টেমস পাড়ে সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

আশরাফুল ওয়াহিদ দুলাল, বার্মিংহাম থেকে


সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
০৯:৩১ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
০৯:৩২ অপরাহ্ন



টেমস পাড়ে সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

‘মুছে যাওয়া স্মৃতিগুলি আমায় যে পিছু ডাকে’ কিংবা ‘স্মৃতি তুমি বেদনা‘-এ লাইনগুলি প্রত্যেক মানুষকেই তাড়িত করে।কিন্তু যদি হয় শৈশবের স্মৃতি তাহলে তো আর কথা নেই। কারণ নীরবে নিভৃতে শৈশব কৈশোরের স্মৃতির কথা মনে পড়লেই দু’চোখে ধরা দেয় বেদনা অশ্রু।

এবার বিদ্যালয়ের জীবনের শৈশব কৈশোরের ফেলে আসা দিনের স্মৃতিগুলিকে প্রাণবন্ত করে তুলতে, 'প্রবাহের স্রোতে এসো মাতি উল্লাসে, দূর প্রবাসে' শ্লোগানকে প্রবাসে বসবাসরত সিলেটের সুরমা পাড়ের সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন পাইলটিয়ান অ্যালুমিনাই ইউকে আয়োজন করলো পাইলটিয়ান মিলন মেলা-২০২২।

লন্ডনের স্থানীয় একটি হলে ব্রটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায়  সাড়ে তিন  শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে জমকালো অনুষ্ঠানে পুরানো সাথীদের পেয়ে চাঞ্চল্য আসে পুরো মিলনায়তনে। কারী একরামুল হকের কুরআন তেলাওয়াত ও রিংকু সিংহার পবিত্র গীতা পাঠের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রথমে কামরুল আহছানের পরিচালনায় প্রয়াত প্রাক্তন শিক্ষক ও  ছাত্রদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। রিংকু সিনহার তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংগীতের পরপরই পরিবেশিত হয় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের উদ্যোগে মিলন মেলার সংগীত।

বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের আদলে নির্মিত ফটকের পাশাপাশি প্রবীণদের মনোরঞ্জন ও শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে ছিল ক্যারম বোর্ড, চানাচুর, চটপটি কিংবা ফুসকার ব্যবস্থা।

চানাচুর, ফুসকার পাশিপাশি চলছিল জম্পেশ আড্ডা। এক পর্যায়ে প্রাক্তন ছাত্র ও সাংবাদিক মো. এমরান আহমেদের পরিচালনায়  মিলন মেলা উপলক্ষে উন্মোচিত হয় স্মরণীকা 'প্রবাসে প্রবাহ'-এর মোড়ক। প্রাক্তন ছাত্র ও এটিএন বাংলার হেড অব মার্কেটিং মো. আদিল চৌধুরীর পরিচালনায় সম্মাননা জানানো হয় মিলন মেলার সকল স্পন্সর ও বিজ্ঞাপনদাতাকে। ২০১৬-১৭ সালে সদ্য প্রাক্তন ছাত্রদের মাধ্যমে সম্মাননা জানানো হয় প্রাক্তন ছাত্র ১৯৬৭ সালে বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন সময়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পুরো পাকিস্তানের সর্বাধিক নাম্বার প্রাপ্ত মো. আব্দুর রকিবকে। গান নাচ আর কবিতার ফাঁকে ফাঁকে সম্মান জানানো হয় পাইলট অ্যালমোনাই এর পক্ষ থেকে প্রথমবার মিলন মেলা আয়োজন করায় মিজানুর রহমান মিজান, সুয়েব আদমজী, তৌহীদ ফিতরাত হুসেইন, শাহেদ শামস, মোহাম্মদ একরাম সিদ্দিক উজ্জ্বল, মোহাম্মদ শামসুল করিম টিটুকে।

মাহবুব শুভ ও আব্দুল হাফিজ শিপলু,আবু আরেফ,নজরুল ইসলাম ও মঞ্জুর চৌধুরী এর ব্যবস্থাপনায় মধ্যান্ন ভোজনের সময় ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রত্যেকটি টেবিলে টেবিলে গিয়ে মাহমুদ হাছানের নবীন প্রবীণের পরিচয়পর্বটি ছিল প্রশংসনীয়। 

ইমরান চৌধুরী, আব্দুল ফাত্তাহ চৌধুরী রানা ও আব্দুল্লাহ ফাতেনীর তত্ত্বাবধানে র‍্যাফল পরিচালনা ছিল অভুতপূর্ণ। তবে অনুষ্ঠানের শেষপর্বে র‍্যাফেল ড্র পরিচালনা করেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক সায়েক আহমেদ সওদাগর।

মোহাম্মদ আখলাকুর রহমান ও মেকদাদ খানের তত্ত্বাবধানে মিলন মেলায় আগত সকল প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে উপহার হিসেবে মিলন মেলার লগো সম্বলিত, ব্যাজ, মগ, চাবি রিং, ব্যাগ ও কলম দেওয়া হয়।

সঞ্জিত দাশের সহযোগীতায় ও আশরাফুল ওয়াহিদ দুলালের পরিচালনায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে বড় পর্দার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভিডিও স্থির চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় কবি জিয়াউর রহমান সাকলায়েনের কন্ঠে পৃথিবীর সব বাবাদের উদ্দ্যেশ্যে বাবা কবিতাটি প্রদর্শন এর সময় ছল ছল চোখে সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা অতীতে। প্রদর্শিত হয় স্কুলের বিভিন্ন চিত্র।

রাত ৮টায় ব্রিটেন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ-এর মৃত্যুতে তার প্রতি শোক জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

মো. সাকিব আলম চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ জাহিদ, আবিদুর রহমান, আব্দুল্লাহ নাইম, মাহফুজুর রহমান তায়েফ, আযহার উদ্দিন, শামাম আহমেদ, অপু তালকদার, মাহমুদুল হাছান চৌধুরী, শহনেওয়াজ সুবান রাজা, রেজোয়ান, আদনান, মোহাম্মেল প্রমুখ যখন সেচ্ছাসেবক তখন নেই কোন নেতৃত্বের বাহাদুরি, নেই কোন উশৃংখলতা। নবীন প্রবীণদের এই মিলনে উপস্থিত বয়সের ভারে ন্যূয়ে পরা প্রবীণরা যেন তালে তাল মিলিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা শৈশবে। তাই তারা আয়োজক উত্তরসূরীদের প্রশংশা করতে কুন্ঠাবোধ করেননি।

দিন শেষে রাত যখন নামে তখন বিদায়ের আগে যান্ত্রিক জীবনের একটি দিন পুরানো সহপাঠীদের সাথে কাটিয়ে বিদায়বেলা বিষাদ মনে অশ্রুসিক্ত নয়নে যেন আহবান করছিলে এই দেখা শেষ দেখা না হয়, আবার হবে দেখা বন্ধু।

এএফ/০৪