন। ফাইনালের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ফিঞ্চ আরও বলেন, ‘ম্যাচে কোনো সন্দেহ নেই, কিছু স্নায়ু চাপের মুহূর্ত থাকেই। যদি এমনটা না হয় তাহলে আমরা আর মানুষ থাকব না। (পাকিস্তানের বিপক্ষে) খ্বু চাপের ম্যাচ ছিল। সত্যি বলতে, আমরা সেই সময়ে (স্নায়ু চাপের) শেষ পর্যায়ে ছিলাম এবং এটা অবশ্য রোমাঞ্চকর।’

অস্ট্রেলিয়া দলটির শক্তিমত্তা সম্পর্কে খুব ভালো করে জানা আছে উইলিয়ামসনের। তাই, শিরোপা লড়াইয়ের আগে প্রতিপক্ষের ম্যাচ উইনারদের নিয়ে ভাবনায় নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক।

অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিংয়ে আছেন দুই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার। আছেন গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিসের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। কিপার-ব্যাটসম্যান ম্যাথিউ ওয়েড ব্যাট করতে পারেন যে কোনো জায়গায়। প্রয়োজনে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন, তার প্রমাণ মিলেছে সেমি-ফাইনালে। আর তাই ফাইনালের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে উইলিয়ামসনের কথায় ফুটে উঠল প্রতিপক্ষের ম্যাচ উইনারদের নিয়ে বাড়তি সতর্কতা।

তিনি বলেন, ‘অ্যাডাম জ্যাম্পা একজন বিশ্বমানের বোলার। দল হিসেবে, ওদের আছে অনেক ম্যাচ উইনার। আমার মনে হয়, এটাই ওদের শক্তির সবচেয়ে বড় জায়গা। তাদের বিশ্ব মানের সব ক্রিকেটার আছে।’

‘আমরা পরস্পরের বিপক্ষে অনেক ম্যাচ খেলি। দুই দলের ম্যাচে সব সময়ই দারুণ লড়াই হয়। আমার মনে হয়, রবিবার ম্যাচ নিয়ে দুই দলই অনেকটা রোমাঞ্চিত।’

আরসি-০৯